ঢাকায় ছয় তরুণ নিখোঁজ

Slider ফুলজান বিবির বাংলা বাংলার মুখোমুখি

22882_missing

ঢাকা;  একযোগে চার তরুণের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ ছড়ানোর পর গতকাল মঙ্গলবার আরও দুই তরুণের নিখোঁজ হওয়ার খবর জানা গেছে। এই দুই তরুণের একজন ২৯ নভেম্বর ও আরেকজন ৫ ডিসেম্বর নিখোঁজ হয়েছেন বলে তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে বনানী ও ক্যান্টনমেন্ট থানায় পৃথক দুটি জিডি করা হয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে এক সঙ্গে চার তরুণ নিখোঁজ হন। তাঁদের কোনো খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই তরুণদের খুঁজে বের করতে না পারলে মারাত্মক নিরাপত্তাঝুঁকিতে পড়বে দেশ। এর আগে হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়া ঈদগাহে হামলাকারী তরুণেরাও এভাবে নিখোঁজ হয়েছিলেন। পরে তাঁরা আত্মঘাতী
জঙ্গি হয়ে ফিরে এসেছেন। নির্বিচারে মানুষের প্রাণ নিয়েছেন।

সর্বশেষ যাঁদের নিখোঁজ হওয়ার তথ্য মিলেছে, তাঁরা হলেন ইমরান ফরহাদ (২০) ও সাঈদ আনোয়ার খান (১৮)। তাঁদের মধ্যে ইমরান মোহাম্মদপুরের কেয়ার মেডিকেল কলেজের ছাত্র। বনানীর বাসিন্দা সাঈদ ও-লেভেল পাস করেছেন।

নিখোঁজ ইমরান ফরহাদের আত্মীয় মো. আল-মামুন বলেন, প্রতিদিনের মতো গত ২৯ নভেম্বর সকালে মেডিকেল কলেজে যাওয়ার জন্য ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন মাটিকাটার বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন ইমরান। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ। ইমরানের বাবা আসাদুজ্জামান। নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে মা সাবিনা ইয়াসমিন ২ ডিসেম্বর ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

জিডির তদন্ত কর্মকর্তা ক্যান্টনমেন্ট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল গফুর বলেন, ‘ছেলেটি মাটিকাটার বাসা থেকে ব্যাগ ও মুঠোফোন নিয়ে বের হয়েছিল। এরপর আর ফেরেনি। তার মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।’

পুলিশ জানায়, তারা ওই এলাকায় ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছে, ধর্মীয় বিষয়ে পরিবারটি খুব গোঁড়া। ধর্মের নিয়মকানুন খুব শক্তভাবে পালন করেন তাঁরা।

এদিকে বনানী থেকে গত সোমবার দুপুরে সাঈদ আনোয়ার খান নামের আরেক তরুণ নিখোঁজের ব্যাপারে থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। জিডি করেন সাঈদের বাবা ব্যবসায়ী আনোয়ার সাদাত খান। জিডিতে উল্লেখ করা হয়, প্রায় ছয় ফুট উচ্চতার সাঈদ পরিবারের সঙ্গে বনানীর বি ব্লকের বাসায় থাকতেন। গত সোমবার দুপুরে বাসা থেকে বেরিয়ে তিনি আর ফেরেননি।

সাঈদের স্বজনেরা পুলিশকে জানিয়েছেন, সাঈদ ও-লেভেল পাস করেছেন। গত সোমবার সকালে তিনি কলাবাগানে এসেছিলেন একটি কারাতে টুর্নামেন্টে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে। সকাল ১০টায় ফোনে অভিভাবকদের জানান, তিনি বাসায় ফিরছেন। দুপুর ১২টার দিকে মুঠোফোন বন্ধ পেয়ে চিন্তিত অভিভাবকেরা প্রথমে হাসপাতালে খোঁজ নেন। এরপর সম্ভাব্য বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে না পেয়ে গতকাল তাঁরা বনানী থানায় জিডি করেন। তবে পরিবারটি কোনোভাবেই মনে করেন না যে তাঁদের ছেলে জঙ্গিবাদে যুক্ত হতে পারেন। তাঁরা অন্য কিছু ভাবছেন।

তরুণদের নিখোঁজ হওয়ার প্রবণতা সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিখোঁজ তরুণদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তাঁরা কী করেন, কাদের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ, অতীতে কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কি না, ইত্যাদি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

জঙ্গি দলে নতুন সদস্য নিয়োগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাধারণত দুভাবে নিয়োগ হয়। সরাসরি দীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে। আবার অনলাইনেও কেউ নিজে নিজে জঙ্গিবাদের দীক্ষা নিতে পারেন। তরুণদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সম্ভাবনা বেশি। তবে আমরা বলছি না যে সম্প্রতি নিখোঁজ হওয়া তরুণেরা জঙ্গি সংগঠনেই যোগ দিতে গেছেন। আমরা এখনো নিশ্চিত নই।’

এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত কয়েক দফায় ঢাকার বেশ কয়েকজন তরুণ নিখোঁজ হয়েছিলেন। এই তরুণদের কয়েকজন পরে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোঁরায় ও শোলাকিয়ায় ঈদগাহে হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে দেখা যায়। কয়েকজন পরে পুলিশ-র‍্যাবের অভিযানে নিহত হন। গত আগস্টে ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছিল, ৪০ থেকে ৫০ তরুণ নিখোঁজ রয়েছেন। একই সময়ে র‍্যাব প্রথমে ২৬২ জন নিখোঁজের তালিকা প্রকাশ করলেও পরে তা ৬৮-তে নেমে আসে।

এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন   বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলো যত দিন সক্রিয় থাকে, তত দিন নিয়োগ চলতে থাকে। নেতাদের মৃত্যু হতে পারে ধরে নিয়েই জঙ্গি সংগঠনের কর্মকৌশল প্রণয়ন করা হয়। তাই তাদের নেতৃত্ব কয়েক স্তরে ভাগ করা থাকে, যেন একজন মারা গেলে অন্যজন হাল ধরতে পারে। হামলা বা নাশকতা-পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার জন্যও তারা প্রস্তুত। তাই সাম্প্রতিক অভিযানে কয়েকজন মারা গেছে বলে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, এরা থেমে গেছে বা শেষ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এরা বেছে নিচ্ছে ত্রিশের কম বয়সী তরুণদের। ১৮ থেকে ২৬ বছর পর্যন্ত বলা হয় ‘মিলিটারি এজ গ্রুপ’। এই বয়সে প্রশিক্ষণের জন্য দেহ ও মন থাকে উপযুক্ত।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এই নিখোঁজ ছেলেরা দেশেই আছে না বাইরে চলে গেছে, কোথায় তারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, কারা তাদের নিয়ে যাচ্ছে এ বিষয়গুলো খুঁজে বের করতে না পারলে নিরাপত্তাঝুঁকি বাড়বেই। এরাই হয়তো হামলাকারী হয়ে ফিরে আসতে পারে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *