প্রত্যেক অভিবাসীর বলার মতো অসাধারণ গল্প আছে’

Slider জাতীয়

f1f8548bd94c3d2dca72c63ff4bea6fd-pm

বাসস ;প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিবাসীদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করে মর্যাদা নিশ্চিত করতে একযোগে কাজ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক অভিবাসীর বলার মতো অসাধারণ গল্প আছে। অথচ অনেক সময় মানুষ হিসেবে তাঁদের প্রতি অবজ্ঞা দেখানো হয়।প্রধানমন্ত্রী আজ শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘নবম গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিএফএমডি)’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু ২০১৭ সালে জিএফএমডি বৈশ্বিক পর্যালোচনায় প্রবেশ করছে, আমাদের অবশ্যই অভিবাসীদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে এবং কাজ করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের আরও নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে প্রত্যেক অভিবাসী যেন মর্যাদা পায় এবং নিরাপদে চলাফেরা ও কাজ করতে পারেন।’ তিনি বলেন, অভিবাসন আর কোনোভাবেই ‘আমাদের’ এবং ‘তাদের’ মধ্যকার বিষয় নয়। এটা সব মানুষের এবং সব রাষ্ট্রের সমৃদ্ধি ও কল্যাণ সম্পর্কিত বিষয়। গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে আমরা এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ শুধু কাজের জন্য নয়, বহুবিধ কারণে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বিচরণ করে। বিশ্বায়নের এ যুগে বিপুলসংখ্যক মানুষের বিচরণ অব্যাহত থাকবে। সুতরাং, আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, আমরা কীভাবে মানুষের চলাফেরা আরও নিরাপদ, নিয়মিত ও সুশৃঙ্খল করতে পারি। পাশাপাশি নিশ্চিত করা প্রয়োজন যে একজন ব্যক্তি যেন তাঁর ইচ্ছানুযায়ী চলাফেরা করতে পারেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন অভিবাসী শুধু একজন শ্রমিক নন। প্রত্যেক অভিবাসীর বলার মতো অসাধারণ গল্প আছে। একজন অভিবাসী যখন তাঁর পরিবার এবং দেশ ত্যাগ করেন, তখন তাঁকে অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হয়। অভিবাসীরা তাদের উদ্ভাবনী শক্তি, শ্রম ও সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাগতিক দেশের সমাজের উন্নয়নে অবদান রেখে থাকেন। তারা তাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় অন্যের জন্য ব্যয় করেন। আমরা অনেক সময় তাঁদের মানবিক বিষয়গুলো এবং মানুষ হিসেবে ন্যূনতম অধিকারগুলোর প্রতি অবজ্ঞা দেখাই।’

অভিবাসনকে একটি জটিল মানবিক ব্যাপার আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অভিবাসন এবং অভিবাসীকে ভয় পাওয়ার বা তাঁদের এড়ানোর কোনো কারণ নেই। বরং অভিবাসন সুশাসনে উপযুক্ত পরিকাঠামো প্রণয়নের মাধ্যমে অভিবাসনের রূপান্তরমূলক সম্ভাবনাকে কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা আমাদের ভেবে দেখা প্রয়োজন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু জিএফএমডি শীর্ষ সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছে, একটি নতুন চুক্তি প্রণয়নে আমি আপনাদের উচ্চাভিলাষী, বাস্তববাদী এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে আহ্বান জানাতে চাই। এজেন্ডা ২০৩০-এ অভিবাসী ও উদ্বাস্তু বিষয়ে যে অঙ্গীকার আমরা করেছি তা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের একটি অনুমানযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে হবে।’ এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘সময় এসেছে, এখন জিএফএমডিকে অকপটে এবং নির্ভয়ে কথা বলতে হবে। আমি আনন্দিত যে জিএফএমডি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে (যেমন: সংকট ও সংঘাতময় পরিস্থিতিতে অভিবাসী, অভিবাসনের সুশাসন, বৈচিত্র্য ও সম্প্রীতি ইত্যাদি) দৃষ্টিপাত করবে।’

প্রধানমন্ত্রী জিএফএমডির সভাপতি পদে বাংলাদেশকে সমর্থনদানের জন্য সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। ঢাকায় আগত বিদেশি অতিথিদের ভ্রমণ আনন্দদায়ক হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলামও উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তৃতা করেন। এ ছাড়া জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্স সম্পর্কিত আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল উ হংবো, ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) মহাপরিচালক উইলিয়াম লেসি সুইং, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) মহাপরিচালক গাই রাইডারসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

১২৫টি দেশের প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের ৩০টিরও বেশি সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, গ্লোবাল সিভিল সোসাইটি এবং ব্যবসায়ী সংস্থার প্রতিনিধিরা তিন দিনব্যাপী জিএফএমডি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন। অভিবাসন ও বৈশ্বিক শরণার্থী পরিস্থিতিতে করণীয় নানা বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে এবারের এই সম্মেলনে। অভিবাসন ও উন্নয়ন নিয়ে জাতিসংঘের উদ্যোগে এক দশক আগে জিএফএমডি সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত বছর তুরস্কের কাছ থেকে বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান পদ লাভ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *