খুনের পরও মুঠোফোনে মুক্তিপণ দাবি

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

9ec1e2ebc3d24bd90fa71096a80c0e18-kapil-barai

ঢাকা; নিখোঁজের ৪৮ ঘণ্টা পর গত সোমবার রাতে লাশ পাওয়া যায় কপিল বাড়ৈয়ের (২০)। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার বিকেলেও কপিলের মুঠোফোন থেকে এসেছে মুক্তিপণ চেয়ে খুদে বার্তা।
এতে কপিলের মুক্তির জন্য ৩৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, যে চক্র কপিলকে হত্যা করেছে, তারাই এ কাজ করছে।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল একাডেমির ছাত্র ছিলেন কপিল। থাকতেন রাজধানীর ভাটারা কালীমন্দিরের পূর্ব পাশের এক বাড়িতে বড় ভাই প্রণব বাড়ৈয়ের সঙ্গে। প্রণবের স্ত্রী অসুস্থ হওয়ায় মাস খানেক থেকে তিনি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার গ্রামের বাড়িতে থাকেন।
প্রণব বাড়ৈ বলেন, গত শনিবার রাত আটটার দিকে কপিলের সঙ্গে মুঠোফোনে শেষবারের মতো কথা হয়। তখন কপিল জানান, তিনি বাসার কাছাকাছি আছেন। এক মিনিটের মধ্যেই বাসায় ঢুকবেন। এরপর থেকে কপিলের মুঠোফোন বন্ধ। ঢাকার আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে যোগাযোগ করেও কপিলের সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে রোববার সকালে প্রণব তাঁর বাবাকে সঙ্গে নিয়ে গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসেন কপিলকে খুঁজতে। ওই রাতেই তাঁরা ভাটারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
প্রণব বলেন, সোমবার দুপুর পৌনে একটার দিকে কপিলের মুঠোফোন থেকে ৪০ হাজার টাকা মুক্তিপণ চেয়ে একটি খুদে বার্তা আসে তাঁর বাবার মুঠোফোনে। কিন্তু ফোন করে কপিলের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিপণের টাকার পরিমাণ বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত তা ৩৫ লাখ টাকায় ঠেকে। মুক্তিপণের টাকা নিয়ে দেনদরবার চলার সময়েই সোমবার রাত সোয়া ১১টার দিকে বারিধারার ‘জে’ ব্লকের ৩ নম্বর রোডের একটি নির্মাণাধীন ভবনের রিজার্ভ ট্যাংকে কপিলের লাশ পাওয়া যায়।
ভাটারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিয়াউর রহমান বলেন, নির্মাণাধীন ওই ভবনের পানি থেকে কটু গন্ধ বের হলে ভবনের শ্রমিকেরা পুলিশে খবর দেন। পরে পানির ট্যাংক থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। গতকাল বিকেলে লাশের পরিচয় নিশ্চিত করেন কপিলের পরিবারের সদস্যরা।
এসআই জিয়াউর বলেন, কপিলের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। লাশ গুম করতে তাঁর পরনের বেল্টের সঙ্গে একটি বালুর বস্তা বেঁধে পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। ময়নাতদন্তের জন্য গতকাল বেলা ১১টার দিকে লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, দু-তিন দিন আগে হত্যার পর লাশ সেখানে ফেলে রাখা হয়।
তবে গতকাল বিকেল পর্যন্ত ছেলের মৃত্যুর খবর জানতেন না কপিলের বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা ভরত চন্দ্র বাড়ৈ। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তিনিও এসেছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে জানান, লাশ অন্য কারও; কপিলের সঙ্গে লাশের মিল নেই। এরপর তিনি বাড়ি যেতে রাজি হন।
ভরত চন্দ্রের দুই সন্তানের মধ্যে কপিল ছোট। ভরত চন্দ্রের বিশ্বাস, কেউ তাঁর ছেলেকে অপহরণ করেছে; নিশ্চয়ই ছেলে ফিরবে।
পুলিশ মুঠোফোনটি দেখে বলেছে, গতকাল বেলা তিনটার পর কপিলের মুঠোফোন থেকে পাঁচটি খুদে বার্তা এসেছে। শেষ বার্তায় বলা হয়েছে, ‘এই নাম্বারে টাকা বিকাশ করবি না। কী করবি পরে তোকে জানাইতাছি।’
বিকেল চারটার দিকে হাসপাতাল থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা করেন ভরত চন্দ্রসহ কয়েকজন। ভরতকে স্বাভাবিক রাখতে এতক্ষণ যাঁরা কষ্ট চেপে রেখেছিলেন, এবার তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। মর্গের সামনে কপিলের চাচাতো বোন পারুল কাঁদতে থাকেন। পাশে দাঁড়ানো প্রণবের চোখও তখন ছলছল করছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *