গণতান্ত্রিক সরকারের নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে না পারা রাজনীতিবিদদের জন্য দেউলিয়াপনা

Slider বাংলার আদালত

67215acb2c7d1a3ef5c6238a2a750a26-1

ঢাকা; প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, একটি গণতান্ত্রিক সরকার পাঁচ বছর দেশ শাসন করতে পারবে কিন্তু স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কোনো নির্বাচন দিতে পারবে না। এটা রাজনীতিবিদদের জন্য দেউলিয়াপনা।
শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন-২০১৬’ উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি আসার পর বিচারপতিদের নিয়ে রাজনীতি আরম্ভ হয়ে যায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতিরা দায়িত্ব পালনের কারণে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ত্রয়োদশ সংশোধনীর ফলে অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনকে একটি মহলের খেয়ালখুশিমতো পরিচালনার ব্যবস্থা হয়েছিল। ত্রয়োদশ সংশোধনী আইন রাষ্ট্রের মূলভিত্তি জনগণের সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রের প্রজাতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পরিচয় খর্ব করায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত তা অসাংবিধানিক ও অবৈধ বলে ঘোষণা করেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, পুরাতন হাইকোর্ট ভবন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করা হলেও এর কোনো অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের কোনো অঙ্গ-বিভাগ বা সংস্থার সমালোচনা করছেন না তিনি। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রতিটি সংস্থা অন্য সংস্থার ওপর আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। শুধু সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলোই নয়, রাষ্ট্রের বিভাগগুলোও এ প্রতিযোগিতার বাইরে নেই। শুধু বিচার বিভাগই এর ব্যতিক্রম। বিচার বিভাগ এ প্রতিযোগিতায় কখনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি এবং করবেও না।
বিচারক-স্বল্পতা প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে আপিল বিভাগে নয়জন বিচারক, তাঁদের মধ্যে একজন অসুস্থ। হাইকোর্ট বিভাগের ৮৯ জন বিচারকের মধ্যে ৩ জন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়িত্ব পালন করছেন। অন্য ৭ জন অবসর নিচ্ছেন। ফলে বেঞ্চ গঠনে প্রধান বিচারপতিকে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিদিন।
বিশেষ আদালতগুলোতে স্থান সংকুলানের তীব্র অভাবের কথা তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, প্রায়ই সরকার নতুন আইন করে বিভিন্ন ধরনের ট্রাইব্যুনাল গঠন করছে। এসব ট্রাইব্যুনালের জন্য পৃথক আদালত ভবন, পরিকাঠামো নির্মাণ, রেকর্ড রুম ও বসার জায়গা অপরিহার্য হলেও সরকার এ বিষয়ে সব সময় উদাসীন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী বলেন, পুলিশের কথায় হুট করে রিমান্ড দেবেন না। বিচারকদের সাহস থাকতে হবে, সাহসী হলেই বিচারব্যবস্থায় আসবেন। যাঁদের সাহস নেই, তাঁরা ছেড়ে চলে যান।

সভাপতির বক্তব্যে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, রিমান্ডের ব্যাপারে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়টি অনুসরণ করলে অনেকখানি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ফৌজদারি মামলা আমলে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিচারকদের মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার হোসনে আরা আকতারের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, মনোনীত জেলা জজ হিসেবে প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালের সদস্য গোলাম মর্তুজা মজুমদার, এটুআই প্রকল্পের পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে বিচার বিভাগীয় তথ্য বাতায়নের উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *