ইজতেমায় দ্বিতীয় পর্বেও লাখো মুসল্লি

Slider জাতীয়

50048_thumbS_b1

 

ঢাকা;  গতকাল বাদ ফজর ভারতের মাওলানা শামিম-এর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়। আগামীকাল আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুপর্বের বিশ্ব ইজতেমা। লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। জুমার জামাতে শরিক হতে ভোর থেকেই আশপাশের জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মুসল্লি ট্রেন, বাস, ট্রাকে করে ইজতেমা ময়দানের দিকে আসতে শুরু করে। টঙ্গী, গাজীপুর ও আশপাশের জেলার মুসল্লিরা পায়ে হেঁটেই কয়েক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বৃহত্তম এ জুমার জামাতে শরিক হন। দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে জুমার নামাজ শুরু হয়। জুমার নামাজের ইমামতি করেন দিল্লি মারকাজের আমীর মাওলানা সা’দ। ইজতেমার এ পর্বেও বেলা ১২টায় জুমার জামাত মূল ময়দান ছাড়িয়ে পূর্ব পাশে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েন। জুমার জামাত শেষে ইজতেমা ময়দানের চারদিকে বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো মুসল্লিরা নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হয়। জামাতকে কেন্দ্র করে ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। আশপাশের সড়ক ও মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যায়। স্থান সংকুলান না হওয়ায় ধর্মপ্রাণ মানুষ রাস্তায়, পরিবহন ও ভবনের ছাদেও জামাতে শরিক হন। তুরাগ নদীতে স্থাপিত ভাসমান সেতু ও বিভিন্ন নৌযানে নামাজের কাতারের মাধ্যমে ইমামের সঙ্গে মূল ময়দানের সংযোগ স্থাপন করা হয়। দেশ-বিদেশের মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তায় নৌ-পথ আকাশ পথে র‌্যাবের হেলিকপ্টার টহলসহ, ৫ স্তরের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে দেশ-বিদেশ থেকে মুসল্লিদের টঙ্গীমুখি স্রোত অব্যাহত রয়েছে। বহুল কাঙ্ক্ষিত আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত এ স্রোত আরো প্রবল হবে। তুরাগ তীরবর্তী বিশাল প্রান্তরে নির্মিত পাটের চট ও লাইলন কাপড়ের প্যান্ডেল ইতিমধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। শীতের তীব্রতা কম থাকায় মুসল্লিদের ভোগান্তি কিছুটা কম হলেও ধুলায় ধূসরিত গোটা ইজতেমা এলাকায় চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ওয়াসা এবং ফায়ার সার্ভিসের উদ্যোগে প্রধান প্রধান সড়ক ও বিদেশি মুসল্লিদের চলাচলের পথে পানি ছিটানো হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। একদিকে পানি ছিটিয়ে যাচ্ছে ওয়াসার গাড়ি অন্যদিকে মুহূর্তেই আবার ধুলায় ধূসর হচ্ছে রাস্তা। ফলে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করছে সর্দি, কাশি ও পেটের পীড়া নিয়ে শত শত মুসল্লি।
ইজতেমা ময়দান থেকে ১৬৮ রোহিঙ্গা আটক: ইজতেমা ময়দান এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমারের নাগরিক ১৬৮ রোহিঙ্গাকে আটক করে র‌্যাব। আটককৃতদের আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের মিডিয়া উইং কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকা থেকে ১৬৮ জন মিয়ানমারের নাগরিককে আটক করে র‌্যাব। এ সময় ১৩ জন পালিয়ে যায়। পরে মিয়ানমারের কয়েং চিবং এলাকার বদিউজ্জামানের ছেলে আজগর আলী, মণ্ডলশীল হালী এলাকার আমির হোসেনের ছেলে আলী আহাম্মেদ, কোনাপাড়া এলাকার মেহের আলীর ছেলে ইলিয়াস আলী, কারু ক্রাং এলাকার আব্দুস শুকুরের ছেলে সাব্বির আহাম্মেদ, দুদাইং এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে সেলিম ও জাম্বুনিয়া এলাকার নরুল আলমের ছেলে সেলিমসহ আটককৃত অন্যদের রাতেই গাজীপুর জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গাজীপুর পুলিশ সুপার হারুন-অর-রশিদ জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা জানায়, তারা মিয়ানমার থেকে কাগজপত্র ছাড়া অবৈধভাবে প্রায় মাস খানেক আগে বাংলাদেশে প্রবেশ করে কক্সবাজারে পৌঁছে। বাংলাদেশ হয়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর পরিকল্পনা করছিল তারা। কয়েকদিন আগে মাথা পিছু এক হাজার টাকা দিয়ে স্থানীয় দালালের মাধ্যমে সাধারণ মুসল্লিদের সঙ্গে মিশে তারা কক্সবাজার থেকে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে আসে।
বয়ান: গতকাল শুক্রবার জুমার পর বয়ান করেন কাকরাইলের মাওলানা রবিউল হক। বাদ আসর পাকিস্তানের মাওলানা এহসানুল হক। বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা সা’দ।
বয়ানে বলা হয় গরিবের জন্য ঈদের নামাজের পর অতি উত্তম ইবাদত হলো শুক্রবারের জুমার নামাজ। জুমার নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে ওজু-গোসল করে নতুন জামা কাপড় পরে এবং গায়ে খুশবু লাগিয়ে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর থেকে তার আমলনামায় নেকী লেখা শুরু হয়ে যায়। বয়ানে আরো বলা হয়, জুমার জামাতে শরিক হতে রওয়ানা দেয়ার পর প্রতি কদমে কদমে নেকী লেখা হয়।
বাদ আসর পাকিস্তানের মাওলানা এহসানুল হক বয়ানে বলেন, দুনিয়ার জিন্দেগীকে আল্লাহতায়ালা শানহু খেলাধুলার জিন্দেগি বলেছেন। দুনিয়ার জিন্দেগি হলো খেলাধুলা জিন্দেগি, যার কোনো হাকিকত নাই, বাস্তবতা নাই। উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ছোট বাচ্চারা খেলাধুলার জন্য ঘরের সামনের ধুলাবালি দিয়ে ঘর বানায়। তার মধ্য থেকে পাকানোর জন্য চুলা বানায়। আবার কেউ মিছে মিছে বাবা হয়, মা হয়। এতক্ষণ পর্যন্ত বাচ্চারা খেলাধুলা করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের পেটে ক্ষুধা লাগে। তাদের পেটে যখন ক্ষুধা লাগে তখন তারা সবকিছু ফেলে দিয়ে মায়ের কাছে চলে যায়। তিনি বলেন, দুনিয়ার সব কিছুই অস্থায়ী। দুনিয়ায় যা কিছু আছে একদিন সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে। দুনিয়ার ক্ষুধা আসল ক্ষুধা নয়, দুনিয়ার পিপাসা আসল পিপাসা নয়, দুনিয়ার ইজ্জত আসল ইজ্জত নয়, দুনিয়ার জিলত আসল জিলত নয়। আসল ক্ষুধা হলো আখেরাতের ক্ষুধা, আসল পিপাসা হলো আখেরাতের পিপাসা। তিনি আরো বলেন, মানুষের আসল জিন্দেগি হলো আখেরাতের জিন্দেগি। তিনি আরো বলেন, দুনিয়ার জিন্দেগি দিয়ে আখেরাতের জিন্দেগিকে হাসিল করতে হবে। প্রত্যেক মানুষকে মেহনত করে আমলে সালেহা অর্জন করতে হবে। দাওয়াতি কাজে মেহনতের মাধ্যমে যারা ইমান ও আমলকে হাসিল করে, আল্লাহতায়ালা তাদের আখেরাতের জিন্দেগি ও দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জিন্দেগিকে সহজ করে দিবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *