সংলাপের উদ্যোগ প্রেসিডেন্টের, সকলের দৃষ্টি বঙ্গভবনে

Slider জাতীয়

43626_f1

 

ঢাকা; নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সংলাপের উদ্যোগ নিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। মধ্য ডিসেম্বরের পর সংসদের বাইরের বিরোধী দল বিএনপিকে দিয়েই এই সংলাপের সূচনা হতে পারে। সংলাপে সংসদের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। ২০১২ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে ‘সার্চ কমিটির’ মাধ্যমে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিলেন। সংলাপের বিষয়টি প্রেসিডেন্টের তরফে বিএনপিকেও অবহিত করা হয়েছে। সংলাপের ফল নিয়ে সংশয় থাকলেও বিশিষ্টজনরা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্টের এ উদ্যোগ ইতিবাচক। তারা জানিয়েছেন সংলাপ থেকে গ্রহণযোগ্য পরামর্শ গ্রহণ করে প্রেসিডেন্ট কমিশন গঠনের উদ্যোগ নিলে বিতর্ক এড়ানো যাবে। এদিকে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া  যে প্রস্তাবনা পেশ করেছেন তার কপি প্রেসিডেন্টের দপ্তরে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। গতকাল বিএনপি’র একটি প্রতিনিধি দল দলীয় চেয়ারপারসনের প্রস্তাবনার কপি বঙ্গভবনে পৌঁছে দেন।  প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিব তা গ্রহণ করেন। এসময় প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে তিনি বিএনপির প্রতিনিধি দলকে জানিয়ে দেন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে প্রেসিডেন্ট সংলাপের উদ্যোগ নেবেন। ওই সংলাপে বিএনপিকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে। এদিকে প্রেসিডেন্টের সংলাপ উদ্যোগের বিষয়টি বঙ্গভবন সূত্র থেকেও নিশ্চিত করা হয়। প্রেসিডেন্ট সিঙ্গাপুর রওনা হওয়ার আগে তার প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদিন জানিয়েছেন বিজয় দিবসের পরপরই প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নেবেন। বঙ্গভবনের একটি সূত্র জানিয়েছে, ১৮ই ডিসেম্বর থেকে এই সংলাপ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। তবে এ তারিখটি এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নতুন কমিশন নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কিছু দিন ধরে আলোচনা চলছে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নতুন কমিশন গঠনের বিষয়ে প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে নতুন কমিশন গঠনের আগে সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী আইন প্রণয়নের। গত মাসে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি চেয়ারপারসন যে প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন তাতে তিনি সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, অথবা স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে- এমন সব রাজনৈতিক দলের মতৈকে?্যর ভিত্তিতে নতুন ইসি গঠন করার কথা বলেন। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের শরিকদের কেউ কেউ সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে এমন দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে সংলাপের কথা বলছেন। সংলাপ ও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে চলা বিতর্কের মধ্যে গত শনিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, বিএনপির প্রস্তাব এবং নির্বাচন কমিশন গঠনে সংলাপের বিষয়টি প্রেসিডেন্টই দেখবেন। এ বিষয়ে তিনিই উদ্যোগ নেবেন।
সার্চ কমিটি গঠনে রাজনৈতিক দলকে যুক্ত করার পরামর্শ: নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সংলাপের চেয়ে আইন প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সার্চ কমিটির মাধ্যমেই নতুন নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ হওয়া উচিত। এ জন্য আইন করা উচিত ছিল। যেহেতু বর্তমানে সার্চ কমিটি গঠনের আইন নেই, সেহেতু নতুন নির্বাচন কমিশন প্রেসিডেন্টের সুবিবেচনা ও সর্বসম্মতিক্রমে হওয়া উচিত। সার্চ কমিটিতে রাজনৈতিক দলকে যুক্ত করতে হবে। আর সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছতে পারে। যেন কোনো প্রকার আপত্তি ছাড়াই আগামী নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল অংশ নিতে পারে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ আনুষ্ঠানিক হবে, নাকি প্রিলিমিনারি হবে এগুলোর ব্যাখ্যা তো প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে এখনো দেয়া হয়নি। উনি তো আলোচনা গতবারের মতো করতে পারেন। সরাসরি নিজের থেকে সার্চ কমিটি বানাতে পারেন। অথবা তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সার্চ কমিটি বানাতে পারেন। প্রেসিডেন্ট সার্চ কমিটি বানিয়ে কথা বলবেন, নাকি সার্চ কমিটি না বানিয়ে তিনি কথা বলবেন, না কারও মতামত নিয়ে সার্চ কমিটি বানিয়ে কথা বলবেন। এটার ওপর নির্ভর করবে ব্যাখ্যাটা কি। সে ব্যাখ্যা পেলে বোঝা যাবে প্রেসিডেন্ট আসলে যে কথা বলবেন সেটার সঙ্গে নির্বাচন কমিশন গঠনে মিনিমাম সর্বসম্মতি আছে কিনা সেটা বোঝা যাবে। প্রেসিডেন্টের সংলাপ উদ্যোগকে ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট যে উদ্যোগ নিয়েছেন এটা খুবই ভালো। এটা ওনারই করা উচিত। কিন্তু এমনভাবে হোক যেন নির্বাচন কমিশন বিএনপি, আওয়ামী লীগ বা কোনো দলের সম্পত্তি না হয়। নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রীয় একটা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান যাতে বিতর্কিত না হয় সেরকমভাবে করা উচিত। আমাদের এখানে আইন করার কথা। এটা করা হয়নি। প্রেসিডেন্ট উদ্যোগ নিয়ে যদি সার্চ কমিটি তৈরি করেন তাহলে ভালো হবে। সার্চ কমিটি গঠনে যোগ্য লোকদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিতে জোর দিয়ে সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমার সুপারিশ হলো সার্চ কমিটিতে অনেকের নাম দেখি যাদের প্রয়োজন নাই। নির্বাচন কমিশন এতো উচ্চ পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান। সেখানে তাদের নিয়োগ দেয়ার জন্য অনেকগুলো সংস্থার দরকার নাই। এখানে দরকার একজন সিনিয়র বিচারপতি এবং দু’একজন সরকারি, বেসরকারি লোক। এটা প্রেসিডেন্টের বিষয়। সার্চ কমিটি যদিও আইনভুক্ত হবে না। আইন তৈরি হলে তখন সার্চ কমিটি আইনভুক্ত হবে। এখন প্রেসিডেন্ট সুবিবেচনা করে করতে পারেন। তবেই এটা গ্রহণযোগ্য হবে।
আইন না করে শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট সংলাপ করলে তা ফলপ্রসূ হবে না বলে মনে করছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, এমন একটা পদ্ধতি বের করতে হবে যেখানে সকল রাজনৈতিক দলের মতামত প্রতিফলিত হবে।  আইন তৈরি না করে শুধু সংলাপ করে কোনো লাভ হবে না। আমরা অতীতে যা দেখেছি তাই হবে। কতগুলো আয়োজন হবে, হুলস্থুল হবে। ফলাফল মনে হয় না ইতিবাচক হবে। ড. মজুমদার আরো বলেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে প্রেসিডেন্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করার কথা সুস্পষ্টভাবে বলা আছে। তা সত্ত্বেও সংবিধান প্রণয়নের ৪৪ বছর পরেও প্রতিটি সরকার কমিশনে এ লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়ন না করে ক্রমাগতভাবে সংবিধান অমান্য করে আসছে। এ ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য হলো কমিশনের সদস্যদের যোগ্যতা-অযোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করে দেয়া। তাই আইন প্রণয়ন না করে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সার্চ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও এই আইনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন তিনি। এক্ষেত্রে ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের রেখে যাওয়া কমিশনারদের নিয়োগ-সংক্রান্ত আইনের একটি খসড়া কাজে লাগানো যেতে পারে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইন অনুসারে পাঁচ সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন সিনিয়র বিচারপতিকে সভাপতি করে ক্ষমতাসীন দলের একজন, প্রধান বিরোধী দলের একজন, নাগরিক সমাজের একজন এবং গণমাধ্যমের একজন প্রতিনিধি নিয়ে পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করা যেতে পারে। ভবিষ্যতে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে সত্যিকারের প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ প্রতিষ্ঠিত হলে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেত্রী মনোনীত ব্যক্তিদের মাধ্যমে অনুসন্ধান কমিটিতে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হবে নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদ্বয়ের বিরুদ্ধে দলপ্রীতির কোনো বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ যেন না থাকে।
নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন,  প্রেসিডেন্টের উদ্যোগ ইতিবাচক মনে হচ্ছে। একটা আলোচনার সূত্রপাত করবে। এটা ইতিবাচক। আলোচনার ফলাফল কি হবে সেটা পরে দেখা যাবে। সার্চ কমিটি গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সার্চ কমিটির প্রশ্ন তো পরে আসে। সার্চ কমিটি তো আইনের মধ্যে নেই। আইন এখনো হয়নি। এটা জাস্ট ব্যক্তির এক্সিকিউটিভ অর্ডার। কিন্তু এই আইনের কথা সরকারও বলছে না, বিরোধী দলও বলে না। দেখা যাক তারা আলোচনায় কি বলে, কিভাবে ঐকমত্য হয়। আইন না থাকলেও ঐকমত্য হলে সেটা ভালো। সমস্যা হবে না। তবে আইন হলে সেটাও ঐকমত্যের ভিত্তিতে করা উচিত। যেন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়, সবাই নির্বাচনে আসে। এরকম একটা পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
বঙ্গভবনে বিএনপির প্রস্তাব: নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে খালেদা জিয়ার ১৩ দফা প্রস্তাব প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে বঙ্গভবনে পৌঁছে দিয়েছে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের একটি আবেদনও দিয়েছে তারা। প্রস্তাবের একটি মুদ্রিত কপি ও সাক্ষাতের আবেদন নিয়ে গতকাল বেলা ১১টার দিকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বঙ্গভবনে যান। বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সহকারী সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইনুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রস্তাব ও আবেদন তার হাতে তুলে দেন বিএনপির প্রতিনিধি দল। সেখানে ১৫ মিনিটের মতো অবস্থান করেন বিএনপির দুই নেতা। বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মহামান্য প্রেসিডেন্টের কাছে হস্তান্তরের জন্য দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন গঠন ও শক্তিশালীকরণে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া উপস্থাপিত ১৩ দফা প্রস্তাবাবলীর মুদ্রিত কপি ও দলের মহাসচিব স্বাক্ষরিত একটি আবেদন তার সহকারী সামরিক সচিবের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। তিনি সেটা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। রিজভী বলেন, প্রেসিডেন্টের সহকারী সামরিক সচিব জানিয়েছেন- মহামান্য প্রেসিডেন্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিদেশে গিয়েছেন। চিকিৎসা শেষে আগামী ১১ই ডিসেম্বর দেশে ফিরবেন তিনি। এরপর ইসি পুনর্গঠনে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তবে কবে নাগাদ আলোচনা শুরু করবেন সেই বিষয়ে তারিখ জানানো হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি, প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে এদেশের মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা- নির্বাচন কমিশন কেমন হওয়া উচিত, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন কমিশন গঠনে কার্যকর উদ্যোগ নেবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিজয় দিবসের পর ১৮ই ডিসেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করার কথা ভাবা হচ্ছে। আলোচনায় প্রথম দিনই ডাক পেতে পারে বিএনপি। এদিকে বিএনপির প্রতিনিধি দলের সদস্য ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী জানান, সহকারী সামরিক সচিব জানিয়েছেন- উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ গেছেন প্রেসিডেন্ট। তিনি বিদেশে যাওয়ার আগে বলে গেছেন- ১১ই ডিসেম্বর দেশে ফেরার পর কয়েকদিন প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকবেন। তারপর পর্যায়ক্রমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন। পরে প্রেসিডেন্টের সহকারী প্রেস সচিব মাহমুদুল হাসান গণমাধ্যমকে জানান, বিএনপির প্রতিনিধি দল প্রেসিডেন্টের সহকারী সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইনুর রহমানের কাছে তাদের মহাসচিবের সই করা চিঠি এবং প্রস্তাবের মুদ্রিত কপি হস্তান্তর করেছেন। এদিকে বিএনপি প্রতিনিধি দল বঙ্গভবনে যাওয়ার আগেই সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চিকিৎসার উদ্দেশে সিঙ্গাপুর রওনা দেন প্রেসিডেন্ট। ওদিকে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে গত ১৮ই নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে দেশবাসীর সামনে একটি রূপরেখা প্রকাশ করেন।  সেখানে তিনি নির্বাচন কমিশন নিয়োগে বাছাই কমিটি গঠনের রূপরেখা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা এবং সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ ১৩টি প্রস্তাব দেন। এসব প্রস্তাব প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছাতে গত ২১শে নভেম্বর খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার টেলিফোনে প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিবের সঙ্গে কথা বলেন। তবে কোনো  জবাব না পেয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ চেয়ে বিএনপির তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি চিঠি দেয়া হয় ২৩শে নভেম্বর। সে চিঠির সাড়া না পাওয়ার পর প্রস্তাবসহ একটি চিঠি বঙ্গভবনে পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি।
প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানালেন ফখরুল
নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলোচনা শুরু করবেন জেনে প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি মঙ্গলবার দুপুরে বলেছেন, তিনি বিদেশ থেকে ফিরে আসার পরেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলোচনা শুরু করবেন। তাকে ধন্যবাদ। আজ জনগণের যে দাবি, প্রেসিডেন্ট তাকে সম্মান করেছেন। আমরা খুব খুশি হয়েছি। গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে গতকাল বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে ৯০-এর ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি আশঙ্কা প্রকাশ করে মির্জা আলমগীর বলেন, প্রেসিডেন্ট গতবারও আলাপ করেছিলেন। কিন্তু আলাপের পর আওয়ামী লীগের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। তাদের নির্বাচিত নির্বাচন কমিশনারই নিযুক্ত করা হয়। আর ওই কমিশনের অধীন বিগত সব নির্বাচনে আমরা কি ভয়াবহ চিত্র দেখেছি। সবচেয়ে ভয়াবহ ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন। ওই ইসির যোগ্যতার কারণে সে নির্বাচনে শতকরা পাঁচজন লোকও ভোট দিতে যায়নি। সরকারের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শুধু অতীতচারিতা করে, বিএনপিকে বকাবকি করে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গণতন্ত্রের আকুতিকে স্তব্ধ করা যাবে না। আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে মির্জা আলমগীর বলেন, এ দলটি হচ্ছে গণতন্ত্রবিরোধী দল। মুখে বলবে গণতন্ত্রের কথা কিন্তু তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। নব্বইয়ে গণতন্ত্র উদ্ধার হয়েছিল। সেটা আওয়ামী লীগ নিয়ে নিয়েছে। গত সাত বছরে গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক মেরে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মির্জা আলমগীর বলেন, গণতন্ত্রকে আরেকবার ধ্বংস করবেন না। ধিকৃতদের খাতায় নাম লেখাবেন না। আমরা তো বেশি কিছু চাই না। একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন, যাতে সব দল অংশ নেবে, ভোটাররা তাদের পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দেবে। আমরা তো বলছি না বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। গুম হওয়া পরিবারের দাবি সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা গুম হয়েছে তারা ফিরে আসবে না। আওয়ামী লীগ সরকার জেনে বুঝে তাদের সরিয়ে দিয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নব্য ফ্যাসিস্টদের পরাজিত করতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান, নাজিমউদ্দিন আলম, মোস্তাফিজুর রহমান, ২০ দলীয় জোটের নেতা সাইফুদ্দিন মনি ও খন্দকার লুৎফুর রহমান বক্তব্য দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *