ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাসিরনগরের ঘটনায় দুই মামলা, আসামি ২৫০০

Slider জাতীয়

90f546ca27b7db4b16a48e9a2dd01ae5-brahmanbariya

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া;শান্ত হয়ে এসেছে নাসিরনগর। তবে আতঙ্ক দূর হয়নি। গতকাল উপজেলা সদরে শান্তি সমাবেশ করেছে প্রশাসন। এদিকে রোববারের সহিংস ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়েছে ২টি। এসব মামলায় অজ্ঞাত প্রায় আড়াই হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের নির্লিপ্ততার অভিযোগ ওঠায় এর তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগ ধর্মীয় চেতনায় সামাজিক শান্তি রক্ষার আহ্বান শিরোনামে পত্রিকায় পাঠানো এক বিবৃতিতে পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসির অপসারণ দাবি করে।
নাসিরনগরের হরিপুর ইউনিয়নের হরিণবেড় গ্রামের জগন্নাথ দাশের ছেলে রসরাজ দাস ফেসবুকে শনিবার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে ছবি পোস্ট করেছেন এমন খবরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ঐদিনই রসরাজকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শনিবার সন্ধ্যায় সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই সড়কের কলেজ মোড়ে টায়ার জ্বেলে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে ক্ষুব্ধ লোকজন। রাতে মাইকিং করা হয় পরদিন এ লক্ষ্যে সমাবেশ হবে বলে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও হেফাজত ইসলাম সদরের দু’স্থানে এ সমাবেশ আহ্বান করে। প্রশাসন তাদের অনুমতিও দেয়। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন অভিযোগ করেন প্রশাসন সমাবেশের অনুমতি দিলেও নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা করেনি। প্রশাসনের নির্লিপ্ত ভূমিকার কারণে বিনা বাধায় তাণ্ডব চলে। রোববারের এ ঘটনায় ১৫টি মন্দিরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। হামলা হয় শতাধিক বাড়িঘরে। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত হামলার ঘটনা ঘটলেও পুলিশের কোনো ভূমিকা ছিলো না। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। কাশীপাড়া, নাসিরনগর থানা থেকে যার দূরত্ব ৫০ গজ। থানার পাশের এ পাড়ার ১৫/২০টি ঘরবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। ধরিয়ে দেয়া হয় আগুন। এ পাড়ার অমূল্য দাশের ঘরে তাণ্ডব চালানো হয়। তার স্ত্রী পূর্ণিমা দাশ জানান, তার ঘরের সবকিছু নিয়ে গেছে। হামলাকারীদের হাত থেকে বাঁচাতে স্বামীকে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখেন। দত্তপাড়ার রিপন দত্ত বলেন, আগের দিন ৩/৪টি মাইক বের করা হয় সমাবেশ সফলে। এছাড়া বিভিন্ন মসজিদের মাইক থেকেও সমাবেশ সফলের আহ্বান জানানো হয়। এ থেকে  পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে তা কি প্রশাসন বুঝতে পারেনি? তারা আমাদের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা করেনি। অনেকেই অভিযোগ করেন পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে অনেকেই থানার ওসিকে ফোন করে নিরাপত্তা চেয়েছিলেন। কিন্তু সাড়া মিলেনি। কাশীপাড়ার স্বপন কুমার দাশ জানান, সেখানে সমাবেশ চলার সময় ওসি ও থানার এক এসআইকে অনেকবার ফোন দিয়েছি। কিন্তু তারা ফোন ধরেনি। জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদের নেতা দীলিপ কুমার নাগ বলেন, পুলিশের ব্যর্থতার কারণেই নাসিরনগরের এ ঘটনা ঘটেছে। ফেসবুকে পোস্ট করার জন্য যে দায়ী সে যেই হোক তার বিচার আমরা চাই। পাশাপাশি হামলার ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের বিচারও দাবি করছি।
এদিকে গতকাল সরজমিন নাসিরনগর সদর ঘুরে দেখা গেছে আতঙ্কের এক পরিবেশ। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন জানিয়েছেন তাদের বাড়িতে হামলাকারীরা বাইরের। তাদের পাড়া-প্রতিবেশী মুসলমানরা হামলার সময় তাদের রক্ষায় এগিয়ে আসেন। দত্তবাড়িকে রক্ষা করতে গিয়ে আহত হন স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষক আবদুল মজিদ, হাসপাতাল কর্মচারী জামাল।
২ মামলা: দত্তবাড়ি মন্দিরে হামলার ঘটনায় কাজল জ্যোতি দত্ত বাদী হয়ে রোববার রাতে অজ্ঞাত ১০/১২শ’ লোককে আসামি করে একটি মামলা করেন। আরেকটি মন্দিরে হামলার ঘটনায় নির্মল চৌধুরী বাদী হয়ে আরো হা১০০০/১২০০ লোককে আসামি করে মামলা দিয়েছেন। এ ঘটনায় ৯ জনকে আটক করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
শান্তি সমাবেশ: এলাকার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে গতকাল বিকালে সদর ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে এক শান্তি সমাবেশ হয়। এতে জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান ও পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান পিপিএম বক্তৃতা করেন। এতে এলাকার হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বক্তৃতা করেন।
আতঙ্কে এলাকা ছাড়ার হিড়িক: রোববারের ঘটনার পর নাসিরনগরের বিভিন্ন এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন। বিজয়নগর ও সরাইল উপজেলার বিভিন্নস্থানে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকেই। সরাইলের শাহজাদাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম জানান, তাদের শাহজাদাপুর গ্রামে হরিপুরের হিন্দু সম্প্রদায়ের ২ শতাধিক লোক আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে গতকাল সকালে ঐ ইউনিয়নের শাহজাদাপুর, দেওড়া, মলাইশ, নিয়ামতপুর ও দাওরিয়া গ্রামে ফেসবুক পোস্ট নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা সেখানে ছুটে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *