নেতাকর্মীতে মুখর রাজধানী

Slider রাজনীতি

file

 

ঢাকা; আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে ২২ ও ২৩শে অক্টোবর। তবে, এরই মধ্যে রাজধানীতে আসতে শুরু করেছেন সারা দেশের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। ফলে, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠেছে রাজধানী। বিশেষ করে সম্মেলনস্থল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেছে কেন্দ্রীয়, মহানগর ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মিলনমেলা। সম্মেলনের আর একদিন বাকি থাকলেও রাজধানীর বাইরে থেকে আসা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখনই ভিড় করছেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ দলের কেন্দ্রীয় ও ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে। কুশল বিনিময়সহ দিকনির্দেশনা নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাকর্মীদের কাছ থেকে। কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলন এর আগেও হয়েছে। কিন্তু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে এতটা জাগরণ ও আলোড়ন হয়নি। এদিকে সারা দেশ থেকে আসা হাজার নেতাকর্মীদের রাত যাপনের একমাত্র উপায় রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এরই মধ্যে হোটেলগুলোর প্রায় সব রুম বুকিং হয়ে গেছে। যেগুলো বাকি আছে আজকের মধ্যে তাও বুকিং হয়ে যাবে বলে জানান হোটেল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ১৯শে অক্টোবর (গতকাল) থেকে সম্মেলনের শেষ দিন পর্যন্ত (২৩শে অক্টোবর) প্রায় সব রুম আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বরাদ্দ দিয়ে দেয়া হয়েছে। যারা আগে এসে রুম বুকিং দিয়েছিলেন তারা তা পেলেও অনেকেই রুম না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। বিকল্প চিন্তা করছেন। কেউ কেউ আত্মীয়দের বাসায় ওঠছেন। গতকাল রাজধানীর ফার্মগেট, পল্টন, গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু এভিনিউসহ বিভিন্ন এলাকার হোটেলগুলোতে খোঁজ নিয়ে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নেতাকর্মী ও হোটেল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ২২ ও ২৩শে অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। ইতিমধ্যে সম্মেলনের প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, এবারের সম্মেলনে সারা দেশের ১৩,১৪০ জন কাউন্সিলর ও ডেলিগেট অংশ নেবেন। এর মধ্যে ৬,৫৭০ জন কাউন্সিলর ও সমসংখ্যক ডেলিগেট রয়েছেন। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন  জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে আসা হাজার হাজার নেতাকর্মীরাও সরব থাকবেন সম্মেলনে। রাজধানীর বেশক’টি নামকরা আবাসিক হোটেলের কর্মকর্তারা মানবজমিনকে জানান, ১৯শে অক্টোবর থেকে ২৩শে অক্টোবর পর্যন্ত তাদের হোটেলের রুমই আর খালি নেই। কোনো কোনো হোটেলে ২৪ থেকে ২৬শে অক্টোবর পর্যন্ত বরাদ্দ দেয়া আছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের অনুরোধের পরও তারা হোটেলের রুম বরাদ্দ দিতে পারছেন না। বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন হোটেল ইয়ামেনী ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার (ফিন্যান্স) মো. আনোয়ার হোসেন নির্জন মানবজমিনকে বলেন, নিকট অতীতে এর আগেও আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে। কিন্তু সারা দেশ থেকে আসা নেতাকর্মীদের পদচারণা এখনকার মতো ছিল না। হোটেলে রুম বরাদ্দের জন্যও এতটা তাগিদ ছিল না। তিনি বলেন, হোটেল ইয়ামেনীতে ডাবল ও সিঙ্গেল মিলিয়ে ৭৮টি রুম রয়েছে। অন্য সময়ে অনেক রুমই খালি থাকে। কিন্তু ইতিমধ্যে প্রত্যেকটি রুমই আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের জন্য বরাদ্দ দিয়ে দেয়া হয়েছে। আরো অনেকেই আসছেন, কিন্তু তাদেরকে বিনয়ের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে, হোটেলে কোনো রুমই খালি নেই। আগে এমনটা কখনও হয়নি। এত রুমও বুকিং হয়নি। রাজধানীর গুলিস্তান এলাকার একটি নামকরা হোটেলের একজন ব্যবস্থাপক মানবজমিনকে জানান, সম্মেলন উপলক্ষে কিশোরগঞ্জ থেকে নেতাকর্মীরা আসবেন, তাই তাদের হোটেলের ৩০টি রুম বরাদ্দ চেয়েছিলেন সেখানকার একটি নির্বাচনী এলাকার এক এমপি। কিন্তু হোটেল রুম আগে থেকেই বরাদ্দ হয়ে আছে। যে কারণে তাদের জন্য মাত্র ১০টি রুম দেয়ার কথা বলা হয়েছে। বাকিদের জন্য রাজধানীর অন্য হোটেলে রুম বুকিংয়ের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে ওই এমপিকে।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকার হোটেল রমনার একজন কর্মকর্তা জানান, আশপাশে রাজনৈতিক দলগুলোর কেন্দ্রীয় কার্যালয় রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি ও বিশেষ দিনে তাদের হোটেলে রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নেতাকর্মীরা অবস্থান করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে অনেক আগে থেকেই তাদের হোটেলের ডাবল ও সিঙ্গেল ৯৮টি রুমের বেশির ভাগই বরাদ্দ দিয়ে দেয়া হয়েছে। অতিথিদের চাপে সাধারণ মানুষরাও রুম না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। হোটেল রমনার ম্যানেজার (ফ্রন্ট অফিস) মো. রাসিদুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আমাদের হোটেলে দক্ষিণাঞ্চলের ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি জেলার নেতাকর্মীরা রুম বুকিং দিয়েছেন। এখনও অনেকেই আসছেন। কিন্তু রুম খালি না থাকলে দেব কিভাবে? জিপিও এলাকার ইম্পেরিয়াল হোটেল ইন্টারন্যাশনালের ম্যনেজার (রিসিপশন) মো. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ইম্পেরিয়ালে ডাবল, সিঙ্গেল মিলিয়ে ৪৭টির মতো রুম ছিল। কিন্তু বেশির ভাগ রুমই বুকিং হয়ে গেছে। বর্ডারদের তা বুঝিয়েও দেয়া হয়েছে।  নেতাকর্মীদের বেশির ভাগই চট্টগ্রাম থেকে আসা। ২৩শে অক্টোবর পর্যন্ত কোনো রুমই খালি নেই। পল্টন এলাকার হোটেল প্রীতম ইন্টারন্যাশনালের ম্যনেজার (রিসিপসনিস্ট) পরিমল দাস বলেন, আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আমাদের হোটেলের সব রুমই ১৯শে অক্টোবর থেকে ২৩শে অক্টোবর পর্যন্ত বুকিং হয়ে আছে। নেতাকর্মীদের প্রায় সবাই সিলেট থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, আমাদের হোটেলে অতীতে এবারের মতো অতিথিদের এত চাপ ছিল না। অতিথি বেশি থাকায় তাদের দেখভালের জন্য আমাদের কাজের চাপও বেড়ে গেছে। প্রীতম হোটেলে কথা হয় সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবারের সম্মেলন উপলক্ষে কাউন্সিলর, ডেলিগেটসহ প্রায় ২ হাজার নেতাকর্মী রাজধানীতে আসছেন। এবার আমাদের দলের সম্মেলনে নেতাকর্মী বাড়বে। তাই আগে থেকেই হোটেলে রুম বরাদ্দ নিয়েছি। হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন খান বলেন, সম্মেলন উপলক্ষে দুই দিন আগেই ঢাকা এসেছেন। উপজেলা থেকে যারা আসছেন তাদের দেখভাল করতে হবে। আজ কালের মধ্যে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা ঢাকা পৌঁছাবেন।
এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দফায় দফায় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শনে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। দেখভাল করছেন সবকিছুর। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিন্দুমাত্র ত্রুটি রাখতে চান না তারা। পাশাপাশি সারা দেশ থেকে আসা নেতাকর্মীরা যেন কোনো ধরনের দুর্ভোগের শিকার না হন সেদিকটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন দায়িত্ব পাওয়া নেতারা। অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও দফায় দফায় পরিদর্শন করা হচ্ছে সম্মেলনের স্থান। নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে সার্বিক নিরাপত্তার। গতকাল সরজমিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা গেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের তৎপরতা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে তরুণ নেতারাও। বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা আর উৎসবমুখর পরিবেশে দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে বলে মনে করছেন তারা। এরইমধ্যে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে। সম্মেলনের মূল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে নৌকার আদলে। পুরো উদ্যান ও এর আশেপাশের এলাকায় আলোকসজ্জার ব?্যবস্থা করা হয়েছে। এবারের সম্মেলনের স্লোগান ঠিক হয়েছে- ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’। মঞ্চের সামনে বিদেশি অতিথিদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার পেছনে অতিথি, কাউন্সিলর ও পর্যবেক্ষক মিলিয়ে ২০ হাজার জনের ব?্যবস্থা থাকছে। মঞ্চের দু’পাশে আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির নেতাদের দলীয় পতাকা উড়ানোর জন?্য ৭৮টি স্ট?্যান্ড রাখা হয়েছে। উদ্যানে ঢোকার ছয়টি প্রবেশপথও সাজানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনার ছবি শোভা পাচ্ছে উদ্যানে প্রবেশের পথ থেকে মঞ্চ পর্যন্ত। শিশু পার্কের পাশের ফটকটিতে বড় তোরণ তৈরি হয়েছে। এই ফটক দিয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সম্মেলনস্থলে প্রবেশ করবেন। বিদেশি অতিথিরাও এই ফটক ব্যবহার করবেন। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের ফটকটি রাখা হয়েছে ভিআইপি অতিথিদের জন?্য। আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, সম্মেলনে ১২টি দেশের ৫৬ জন বিদেশি অতিথি অংশ নেবেন। এর মধ্যে বেশির ভাগ প্রতিনিধিই চীন ও ভারতের। এই দুই দেশের প্রতিনিধিদের বক্তৃতা দেয়ারও সুযোগ দেয়া হবে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিও থাকবেন সম্মেলনে। এদিকে গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের প্রস্তুতি ঘুরে দেখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী  সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আগামী দিনের আওয়ামী লীগ পরিচালনার জন্য দলটির ২০তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে একটি দক্ষ নেতৃত্ব আসবে। অতীতের মতো এবারও একটি উৎসবমুখর পরিবেশে সম্মেলন হবে। আওয়ামী লীগ যখন যে সিদ্ধান্ত নেয়, তা বাস্তবে পরিণত করে। দেশ পরিচালনায় আমাদের যে অঙ্গীকার, তা এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার ও সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *