রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভের মুখে হানিফ

Slider জাতীয়

f55a7ec3992921c8ff21440d5e03a616-4


ঢাকা; ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির এবং বাড়িঘর ভাঙচুরের প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। আজ শুক্রবার দুপুরে প্রায় আধা ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখা হয়।

অবরোধ চলাকালে ওই পথে যাওয়ার সময় বিক্ষোভের মুখে পড়েন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। পরে তিনি বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের মন্দির ও বাড়িঘরে ভাঙচুর, লুটপাটের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলকারীরা জাতীয় প্রেসক্লাব হয়ে শাহবাগ এলাকায় গিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত তাঁরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখেন। এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সেখান থেকেও কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে যোগ দেন।

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠান শেষ করে ফিরছিলেন মাহবুব উল আলম হানিফ। বিক্ষোভকারীরা তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরেন। কেউ কেউ তাঁর গাড়িতে লাথি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি গাড়ি থেকে নেমে এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন।

এ ব্যাপারে মাহবুব উল আলম হানিফ  বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়েছিলাম। শাহবাগে আসার পরে নাসিরনগরে হামলার প্রতিবাদে আন্দোলনকারী কিছু ছাত্র আমার গাড়ি রোধ করে। আমি গাড়ির ভেতরে ছিলাম। তারা দেখেনি। পরে আমি নেমে এসে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছি। আমি বলেছি, নাসিরনগরে হামলায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার  বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মিছিল থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করা হয়েছিল।

প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাটের প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদী মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করে। এসব কর্মসূচি থেকে হামলাকারীদের শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, মন্ত্রী ছায়েদুল হকের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন, সচেতন হিন্দু পরিষদ, জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ, জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি, মাইনরিটি সংগ্রাম পরিষদ, জগদ্বন্ধু মহাপ্রকাশ মঠ, জাগো হিন্দু পরিষদ, ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদ, মহিলা ঐক্য পরিষদ, জাতীয় হিন্দু ছাত্র মহাজোট, জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট, জাতীয় হিন্দু মহাজোটসহ বিভিন্ন সংগঠন আজ সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধন শেষে প্রেসক্লাব এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে সংগঠনগুলো।
এর আগে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য নিম চন্দ্র ভৌমিক বলেন, সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় হামলা হচ্ছে। হিন্দুদের মন্দির ভেঙে দেওয়া হচ্ছে, বাড়িঘরে হামলা হচ্ছে। এর আগে বিদেশিদের ওপর হামলা হয়েছে, খ্রিস্টানের ওপর হামলা হয়েছে, মুসলমানদের ঈদের জামাতে হামলা হয়েছে। এসব হামলার মাধ্যমে বিভেদ, অনৈক্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি এই অবস্থা মোকাবিলার জন্য সব গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে একসঙ্গে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান।
কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসনের নির্লিপ্ততাও আছে এমন অভিযোগ করে নিম চন্দ্র নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর হামলাকারীদের অবিলম্বে শাস্তির ব্যবস্থা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান।
অন্যদিকে পাঁচ দফা দাবিতে আগামী ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে জাতীয় হিন্দু মহাজোট বলেছে, দাবি পূরণ না হলে কঠোর গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তাদের দাবিগুলো হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত, ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির এবং ঘরবাড়ি সরকারি খরচে নির্মাণ করে দেওয়া, হিন্দু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, স্থানীয় সাংসদ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের পদত্যাগ এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপারের অপসারণ; এবং একটি সংখ্যালঘু কমিশন গঠন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *