আগেই তাঁদের তুলে নেওয়া হয়, পরস্পরকে চেনেনও না তাঁরা

Slider টপ নিউজ ফুলজান বিবির বাংলা

8a304510cef014b6b6c9e787acba67dc-online_chittagong_crime_sowrav_12_12_16-6

ঢাকা; চট্টগ্রামে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) অভিযানে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামিয়া বাংলাদেশের (হুজি-বি) সন্দেহভাজন সদস্য হিসেবে গ্রেপ্তার পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম নাজমুল হোসেন চৌধুরী শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। আদালতে আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। তবে শুনানির সময় তাঁরা আদালতের কাছে দাবি করেন, তাঁদের সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে এক বছর থেকে ছয় মাস আগে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

র‍্যাব বলছে, গত বৃহস্পতিবার ভোরে চট্টগ্রাম নগরের এ কে খান মোড় ও উত্তর কাট্টলী এলাকার একটি বাড়িতে পৃথক অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, বোমা, বিস্ফোরকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন ফরিদপুরের মাওলানা মো. তাজুল ইসলাম (২৭), যশোরের মো. নাজিমউদ্দিন (৩৮), ঝিনাইদহের আবুজার গিফারী (২২), নীলফামারীর নুরে আলম ইসলাম (২২) ও রংপুরের শেখ ইফতিশাম আহমেদ (২৩)। তাঁরা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) সদস্য। এ ঘটনায় র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের উপসহকারী পরিচালক গোলাম রাব্বানী বাদী হয়ে অস্ত্র, বিস্ফোরক ও সন্ত্রাস দমন আইনে গ্রেপ্তার পাঁচজনের বিরুদ্ধে নগরের আকবর শাহ থানায় পৃথক তিনটি মামলা করেন। তিন মামলায় পাঁচ আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গতকাল রোববার আকবর শাহ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম সাত দিন করে ২১ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। আদালত আজ আসামিদের উপস্থিতিতে শুনানির দিন ধার্য করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে থাকা চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ আদালতকে বলেন, গল্প কীভাবে তৈরি করতে হয়, তা গ্রেপ্তার আসামিদের জানা আছে। তাঁরা হুজির সদস্য। রিমান্ডে তাঁদের কাছ থেকে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। এঁদের রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।

পরে আদালত আদেশে উল্লেখ করেন, তিন মামলায় প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হলো। একই সঙ্গে সতর্কতার সঙ্গে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হলো।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শেখ ইফতিশাম আহমেদ আজ আদালতকে বলেন, গত ২৯ এপ্রিল রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে রাজশাহী নগরের মোন্নাফের মোড় এলাকার একটি ছাত্রাবাস থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্ধকার একটি কক্ষে (হাজতখানার মতো) তাঁকে আটকে রাখা হয়। হাতে হাতকড়া ও চোখ সব সময় বাঁধা থাকত। গত ২৯ নভেম্বর মাইক্রোবাসে করে তাঁকে চট্টগ্রামে র‍্যাব-৭ কার্যালয়ে আনা হয়। সেখান থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার ভোরে উত্তর কাট্টলীর একটি বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। র‍্যাব সদস্যরাই ওই বাসার ভেতর আগুন ধরিয়ে দেন। পরে চোখ খুললে তিনি ঘরের ভেতর অস্ত্র দেখতে পান। মিডিয়ার সামনে হাজির করার পর মাইক্রোবাসে তুলে র‍্যাব কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ওই দিন রাত তিনটার দিকে আকবর শাহ থানায় হস্তান্তর করা হয়। থানায় প্রথম এই পাঁচজনের সঙ্গে দেখা হয়। এর আগে কেউ কাউকে চিনতেন না।

গ্রেপ্তার নাজিমউদ্দিনও একই ধরনের তথ্য জানিয়ে দাবি করেন, ২৫ মে ঢাকার মিরপুর থেকে একটি মোটরসাইকেলসহ সাদাপোশাকধারী কিছু লোক তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। নূরে আলম বলেন, ১১ এপ্রিল নীলফামারী শহরের উকিলের মোড় এলাকার বাড়ি থেকে প্রশাসনের লোক পরিচয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। তাজুল ইসলাম বলেন, ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে মানিকগঞ্জের একটি মাদ্রাসা থেকে সাদাপোশাকধারী কিছু লোক তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। আবুজার গিফারী বলেন, ২৮ জুলাই কুষ্টিয়া থেকে তাঁকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে তুলে আনা হয়।

নিজেদের বক্তব্য দেওয়ার পর পাঁচ আসামি আদালতের কাছে ন্যায়বিচার দাবি করেন। এ সময় এজলাসে প্রায় ৩০ জন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

আদালতে দেওয়া পাঁচ আসামির বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) সোহেল মাহমুদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে র‍্যাব-৭–এর অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

র‍্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *