পুলিশের দূর্বল রিপোর্ট; অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের মেয়ে হত্যা মামলার সকল আসামী খালাস

Slider টপ নিউজ নারী ও শিশু
5b4d24d1e5f7eaa4534bf39044d7a882-4
ঢাকা;  অতিরক্ত পুলিশ সুপারের একমাত্র কন্যা বুশরা নৃশংসভাবে খুন হলেন। মেয়ের মৃত্যু শোকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেলেন বাবা।  ন্যায় বিচার পেতে লড়ে যাচ্ছেন বুশরার মা। ১৬ বছর পর সকল আসামী খালাশ পেয়েছেন। এখন বুশরার মায়ের প্রশ্ন তাহলে মেয়েকে খুন করল কে? বুশরা নামের কেউ কি ছিল না? পুলিশ রিপোর্ট দূর্বল থাকায় মামলাটি ন্যায় বিচারের মুখ দেখছে না। পুলিশ হয়ে পুলিশের মেয়ের তদন্ত এমন হচ্ছে কেন? এই প্রশ্ন আসতেই পারে।

ঘরভর্তি বুশরার ২২টি ছবি। ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে মা লায়লা ইসলাম বললেন, ‘দেখো, এই ছবিটা ওর মারা যাওয়ার তিন মাস আগের। ও যখন একেবারেই ছোট, খুব লক্ষ্মী ছিল। আমার মেয়েটা খুন হয়ে ঘরে পড়ে রইল, মামলা হলো। আমি ১৬ বছর ধরে আদালতে আদালতে ঘুরলাম। জজকোর্ট, হাইকোর্ট সাজা দিলেন। আজ জানলাম, সর্বোচ্চ আদালতে তারা খালাস পেয়েছে। তাহলে বুশরাকে খুন করল কে? আমি কী বলব? বুশরা কি কখনো ছিল? আমার তো মনে হয়, বুশরা নামে কখনো কেউ ছিলই না।’

রাজধানীর পশ্চিম চৌধুরীপাড়ায় বড় রাস্তার পাশেই একতলা বাড়ি। এই বাড়িরই একটি ঘরে ২০০০ সালের ১ জুলাই খুন হন একমাত্র সন্তান রুশদানিয়া বুশরা ইসলাম। গতকাল ওই বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর মা লায়লা ইসলামের সঙ্গে। বাড়িরই কোনার একটি ঘরে থাকেন তিনি। ঘরের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। আর স্যাঁতসেঁতে চার দেয়ালে কেবলই বুশরার ছবি। শিশুকালের হামাগুড়ি দেওয়া ছবি, মায়ের কোলের ছবি, ফ্রক পরা বালিকা, শাড়ি পরা কিশোরীর, মুখোমুখি মা-মেয়ে, আরও নানা ভঙ্গির ছবির সঙ্গে বুশরার কবরের ছবিও বাঁধাই করে রেখেছেন লায়লা ইসলাম। টেবিলের ওপর ওষুধের স্তূপ, পানের বাটা, মেয়ের পুরোনো অ্যালবাম আর খাবারের বাটি।

বাবা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন। মেয়ে মারা যাওয়ার পর সেই শোকে আর কথা বলতেন না। ২০০৩ সালে হঠাৎ একদিন বুকে ব্যথা, এরপর মারা গেলেন তিনি। তখন থেকেই একা লড়ে যাচ্ছেন মা লায়লা।

ঘটনার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে মা বললেন, সবকিছুই পাঁচ কাঠা জমির ওপর একটি বাড়িকে কেন্দ্র করে। বাড়িটির মালিক তাঁর বড় বোনের প্রয়াত ম্যাজিস্ট্রেট স্বামী আবদুস সামাদ। আর মামলার প্রধান আসামি এম এ কাদের হলেন এম এ সামাদের সৎভাই। ১৯৯৬ সালে নগর আওয়ামী লীগের নেতা এম এ কাদের হঠাৎ করেই মহানগর জরিপে এ সম্পত্তিটি নিজের নামে লিখে নেন। সেই থেকে সম্পত্তি নিয়ে ১৭টি মামলা হয়েছে। যার ১৬টির রায় হয়েছে এম এ সামাদের পক্ষে। সবাইকে এ বাড়ি থেকে তাড়াতেই বুশরাকে খুন করা হয় বলে তিনি মনে করেন।

লায়লা ইসলাম বলেন, ‘এখন আমার কিছু বলার নাই, আমি শুধু বিচার চাই। দেশের মানুষকে বলি তাঁরা যেন আমার পাশে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী সেই সময়ে (২০০০ সালে) আমাকে ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। আমি আপার (প্রধানমন্ত্রীর) কাছে করজোড়ে মিনতি করি, তিনি যেন আমার মেয়ে হত্যার ন্যায়বিচারের জন্য কিছু করেন।’

মূলত একাই থাকেন লায়লা ইসলাম। পুরোনো ভাড়াটে, কয়েকজন প্রতিবেশী আর আত্মীয়স্বজন মাঝেমধ্যে খোঁজখবর নেন। বাড়ির সামনের দিদার স্টুডিওর মালিক মো. দস্তগীর প্রায় ১৭ বছর ধরে সেখানে আছেন। তিনি বলেন, ‘খালাম্মা শুধু বেঁচে আছেন মেয়ে হত্যার বিচার দেখার জন্য।’ ওই স্টুডিওর কর্মী মিজানুর রহমান বলেন, ‘নানি তো সারা দিন মেয়ের ছবি হাতে বসে থাকে। ছবিগুলান মুইছা মুইছা রাখে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *