লালমনিরহাটের সেই লাঞ্ছিত শিক্ষককে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি ।

Slider শিক্ষা
15208076_587685491417363_1374585435_n
এম এ কাহার বকুল; লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় স্কুল পিয়নের হাতে মার খাওয়া শিক্ষক তার দায়ের করা মামলা তুলে নিতে হুমকির মুখে পড়েছেন।
গত ২২ নভেম্বর বিকেলে স্থানীয় ডাকবাংলো মাঠে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে একথা জানান,বুড়াবাউরা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সেই নির্যাতিত শিক্ষক আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বপন। লাঠি দিয়ে দপ্তরি তাকে কী নির্মমভাবে পেটাচ্ছিল তার বর্ণনা দিতে গিয়ে হুহু করে কেঁদে ফেলেন স্বপন। এসময় হাতীবান্ধা উপজেলার বিভিন্ন প্রাইমারি স্কুলের অর্ধশতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা উপস্থিত ছিলেন। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ, হাতীবান্ধা শাখার পক্ষ থেকে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেন শিক্ষক নেতারা। অন্যথায় বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে বলেও সমাবেশে ঘোষণা দেয়া হয়।
এসময় উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের আহবায়ক রেজাউল করিম ও সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সোহেল বক্তব্য রাখেন। উল্লেখ্য, গত ১৯ নভেম্বর বিকেলে বিস্কুট বিতরণ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বুড়াবাউড়া সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বপনকে স্কুলের মাঠে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সামনে বেধড়ক লাঠিপেটা করে ওই স্কুলের দপ্তরি আবু সায়েম প্রিন্স। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় নির্যাতিত শিক্ষককে উদ্ধার করে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ওইদিন রাতে শিক্ষক স্বপন বাদি হয়ে হাতীবান্ধা থানায় দুজনের নামে একটি মামলা করেন। কিন্তু পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করতে গড়িমসি করে। অবশেষে গত ২১ নভেম্বর রাতে মামলাটি রেকর্ড করা হয়, মামলা নম্বর ১৭। মামলাটি রেকর্ড হওয়ার পর থেকে শিক্ষক স্বপনকে মামলা তুলে নেয়ার জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাছান আলী ও দপ্তরি প্রিন্স হুমকি দিচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নির্যাতিত শিক্ষক স্বপন কেঁদে কেঁদে বলেন, ’আমাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হলেও ওই সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাছান আলী স্যার আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি। এমনকি গুরতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তির পরও তিনি আমাকে দেখতে আসেনি। প্রকৃতপক্ষে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাছান আলীর নির্দেশে দপ্তরি প্রিন্স আমার ওপর হামলা করেছে। এখন মামলা তুলে নেয়ার জন্য আমাকে অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে অভিযুক্ত দুজনের লোকজন।’ বুড়াবাউরা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিনিধিকে বলেন, স্কুলের হাজিরা খাতা সবসময় দপ্তরি প্রিন্সের হেফাজতে থাকে। দপ্তরি হাজিরা খাতা দিতে প্রায় সময় তালবাহানা করে। একারণে অনেকে হাজিরা খাতায় সই করতে পারেন না।
মঙ্গলবার স্কুলে গিয়েও হাজিরা খাতা না পাওয়ায় আয়েশা খাতুন নামে এক শিক্ষিকা সই করতে পারেননি। স্কুলের হাজিরা খাতা দপ্তরির কাছে থাকার বিষয়টি ঊপজেলা শিক্ষা অফিসারকে অনেক আগেই অভিযোগ করা হয়েছে, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তিনি আরও জানান, সরকারি দলের সমালোচনায় সবসময় মুখর রেজিষ্টার্ড স্কুল থেকে আত্তীকৃত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাছান আলী ও দপ্তরী প্রিন্স স্কুলের বিস্কুট লুটপাট করে খাচ্ছেন। অন্যদিকে শিক্ষক আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বপন ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় নেতা ছিলেন। তিনি এসব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন বলে তাদের রোষানলে পড়েছেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে হাতীবান্ধার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হাসান আতিকুর রহমান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ২২ নভেম্বর সকালে আমি থানা গিয়ে জানতে পারি যে, পুলিশ ওই শিক্ষকের মামলাটি নথিভুক্ত করেছে।’ পাশাপাশি এ ঘটনায় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবেও বলে তিনি জানান। থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২১ নভেম্বর রাতে মামলাটি রেকর্ড হওয়ার পর আসামি গ্রেফতার করার জন্য অভিযান চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *