নোয়াম চমস্কির ভবিষ্যতবাণীতে বাংলাদেশ

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

file

 

ঢাকা; যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রশাসন নিয়ে পূর্বাভাষ করতে গিয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে আনলেন মার্কিন দার্শনিক, ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক কর্মী নোয়াম চমস্কি। ট্রাম্প জলবায়ুু পরিবর্তনের ইস্যুটি অস্বীকার করায় বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ গৃহহারা হবেন বলে তিনি মনে করেন। কারণ, আগামী কয়েক দশকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। যেসব দেশ এ জন্য দায়ী জলবায়ুু শরণার্থীদের সেসব দেশে প্রবেশের অধিকার থাকা উচিত বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেছেন, বিপর্যয়কর এই করুণ পরিণতি শুধু বাড়তেই থাকবে। এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় ঘটবে। একই সঙ্গে নোয়াম চমক্কি বলেছেন, বিশ্ব ইতিহাসে এখন সবচেয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংগঠন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টি। প্রফেসর নোয়াম চমস্কিকে কখনও কখনও তাকে বলা হয় ‘দ্য ফাদার অব মডার্ন লিঙ্গুস্টিকস’। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, নির্বাচনে  ডনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ায় বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ত্বরান্বিত করবে। আর এটা হবে মানবতার জন্য এক বিপর্যয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্প ও অন্য শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তিত্বরা জলবায়ু পরিবর্তনকে প্রত্যাখ্যান করার কারণে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। প্রফেসর নোয়াম চমস্কি বলেছেন, এ জন্য মানবতার জন্য নেমে আসবে এক বিপর্যয়। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ট্রাম্প তার ট্রানজিশন টিম বা অন্তর্বর্তীকালীন টিমে যাদেরকে নিয়োগ দিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম একজন হলেন জলবায়ু পরিবর্তনকে অস্বীকার করেন এমন ব্যক্তি। তাকে এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি (ইপিএ)র দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জ্বালানি হিসেবে ফসিল ব্যবহার করা হয় এমন কারখানার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এমন আরও কিছু ব্যক্তিকে তিনি উপদেষ্টা বানিয়েছেন। উল্লেখ্য, এর আগে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্যারিস চুক্তি অনুমোদন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই চুক্তির প্রশংসা করে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, এর মধ্য দিয়ে আমাদের এই গ্রহকে নিরাপদ করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। কিন্তু ওই চুক্তি বাতিল করার অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প। এতে জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ স্থানীয় বিজ্ঞানীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তকে এ গ্রহের জন্য এক বিপর্যয় বলে আখ্যায়িত করেছেন। ট্রুথআউট নামের একটি ওয়েবসাইটকে প্রফেসর নোয়াম চমক্কি ওয়াল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গাইনজেশন (ডব্লিউএমও)-এর একটি রিপোর্টের কথা উল্লেখ করেছেন। এতে বলা হয়েছে, তাপমাত্রার দিক দিয়ে গত ৫ বছর বিশ্ব ছিল সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত। এ সময়ে রেকর্ড পরিমাণ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অপ্রত্যাশিত দ্রুত গতিতে গলে যাচ্ছে বরফ। এ ছাড়া ওই রিপোর্টে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অন্যান্য প্রভাবের কথা তুলে ধরা হয়েছে। গত ৮ই নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়। এতে মার্কিন সরকারে নিয়ন্ত্রণ পায় রিপাবলিকান দল। নোয়াম চমক্কি বলেন, ‘এর মাধ্যমে তারা এখন বিশ্ব ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সংগঠন। এ উক্তিটি উদ্ভট ও উত্তেজনাকর মনে হতে পারে। কিন্তু আসলেই কি তাই? বাস্তবতা কিন্তু অন্য কথাই বলে। এ দলটি মানব জীবন সংগঠিত হওয়ার যে উপায় তা যত দ্রুত সম্ভব তত দ্রুত ধ্বংস করে দেয়ার জন্য নিবেদিত। ইতিহাসে এর আগে এমন অবস্থানের নজির নেই। মানুষ তার ইতিহাসে এত বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে এমনটা খুঁজে পাওয়া দায়’। এটা বাড়িয়ে বলা এমন ধারণাও তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। নোয়াম চমস্কি বলেন, রিপাবলিকান দলের প্রাইমারি নির্বাচনের সময় প্রতিজন প্রার্থী এসব বিষয়ে থোড়াই কেয়ার করেছেন। তারা মনে করেছেন যা ঘটছে ঘটতে দিন। কিন্তু আধুনিক উদারবাদী সচেতন মহল তাদের থেকে ভিন্নটাই মনে করেন। এখানে প্রাইমারিতে অংশ নেয়া জেব বুশের কথা তোলা যেতে পারে। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বলেছিলেন, এটা এক অনিশ্চিত ইস্যু। আমরা এ বিষয়ে কিছুই করতে পারি না। আমরা অধিক পরিমাণে প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন করছি। নোয়াম চমস্কি তার যুক্তিতে তুলে আনেন প্রাইমারিতে অংশ নেয়া আরেকজন প্রার্থী জন কাসিচের নাম। জন কাসিচ একমত হয়েছিলেন যে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু তিনি বলেছিলেন, আমরা ওহাইওতে কয়লা পোড়াচ্ছি জ্বালানি হিসেবে। এ জন্য আমরা ক্ষমা চাইতে যাবো না। চমস্কি বলেন, ‘আর বিজয়ী প্রার্থী, বর্তমানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ট্রাম্প তো জ্বালানি হিসেবে ফসিল ব্যবহারের গতি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করার কথা বলা হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এসব দেশ টেকসই একটি জ্বালানি খুঁজে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। এই যখন অবস্থা তখন ঋণখেলাপি হয়ে যাওয়া জ্বালানি খাত আবার লাভের মুখ দেখা শুরু করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ কয়লা খনি পিবডি এনার্জি। তারা দেউলিয়া ঘোষণার জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু ডনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পরে তারা শতকরা ৫০ ভাগ লাভ করেছে বলে জানানো হয়েছে। এসব তথ্যই নোয়াম চমস্কির দেয়া। অন্যদিকে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। এতে শুধু বাংলাদেশেই লাখ লাখ মানুষকে গৃহহীন হতে হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে যেসব দেশ গ্রিন হাউজ গ্যাস সঙ্কটের জন্য দায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শরণার্থী মানুষদের অধিকার থাকা উচিত সেসব দেশে চলে যাওয়া। এটাই বিবেচনাপ্রসূত বিচার। এই বিপর্যয়কর পরিণতি শুধু বাড়তেই থাকবে। এটা শুধু বাংলাদেশের জন্যই হবে এমন নয়। এমনটা ঘটবে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের জন্যই। কারণ, এখানে রয়েছে অসহনীয় দারিদ্র্য, অস্বাভাবিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, হিমালয়ের হিমবাহের গলন। এসব কারণে পুরো পানি সরবরাহ ব্যবস্থা পড়ে যাবে হুমকিতে। এরই মধ্যে ভারতে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ পানীয় পানির অভাবে ভুগছে। এই পরিণতি আরও সুদূরপ্রসারী হবে। তাই প্রফেসর নোয়াম চমস্কি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুটি আলোচনায় আসে নি বললেই চলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *