লতিফ সিদ্দিকী কি তসলিমা নাসরিনের বাসায়!

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ সারাদেশ সারাবিশ্ব

latif_taslima_daud_bg_112876917
গ্রাম বাংলা ডেস্ক: বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলে ধর্মদ্রোহী সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী এখন কোথায়! তা নিয়ে বিশ্ব জোড়ে তোলপাড় চলছে। সোমবার বিবিসিকে কোলকাতায় অবস্থান করে সাক্ষাৎকার দেয়ার পর কোলকাতার সাংবাদিকেরা তাকে খুঁজে পাচ্ছেন না বলে গণমাধ্যমে সংবাদ বেরিয়েছে। তবে কি লতিফ সিদ্দিকী কোলকাতায় নেই!

কয়েক দিনের মধ্যে একটি অনলাইন পত্রিকায় তসলিমা নাসরিনের একটি সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছে। ওই সাক্ষাৎকারে তসলিমা নাসরিন বলেছেন, তার যৌবন নেই। ভাটা পড়েছে। এখন আর কেউ তার দিকে তাকায় না। তবে সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে তিনি বলেছেন, স্বামী রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহর জন্য তার দুঃখ হয়। এই জীবনে তিনি বিভিন্ন বয়সী পুরুষের সঙ্গে যৌনলীলা করেছেন বলে স্বীকার করে তসলিমা নাসরিন বলেন, জীবনের পড়ন্ত বেলায় তেমন যদি কাউকে পাওয়া যায় তবে তিনি স্বামী হিসেবে নেয়ার বিষয়টি ভেবে দেখবেন।

প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী থেকে বেরিয়ে লতিফ সিদ্দিকী বিতর্কিত মন্তব্য শেষে ভারতে কেন এলেন এ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক আছে। তবে মুখরোচক বিতর্ক শুরু হতে মনে হয় আর বাকী নেই যে, তসলিমা নাসরিন ও লতিফ সিদ্দিকী একই ধরণের অপরাধ করে অপরাধী হয়েছেন।

শেষ খবর পর্যন্ত বাংলাদেশের নাগরিক তসলিমা নাসরিন আর লতিফ সিদ্দিকী দুই জনই ধর্মদ্রোহী হয়ে ভারতে অবস্থান করছেন। দুই জনই বাংলাদেশ থেকে বিতারিত বললে এখন আর মনে হয় ভুল হবে না। তবে প্রশ্ন আসতেই পারে যে, পুরুষ ধর্মদ্রোহী একই দেশের একই জায়গায় আত্মগোপনে থাকা অপর নারী ধর্মদ্রোহীর কাছে থাকতেই পারেন। লতিফ সিদ্দিকী ধর্ম নিয়ে কথা বলার পর তসলিমা নাসরিন সাক্ষাৎকার দিয়ে নিজের চাহিদার কথা জানানোর কারণে মানুষের সন্দেহ জাগতেই পারে যে, তসলিমা ও লতিফ সিদ্দিকী কি নতুন সংসার করতে যাচ্ছেন? আর এই জন্যই কি লতিফ সিদ্দিকী ভারতে থাকা তসলিমা নাসরিনের কাছে যেতে অকাংখিতভাবে ভারতে গেছেন?

এদিকে পবিত্র হজ নিয়ে কটূক্তি করার পর এরই মধ্যে মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যপদ হারিয়েছেন লতিফ সিদ্দিকী। বর্তমানে তিনি কলকাতা অবস্থান করছেন। কিন্তু কোথায় লতিফ সিদ্দিকী? সোমবার রাতের দিকে কিংবা মঙ্গলবার সকালে তাকে খুঁজতে গিয়ে কলকাতার সাংবাদিকরা হয়রানই কেবল হয়েছেন। কিন্তু দেখা মেলেনি। পাঁচ তারকা হোটেল তাজ বেঙ্গলে তিনি উঠেছিলেন, কিন্তু সাংবাদিকরা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, সেখানে নেই। ধারণা করা হচ্ছে কোনও এক বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপনে রয়েছেন লতিফ সিদ্দিকী।

তবে কলকাতা থেকেই সোমবার সন্ধ্যায় বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লতিফ সিদ্দিকী হজ ও তাবলিগ জামায়াত নিয়ে তার বক্তব্যের ব্যাপারে বলেছেন, তার অনুতাপ বা অনুশোচনা নেই। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি অবশ্য এ-ও বলেছেন, তার বক্তব্যের অংশবিশেষ প্রচার করা হচ্ছে। পুরোটা সামনে না এনে তার বক্তব্যকে ভিন্ন অর্থ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

আবদুল লতিফ সিদ্দিকী গত ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতির একটি অনুষ্ঠানে পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামায়াত নিয়ে কটূক্তি করেন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে অযাচিত মন্তব্য করেন তিনি।

এ ঘটনার পর থেকেই লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে শুরু হয় নানা বিতর্ক। প্রধানমন্ত্রী দ্রুতই ঘোষণা দেন, লতিফ সিদ্দিকীকে সরকার ও দলের পদ থেকে অপসারণ করা হবে। সে ঘোষণা কার্যকর করা হয়েছে। তবে লতিফ সিদ্দিকী তার অবস্থান থেকে এখনো সরছেন না।

বিবিসিকে দেওয়া পুরো সাক্ষাৎকারটি এখানে তুলে ধরা হলো-

বিবিসি: সরকার ও দল থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে কীভাবে নিচ্ছেন?
লতিফ সিদ্দিকী: আমার প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক। কারণ, আমি একটা দল করি। দলের একটা নিয়মশৃঙ্খলা আছে। সেই নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছি বলে দল ও দলনেতা মনে করেছেন। সেই মতো দলনেতা ব্যবস্থা নিয়েছেন। এটা নিয়ে আমার তো বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা না। এই দলই আমাকে মন্ত্রী বানাইছে, এই নেতাই আমাকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এখন তিনি বা তার সহকর্মীরা মিলে যদি মনে করেন যে আমি সহকর্মী হওয়ার যোগ্যতা রাখি না…। সংখ্যাগরিষ্ঠ গণতন্ত্রে এটা তো কোনো অপরাধ নয়।

বিবিসি: দলের নেতাদের সঙ্গে আপনি একমত?
লতিফ সিদ্দিকী: আমি একমত। কারণ, আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। সংখ্যাগরিষ্ঠর সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।

বিবিসি: আপনার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে, এমন মনে হয়েছে কি?
লতিফ সিদ্দিকী: না, না, বরং আমি অনুতপ্ত। আমি আমার দল, আমার দলনেতাকে একটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছি।

বিবিসি: অন্য কোনো অনুশোচনা হচ্ছে কি? পুরো অবস্থার জন্য অনুশোচনা হচ্ছে কি?
লতিফ সিদ্দিকী: না, আমার কোনো অনুশোচনা বা অনুতাপ নেই। আমার নেতাকে আমি বিব্রত করেছি। তিনি আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। আমি তাঁকে খুব কষ্ট দিয়েছি।

বিবিসি: কিন্তু আপনি যা বলেছিলেন, তা নিয়ে কোনোভাবে অনুশোচনা হচ্ছে?
লতিফ সিদ্দিকী: আমার আক্ষেপ, সারা বিশ্বে এমন কোনো মানুষ বা সাংবাদিক নেই। জিজ্ঞেস করল না যে উনি একটা আড্ডাতে কথাগুলো বলেছেন। কোনো সভায় নয়, সমিতিতে নয়, মাইকে নয়। সেই আড্ডায় উনি পুরোটা কী বললেন, সেইটা না জেনে, একটা খণ্ডিত অংশ, বিকৃতও হতে পারে, অপ্রাসঙ্গিক হতে পারে, পুরোটা কেউ চাইলেন না আজ পর্যন্ত। এইটা আমার আক্ষেপ আছে। আমি পুরো কথাটার দায়িত্ব নিচ্ছি। দেড় ঘণ্টা আমি কথা বলেছি। সেই দেড় ঘণ্টার টেপটা আপনারা বাইর করান। সেটার পুরো দায়িত্ব আমার।

বিবিসি: বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এখন আপনার পদক্ষেপ কী হবে, দেশে ফিরবেন কি না?
লতিফ সিদ্দিকী: আমি দেশে ফিরতে আগ্রহী। কারণ, এই দেশটার স্বাধীনতা ও উন্নয়নের জন্য আমি কাজ করেছি। কিন্তু প্রেক্ষাপট এমন হয়েছে যে আমি কী করব বুঝতে পারছি না। কারণ, আমি দেশে গেলে, আমার নেতা যদি আরও বিব্রত হন, সেই জন্য আমি খুবই মানসিক সংকটে আছি। আমি প্রথম সুযোগেই দেশে ঢুকে পড়ব।

বিবিসি: আপনি এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না?
লতিফ সিদ্দিকী: বিষয়টি তা নয়। নেতা বা আমার দলের ক্ষতি হবে কি না আমি ঢুকলে, সেইটা নিয়ে আমি চিন্তিত। আমাকে নিয়ে আমি চিন্তিত না।
আপনি যদি দেশে না ঢোকেন, তাহলে তো বুঝতে পারবেন না সবাই বিব্রত হবে কি না।
আমাকে তো কিছুটা জানাবে। জানতে তো আমি পারব।

বিবিসি: দলের নেতার সঙ্গে নিজে থেকেই যোগাযোগের চেষ্টা করছেন কি?
লতিফ সিদ্দিকী: দলের নেতা, মানে শেখ হাসিনার সঙ্গে। না, আমি চেষ্টা করিনি।

বিবিসি: আপনি কি চাইছেন, দলের পক্ষ থেকে আপনাকে দেশে আসার কথা বলুক?
লতিফ সিদ্দিকী: আমি চাইছি না। তারা কী করবেন। তারাই সিদ্ধান্ত নিবেন।

বিবিসি: তসলিমা নাসরিন ও দাউদ হায়দার দেশে ফিরতে পারছেন না। তাদের মতো দেশে ফেরা নিয়ে আপনার ভয় হচ্ছে কি না?
লতিফ সিদ্দিকী: তারা লেখনীর মাধ্যমে বলেছেন। তারা এক কথা বলেছেন আর আমি তো এখনো বলছি যে আমার অবস্থান, আমার কথাগুলোকে বিকৃত ও খণ্ডিত করা হয়েছে। একত্রে যোগ করলে দেখা যাবে যে আমি একটি একাডেমিক ডিসকাশন করেছি।

বিবিসি: মানুষ বিশ্বাস করছে যে আপনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন। আপনার ভেতরে কি ভয় জাগছে যে আপনি দেশে ফিরতে পারবেন কি না?
লতিফ সিদ্দিকী: সেটা দেখা যাবে, সময়ই বলে দেবে। আমার জীবনে এমন ঘটনা এসেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রতিবাদ করেছিলাম। তার পরে বিতাড়িত হয়েছিলাম। …কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে দ্বিমত হয়েছিল বলে সরে এসেছিলাম। এখন কাদের সিদ্দিকী ক্ষমা চাচ্ছে। এই ব্যাটাকে আমার পক্ষে ক্ষমা চাওয়ার অধিকার কে দিল?
আমি তো তাকে দায়িত্ব দেইনি যে আমার পক্ষ থেকে ক্ষমা চাও। সে একদল করে, আমি একদল করি।

বিবিসি: অদূর ভবিষ্যতে যদি আপনি দেশে ফিরতে না পারেন এবং দল যদি ফেরার কোনো ইঙ্গিত না দেয়, তবে কোথায় থাকবেন? ভারতেই থাকবেন কি না?
লতিফ সিদ্দিকী:  না। আমি ইউরোপ, আমেরিকায় থাকতে পারব না বলে কলকাতায় এসেছি। আমি মাটির কাছে থাকতে চাই।

বিবিসি: ভারতে থাকতে পারবেন কি না? কোনো ইঙ্গিত ভারত সরকার দিয়েছে কি না?
লতিফ সিদ্দিকী: আমি এখন এ বিষয়ে কিছু বলব না। সময়ই বলে দেবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *