সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়ার অঙ্গীকারে আলোক প্রজ্বলন

Slider সিলেট

img_20161104_141247-1

হাফিজুল ইসলাম লস্কর, সিলেট প্রতিনিধি :: ছাতক, মাধবপুর ও  ব্রাহ্মণবাড়িয়া হিন্দুদের বাসাবাড়ি ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ রুখতে শত হাতে আলোক প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করা হয় সিলেটে।

বৃহস্পতিবার সন্ধা ৭ টায় ‘মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সাংস্কৃতিক মঞ্চ, সিলেটের’ উদ্যোগে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শত হাতে আলোক প্রজ্বলন কর্মসূচি পালনকালে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন প্রগতিশীল নাগরিকরা। ঘন্টাব্যাপী মোমবাতি হাতে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মাধবপুর ও ছাতকে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয় । কর্মসূচি চলাকালে বক্তারা বলেন, ‘ধ্বংসযজ্ঞে মাটিতে লুটিয়ে পড়া বঙ্গবন্ধুর ছবি বলে দেয়, অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশকে অন্ধকারে ঢেকে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। কালীপূজার আনন্দকে আঁধারে ঢেকে দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মাধবপুর ও ছাতকে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলা এরই অংশ। ষড়যন্ত্রকারীদের রুখে দাঁড়াতে হবে। নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়াতে হবে। হামলার উস্কানিদাতাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মনে জ্বেলে দিতে হবে আস্থার আলো।

শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সাংস্কৃতিক মঞ্চ, সিলেটের সমন্বায়ক ও সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমেদ মিশু। তিনি বলেন, আমাদের উদার মানসিকতাকে কলংকিত করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মাধবপুর ও ছাতকে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা । এসব ঘটনায় একাধিক পূজামন্ডপ ও মন্দির-আখড়া ভাঙচুর হয়েছে। শারীরিকভাবে নিগৃহীত মানুষের সংখ্যা শতাধিক। এরমধ্যে অনেকেই আহত হয়েছেন।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে তিনি আরও জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলায় রসরাজ নামের এক হিন্দু যুবকের ফেইসবুকে দেয়া পোস্টের সূত্র ধরে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখান থেকে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় হামলা চালানো হয়। যার বিরুদ্ধে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ, সেই রসরাজ এমন পোস্টের কথা অস্বীকার করেন। স্থানীয় এলাকাবাসী তাঁকে পুলিশে সোপর্দ করে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পুলিশে সোপর্দ করার পরেও কালীপূজার উৎসবে নারকীয় উল্লাসে হামলা চালানো হয়। কালীপূজা বা দেওয়ালির জন্য আলোকিত উৎসব প্রাঙ্গণ পরিণত হয় বিভীষিকার অন্ধকারে। এই ঘটনায় সারা দেশের বিবেকবান মানুষ ব্যথিত। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মনে আস্থার আলো জ্বেলে দিতে শুভবোধ সম্পন্ন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান । শত হাতে আলোক প্রজ্বলন কালে সিলেটের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার আরশ আলী, সিপিবি সিলেট জেলার সাবেক সভাপতি কমরেড বাদল কর, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সিলেট শাখার সভাপতি ইরফানুজ্জামান চৌধুরী, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, বাংলা মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান সাংবাদিক আল আজাদ, পূজা উদ্যাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা, আবৃত্তিশিল্পী মোকাদ্দেস বাবুল, রবীন্দ্র সঙ্গিত শিল্পী রানা কুমার সিনহা, তথ্যচিত্র নির্মাতা নিরঞ্জন দে যাদু, সিপিবি সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমন, সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম, জাসদ সিলেট জেলা কমিটির সাধারন সম্পাদক একেএ কিবরিয়া, প্রবাসী সাংস্কৃতিক সংগঠক নাজরা চৌধুরী, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাবেক সভাপতি অনুপ কুমার দেব, সাবেক সহসভাপতি খোয়াজ রহিম সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত, ও শামসুল বাসিত শেরো, উদীচী সিলেট শাখার সহসভাপতি সৈয়দ মুনির হেলাল, আইডিয়া সিলেটের প্রকল্প ব্যাবস্থাপক মো আমিনুর রহমান, ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর দাশ গুপ্ত, নারীমুক্তি সংসদ সিলেটের সভানেত্রী ইন্দ্রানী সেন সম্পা, কবি আবিদ ফায়সাল, সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র দেবাশীষ দেবু, প্রভাষক প্রণবকান্তি দেব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *