হিন্দু সম্প্রদায়কে মালাউনের বাচ্চা বলিনি—: ছায়েদুল

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

38984_thumbs_lead

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়কে উদ্দেশ করে আপত্তিকর কথা বলার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক। তিনি বলেছেন, বিষয়টি প্রমাণ করতে পারলে তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন।
আজ রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা সদরের আশুতোষ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
আজ বেলা পৌনে দুইটা থেকে পৌনে তিনটা পর্যন্ত এই সংবাদ সম্মেলন চলে। সেখানে মন্ত্রী বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়কে উদ্দেশ করে মালাউনের বাচ্চা বলেছি—এটা প্রমাণ করতে পারলে আমি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেব।’ তিনি দাবি করেন, নাসিরনগরে ২৫-৩০ বছর ধরে তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। এই সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের কারও সঙ্গে কখনো কোনো ঝামেলা হয়নি। তিনি বলেন, ‘হিন্দু ভাইবোনদের হেফাজতে যথাযথ ভূমিকা পালনের পরিবর্তে নিজেদের মধ্যে মিথ্যা খবরের ভিত্তিতে কাঁদা ছোড়াছুড়ি করা মানেই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে হুমকির মুখে ছুড়ে ফেলা।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে মন্দির ও ​হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ ওঠে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক হিন্দু সম্প্রদায়কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। এ নিয়ে তাঁর পদত্যাগের দাবিও ওঠে। এ প্রেক্ষাপটে মন্ত্রী আজ সংবাদ সম্মেলন করেন।

মন্ত্রীর অভিযোগ, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের মতো সংগঠনও ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে তাঁকে অভিযুক্ত করছে। তিনি বিষয়টি নিয়ে মর্মাহত। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা রানা দাশ গুপ্ত নিজেই সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেছেন যে তিনি শোনা কথার ভিত্তিতেই এ অভিযোগ করেছেন। অথচ তাঁরা বিষয়গুলো সামাল দিতে আমার সঙ্গে যোগাযোগের কোনো চেষ্টাই করেননি। মিথ্যা অভিযোগের তির ছুড়ে দিয়ে, দাঙ্গাকে উসকে দিয়ে তাদের ঢাকায় চলে যাওয়া একটি জ্বলন্ত প্রশ্ন হয়ে আছে।’

মন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আমি একজন মন্ত্রী হয়ে নিজের পায়ে নিজে কেন কুড়াল মারব? নিজেদের লোকদের গালিগালাজ এবং জনপ্রিয়তা ও সততার ওপর কালিমা লিপ্ত করব?’ তিনি বলেন, ‘আক্রান্ত হিন্দুদের রক্ষার পরিবর্তে তাদের আরও ক্ষতির মুখে ফেলে রেখে যড়যন্ত্রের তিরটি বারবার আমার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। কিছুদিন আগেও আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করতে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল। ওই মহলের ব্যর্থতার গ্লানি ঢাকতে তারা আজ আমার নির্বাচনী এলাকায় কথিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে। আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নষ্ট করতে উঠে–পড়ে লেগেছে। আমার জীবন থাকতে হিন্দুদের ক্ষতি করার মাধ্যমে আমার সুনামহানির ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেব না।’
মন্ত্রী বলেন, যারা হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতি করেছে, তারা পরিকল্পিতভাবে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা থেকে ১৪টি ট্রাকে করে মন্দির ভাঙতে ও বাড়িঘর ভাঙতে এসেছিল। তাদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

কোন মহল তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে?—জানতে চাইলে ছায়েদুল হক কোনো উত্তর দেননি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মন্ত্রীর বিরোধ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ করেন, ‘উপজেলার হরিপুর ও গোকর্ণ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের সময় সদর আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার ৭৫ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন।’ তিনি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন বলেও উল্লেখ করলেন।

নাসিরনগরে মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িঘরে দুর্বৃত্তদের হামলা চালানোর আগে আয়োজিত সমাবেশে যোগ দেওয়ার অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে শুক্রবার সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এই তিনজন হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক ও নাসিরনগর সদর ইউপির চেয়ারম্যান আবুল হাশেম, তাপরতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরুজ আলী ও হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক।

এই তিন নেতাকে বহিষ্কারের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, কেন করেছে বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগই ভালো বলতে পারবে। তবে হামলার সময় তাঁর অনুসারীদের অনেকেই হিন্দুদের ঘরবাড়ি রক্ষা করেছেন বলে তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক সেদিন এলাকায় না থাকলে হিন্দু পরিবারের আরও অনেক ক্ষতি হতো।’ তিনি জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এ ঘটনার পর আজকে পর্যন্ত সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারসহ জেলা আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই সদর উপজেলায় আসেননি কেন? তাঁরা আমাকে কোনো কিছু জিজ্ঞেসও করেননি।’

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, ঢাকা থেকে যেসব সাংবাদিক নাসিরনগরে আসছেন, তাঁদের থাকা, খাওয়ার টাকা কে দিচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক যুবকের ধর্মীয় অবমাননাকর একটি পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে ৩০ অক্টোবর সকালে স্থানীয় ডিগ্রি কলেজ মোড়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জমা’আতের উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক রিয়াজুল করিমের নেতৃত্বে এবং স্থানীয় খেলার মাঠে খাঁটি আহলে সুন্নত ওয়াল জমা’আতের সভাপতি মো. মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে পৃথক দুটি সমাবেশ হয়। উপজেলা প্রশাসন ওই সমাবেশের অনুমতি দিয়েছিল। ওই দিন ওই সমাবেশ থেকে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনাটি ঘটে বলে অভিযোগ ওঠে।

ওই হামলার ঘটনায় প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা ছিল কি না—জানতে চাইলে মন্ত্রী ছায়েদুল হক বলেন, ‘প্রশাসন সক্রিয় ছিল। তাদের কোথাও কোনো অবহেলা নেই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *