ঢাকা; স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতো সহিংস হয়ে উঠছে জেলা পরিষদ নির্বাচনও। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ না নিলেও মনোনয়ন দাখিলকে কেন্দ্র করে ঘটছে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এমনকি সরকার সমর্থক প্রার্থীদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে প্রকাশ্যে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটছে। এসব ঘটনায় আহতও হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাতিলের হিড়িক পড়েছে। নানা কারণ দেখিয়ে তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হচ্ছে। এমনকি সব কাগজপত্র ও তথ্যাদি সঠিক দেয়ার পরও প্রার্থিতা বাতিল করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এই সুযোগে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন কয়েক ডজন চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থী। আগামী ২৮শে ডিসেম্বর দেশব্যাপী জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই গত শনিবার থেকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শুরু হয়। ওই দিন খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যাচাই-বাছাইকালে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদের পক্ষে জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জামালের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন। একই সময় বিদ্রোহী প্রার্থী অজয় সরকারের নেতৃত্বে তার সমর্থকরা উপস্থিত হন। একপর্যায়ে দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে অজয় সরকারসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
এর আগে বৃহস্পতিবার মুন্সীগঞ্জে মনোনয়ন দাখিলকে কেন্দ্র করে সরকার সমর্থক প্রার্থীদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ওদিকে কুষ্টিয়ায় জাসদ (ইনু) মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী গোলাম মহসিনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এতে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে রয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম। প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়ে গোলাম মহসিন অভিযোগ করেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। জেলা পরিষদের লাইসেন্স কয়েকদিন আগেই এক আত্মীয়ের নামে হস্তান্তর করেছেন। এবং তার কপিও জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী বরাবর প্রেরণ করেছেন। প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল করবেন বলে জানান তিনি। এছাড়া হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী। ঠুনকো অজুহাতে ওই তিনজনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। প্রার্থিতা বাতিলকৃত তিন প্রার্থী হলেন- কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনমোহন দেব নাথ, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট এনামুল হক মুশাহিদ ও মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী মো. হাফিজুর রহমান। প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, আমি টাকার কারবারি। তাই সম্পদ বিবরণী দিতে ভুল করিনি। একইদিন ফেনীতে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী ওবায়দুল হক ও দুই সদস্য প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়। বাতিলকৃত প্রার্থীদের সমর্থকের নামের বানানে সামান্য ত্রুটি থাকায় এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান জেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মেসবাহ উদ্দিন। এদিকে মানিকগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম মৃধা ও দুই সদস্য প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়। আয়কর সংক্রান্ত কাগজপত্রে সামান্য ত্রুটি থাকায় রফিকুল ইসলামের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এদিকে ঢাকায় একমাত্র স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী জাতীয় পার্টির নেতা মাসুদ খান মজলিসের মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এতে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে রয়েছেন। এছাড়া লক্ষ্মীপুরে দুই নারী সদস্য এবং সাধারণ সদস্য পদে ১২ জনসহ ১৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। ১০ টাকা কেজি চালে অনিয়মের অভিযোগের এদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় জানান রিটার্নিং অফিসার। নওগাঁয় এক চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ৬ সদস্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।