বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে; এমপি সেলিম ওসমানের নির্দেশেই শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে লাঞ্ছনা

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

 

49815_haigh
ঢাকা; স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের নির্দেশেই নারায়ণগঞ্জ বন্দরের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনা ও কান ধরে উঠবস করানোর ঘটনার সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে এমপি সেলিম ওসমান এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে তদন্তে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, শিক্ষক শ্যামল কান্তির বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলেও তদন্তে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন গতকাল হাইকোর্টে জমা দেয়া হয়। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) শেখ হাফিজুর রহমান  ৬৫ পৃষ্ঠার এই তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করেন।  প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিডিও ফুটেজটি পর্যালোচনা করে এটাই প্রতীয়মান হয় শিক্ষক কোনো অবস্থায় স্বেচ্ছায় কান ধরে উঠবস করেননি। এমপি সেলিম ওসমানের নির্দেশেই তিনি তা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। ফলে, এমপি সেলিম ওসমান  এ ঘটনার দায় কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না। প্রতিবেদনে বলা হয়, স্কুলছাত্র রিফাত হাসানকে শিক্ষক শ্যামল কান্তি মারধর করেছেন। অন্যদিকে স্কুল কমিটির সভা চলাকালে জনৈক শামসুল হকের পুত্র অপুর নেতৃত্বে ১০/১২ জন লোক সভাকক্ষে প্রবেশ করে শ্যামল কান্তিকে মারধরের সত্যতা পাওয়া গেছে। শিক্ষক শ্যামল কান্তি ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন এমন দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। এছাড়া, শ্যামল কান্তির গাল ও কান ধরে এমপি কর্তৃক চারটি থাপ্পড় মারার দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে তদন্তে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় শিক্ষক শ্যামল কান্তি দুই হাতে দুই কান ধরে দাঁড়িয়ে আছেন এবং তার একটু সামনে ডানদিকে এমপি সেলিম ওসমান আঙ্গুলের ইশারা করে দাঁড়িয়ে আছেন। শিক্ষক কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকলেও উঠবস করতে চাচ্ছিলেন না। এমপি ডান হাত উঠানামা করে তাকে বসার নির্দেশ প্রদান করেছেন। শিক্ষক ছয় সেকেন্ড কান ধরে দাঁড়িয়েছিলেন। এমপি পরপর দুইবার হাত উঁচিয়ে তাকে বসার নির্দেশ দেন। পাঁচবার উঠবস করার পর শিক্ষক মাটিতে পড়ে যান। কয়েকজন লোক তাকে ধরে উঠানোর পর এমপি হাত জোড় করে শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে ক্ষমা চাইতে বলেন। শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার ঘটনায় পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন নাকচ করে দিয়ে গত ১০ই আগস্ট ওই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের ডিভিশন বেঞ্চ। হাইকোর্টের এ নির্দেশের পরই ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) তদন্তের জন্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. গোলাম নবী ও মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলামকে সহযোগী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করেন। পরবর্তীতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন এবং সরজমিন ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২৭ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করে তদন্ত কমিটি। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু গতকাল বলেন, ওই ঘটনার অডিও রেকর্ড, ভিডিও ক্লিপিং, পেপার কাটিং ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যালোচনা করে ৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হলফনামা আকারে আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। রোববার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এর শুনানি হবে। নারায়ণগঞ্জ বন্দরের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান  শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ইসলাম ধর্মের অবমাননা করেছেন-এমন অভিযোগে গত বছরের ১৩ই মে সকালে ওই স্কুল প্রাঙ্গণে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে তাকে উঠবস করানো হয়। একই সঙ্গে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের উপস্থিতিতে সংঘটিত এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিদ্যালয় কমিটি শ্যামল কান্তিকে সাময়িক বরখাস্ত করলেও পরে তাকে স্বপদে ফিরিয়ে নেয়া হয়। এই ঘটনায় সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গত বছরের ১৮ই মে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) হয়ে রুল জারিসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। রুলে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়। পরে আদালতের নির্দেশে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ প্রশাসন এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন আদালতে জমা দিলেও ওই প্রতিবেদন প্রত?্যাখ?্যান করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *