বিদেশী সংবাদমাধ্যমে নিরঙ্কুশ আধিপত্য হিলারির

Slider সারাবিশ্ব

36750_naz-5

 

ঢাকা; আমেরিকার বাইরের গণমাধ্যমে নিরঙ্কুশ আধিপত্য হিলারি ক্লিনটনের। বিশ্বজুড়ে বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম বলছে, তৃতীয় ও সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট বিতর্কে বিজয়ী হয়েছেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী হিলারি। রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সমর্থনের ছিটেফোঁটা পাওয়াও বেশ মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্পের পাতানো নির্বাচনের দাবি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অনেক পত্রিকা।
ফ্রান্সের প্রখ্যাত ল্য পয়েন্ট ম্যাগাজিনের শিরোনাম ছিল: ‘জিততে না পারলেও পরাজয় মানতে অস্বীকার করতে পারেন ট্রাম্প’। স্পেনের এল মুন্ডো পত্রিকা বলছে, বিতর্কের সময় ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক মনোভাব ‘আরও একবার হিলারিকে বাই ডিফল্ট জিতিয়ে দিয়েছে’। ইতালির কুরিয়েরে দেল্লা সেরা দৈনিকের কলামে মাসিমো গাগি লিখেছেন, ‘রসাতলে যাওয়ার পথে একধাপ বাকি ট্রাম্পের’। ট্রাম্পের নির্বাচনের ফল মেনে না নেওয়ার ইঙ্গিত সম্পর্কে জার্মানির তাগেসপেইগেল পত্রিকায় ক্রিস্টোফ ভন মার্শাল লিখেছেন, ‘কর্তৃত্বপরায়ণ সরকার আছে যেসব দেশে, সেখানে এসব কথাবার্তা শুনতে অভ্যস্ত আমরা। কিন্তু কোন পশ্চিমা গণতন্ত্রে নয়।’ বৃটেনের দ্য গার্ডিয়ানে লেখক জন ফুট মন্তব্য করেছেন, আমরা আগেও এক ট্রাম্পকে দেখেছি। তিনি হলেন সিলভিও বার্লুসকোনি। পত্রিকাটির আরও দুইজন কলামিস্ট জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে ট্রাম্পের অবস্থান ও হিলারিকে তার ‘কদর্য মহিলা’ হিসেবে আখ্যা দেওয়ার সমালোচনা করেছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের গণমাধ্যমেও দেখা গেছে কই চিত্র। অনেক পত্রিকা মনে করছে হিলারি ক্লিনটন তার প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে স্পষ্টতই এগিয়ে আছেন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল বায়ান পত্রিকা বলছে, ‘ট্রাম্পকে ছাড়িয়ে গেছেন হিলারি’। লিবিয়ান সংবাদ ভিত্তিক ওয়েবসাইট আল মোস্তাকবালের রায় Ñ ‘নির্বাচনের তিন সপ্তাহ বাকি থাকতেই এগিয়ে হিলারি’।  লেবাননের আল নাহার পত্রিকায় হেশাম মেলহমের মন্তব্য কলামে ট্রাম্পের ‘ভিত্তিহীন’ অভিযোগ নিয়ে আলোকপাত করা হয়। হেশাম বলেন, ‘ট্রাম্প নিজেকে হারার জন্য প্রস্তুত করছেন। ডেমোক্রেটদের ভয় দেখাচ্ছেন। যারা ভোট দিতে যাচ্ছেন তাদের নিরস্ত করতে উত্তেজনার পরিবেশ ছড়াতে চাইছেন।’ ইসরাইলের পত্রিকা য়িসরায়েল হায়োমে লিখেছেন বোয়াজ বিসমাথ। তার ভাষ্য: ‘এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, হোয়াইট হাউজে যাওয়ার পথ হিলারির জন্য অধিকতর মসৃন।’ তবে ইসরাইলি বামধারার পত্রিকা হারেৎজের বিশ্লেষণীতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, ট্রাম্প নির্বাচনে গোহারা হারলেও, ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। কালিমা তৈরি হয়ে গেছে। উদারনৈতিক গণতন্ত্র হুমকির মুখে।
রাশিয়ান ব্যবসা সংক্রান্ত চ্যানেল আরবিসি টিভি বলছে, আবারও বিতর্কে জিতলেন হিলারি। একই মত দিয়েছে দেশটির সংবাদ ভিত্তিক ওয়েবসাইট গেজেটা ডট আরইউ। ওয়েবসাইটটি লিখেছে, ‘হিলারি লৌহসম আত্মসংযম দেখিয়েছেন। আর ট্রাম্প তার সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি চুপ ছিলেন বেশি, আক্রমণ করেছেন কম।’ ক্রেমলিনপন্থী ব্যবসা সংক্রান্ত ওয়েবসাইট এক্সপার্ট অনলাইন মনে করে, বিতর্ক হয়েছে সমানে সমান। ওয়েবসাইটটি বলছে, ‘বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে হিলারি ট্রাম্পকে হারিয়ে দেবেন। কিন্তু ট্রাম্প সামাজিক নেটওয়ার্কে নিশ্চিতভাবেই জিতে চলেছেন।’ টিভি চ্যানেল রোসিয়া ২৪ বলছে, ‘আমেরিকার বিরুদ্ধে সাইবার হামলা চালানোর অভিযোগে রাশিয়াকে বিদ্ধ করতে ৩০ মিনিট সময়ও নেননি হিলারি।’
চীনের গ্লোবাল টাইমস পত্রিকা বলছে, দুই প্রার্থীর এই চূড়ান্ত মোকাবিলা দেখে মনে হয়েছে, এটি বিতর্ক নয়, বরং মল্লযুদ্ধ। হংকং-এর সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এর সম্পাদকীয়র শিরোনাম ছিল: নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ট্রাম্পের বিপজ্জনক কথাবার্তা। নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের কলামিস্ট টবি ম্যানহায়ার ও ব্যারি সোপারের কলামেও ছিল একই উদ্বেগের ছাপ। তবে হিলারির এগিয়ে থাকা নিয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্স হেরাল্ড পত্রিকার কলামিস্ট প্যাট্রিসিও নাভিয়া। দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম প্রখ্যাত ইংরেজিভাষী পত্রিকাটিতে তিনি লিখেছেন, হিলারি হয়তো সীমান্তে দেওয়াল নির্মান করবেন না। কিন্তু তার নীতিতে সংরক্ষনবাদের ছাপ বেশি। কানাডার টরেন্টো স্টারের সম্পাদকীয়র শিরোনাম ছিল: ‘অসম্মানের চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করেছেন ট্রাম্প’।
পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘নির্বাচনের বাকি এখনও ২০ দিনের মতো। কিন্তু এখনই দেশটিতে এমন চিড় ধরেছে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি।’ এ জন্য পত্রিকাটি ট্রাম্পকেই দায়ী করছে বেশি। বাংলাদেশের দ্য ডেইলি স্টারে কলামিস্ট শাহ হুসেন ইমাম লিখেছেন, ‘দিনের শেষে, তিনটি বিতর্কেই হেরেছেন ট্রাম্প। এর ফলে তিনি এমন প্যাঁচে পড়েছেন যা থেকে নিজের ভাগ্য ফেরানোটা অসম্ভবের কাছাকাছি।’ ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকার সম্পাদকীয়র শিরোনাম ছিল: তিক্ত সমাপ্তির দিকে বিতর্ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *