সেমিনারে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আপনারা অনেকে জানেন, কদিন আগে আমি খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলাম। সেখানে বলেছিলাম, আমি কোনো দিন প্রেম করিনি। আমার প্রেম হচ্ছে বঙ্গবন্ধু, আমার প্রেম হচ্ছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুকে যা-তা বলবেন, আর আমি পাশে বসে আঙুল চুষব! আমি আগাগোড়া কখনো আঙুল চোষা মানুষ ছিলাম না। আমার স্ত্রীর ফ্যামিলিরা আঙুল চোষে, কিন্তু আমি ও আমার পরিবার আঙুল চোষার লোক না। সেদিন বলে এসেছিলাম, জামায়াতের সঙ্গে স্বর্গেও যাব না।’
খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের আগের দিন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদকে নিয়ে জামায়াতের ইসলামীর একটি প্রতিক্রিয়ার ঘটনার উল্লেখ করেন কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘৩ তারিখে (৩ আগস্ট) জামায়াত একটি রিঅ্যাকশন দিয়েছিল। তারা বলেছিল, অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বিএনপির কেউ নন। তাঁর মতামত (২০-দলীয় জোট সম্পর্কে) দেওয়ার কোনো এখতিয়ার নেই এবং তারা এর নিন্দাও করেছিল। আমি ভেবেছিলাম, ৪ তারিখের আলোচনায় যাব না। তারপরও আমি গিয়েছিলাম তাদের (বিএনপির) অনেক অনুরোধে। গিয়েছিলাম ফখরুল ইসলামকে রক্ষা করার জন্য।’
সেমিনারে কাদের সিদ্দিকী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকার সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বলেন, ভারতের একজন মন্ত্রী সেদিন বলেছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন করে আওয়ামী লীগের হাতে তুলে দিয়ে গেছেন। ঔদ্ধত্যের একটা সীমা আছে।
শ্লেষ প্রকাশ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘ব্রিটিশ চলে যাওয়ার পর ভারত যুদ্ধ করেছে পাকিস্তানের সঙ্গে। কিন্তু তাদের কোনো যুদ্ধে বিজয়ের নিশানা নেই। তারা বিজয়ী হয়নি। তাই বলে কি পাকিস্তান জয়ী হয়েছে? আমি বলব, পাকিস্তানও জয়ী হয়নি, সিজ ফায়ার হয়েছে। রেফারি বাঁশি বাজিয়ে খেলা বন্ধ করেছে।’
বীর উত্তম খেতাব পাওয়া কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ না হলে, আমাদের রক্ত আমরা না ঢাললে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ভারতের যে উন্নতি হয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে যে সম্মান হয়েছে, তার ১০০ ভাগের ১০ ভাগও হতো না। ভারত যদি আগামী ১০০ বছর আমাদের ১৬ কোটি বাঙালির পা ধুয়ে ধুয়ে পানি খায়, তবু ঋণ শোধ হবে না।’
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী দাবি করেন, ‘ভারতের আজকের এই অগ্রগতি-উন্নতির চাবিকাঠি হচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ না হলে ভারতের এ অবস্থান পৃথিবীর দরবারে হতো না। পাকিস্তান না হলে আমরা বাংলাদেশ হতাম না। ঠিক তেমনি মুক্তিযুদ্ধ না হলে বাংলাদেশ হতো না। আর তা না হলে ভারতের আজকে পৃথিবীর কাছে এত উন্নতি দেখানোর কোনো সুযোগ হতো না।’
শত নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী, সহ-উপাচার্য আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, শত নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব কবি আবদুল হাই সিদকার প্রমুখ।