ক্ষমতা দখলকারী রাষ্ট্রপতিরা অবসর ভাতা পাবেন না

Slider টপ নিউজ

3652efca682dc7cc04d247a2076b3e82-untitled-3

ঢাকা; অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা দখলকারীদের অবসর ভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার পথ বন্ধ করার বিধান রেখে সংসদে রাষ্ট্রপতির অবসর ভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধা বিল ২০১৬ পাস হয়েছে। সংসদকাজে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বিলটি পাসের জন্য উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

বিলটি আইনে পরিণত হলে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং এইচ এম এরশাদসহ আরও কয়েকজন রাষ্ট্রপতি এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। যদিও জিয়া ও এরশাদের পরিবার রাষ্ট্রপতি হিসেবে অবসর ভাতা নেয় না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবার কখনো পেনশন নেয়নি। কারণ, ওই আইনটিই হয়েছিল ১৯৭৯ সালে। তবে নতুন আইন পাস হলে বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকারীরা তা পাবেন।

জাতীয় পার্টির একাধিক সদস্য বিলটির ওপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব দিলে তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়। বিলটির বিষয়ে জাতীয় পার্টির সদস্যরা বলেন, তাঁদের নেতা এইচ এম এরশাদকে বঞ্চিত করতে এই বিলটি আনা হয়েছে।

গত বছরের ৯ নভেম্বর বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর তা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। বিলটি পাসের ফলে ১৯৭৯ সালের ‘প্রেসিডেন্টস পেনশন অর্ডিনেন্স’ বাতিল হয়ে যাবে।

২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্ট যেকোনো ধরনের সামরিক শাসনকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী বাতিল এবং সামরিক শাসনামলের জারি করা অধ্যাদেশগুলোকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন। তবে প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশগুলোকে আইনে পরিণত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

বিলে বলা হয়েছে, অসাংবিধানিক পন্থায় বা অবৈধ উপায়ে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন বা হয়েছিলেন বলে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক ঘোষিত হলে তিনি অবসর ভাতা পাবেন না। একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি মূল বেতনের ৭৫ শতাংশ হারে অবসর ভাতা পাবেন। যদি কোনো রাষ্ট্রপতি নৈতিক স্খলন বা অন্য কোনো অপরাধে আদালতে দণ্ডিত হন, তাহলে অবসর ভাতা পাবেন না। একই সঙ্গে দায়িত্ব পালন শেষে তিনি যদি এমন কোনো দপ্তর, আসনে বা মর্যাদার দায়িত্ব পালন করেন, যার জন্য তিনি সংযুক্ত তহবিল থেকে বেতন বা অন্য কোনো সুবিধা পান, তবে তিনি অবসর ভাতা পাবেন না। অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতিরা একজন ব্যক্তিগত সহকারী ও একজন অ্যাটেনডেন্ট এবং দাপ্তরিক ব্যয় পরিচালনার খরচ পাবেন। এ ছাড়া তিনি একজন মন্ত্রীর প্রাপ্য চিকিৎসাসুবিধা, সরকারি অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য বিনা মূল্যে যানবাহন ব্যবহার, বাড়িতে টেলিফোন, কূটনৈতিক পাসপোর্ট এবং দেশের ভেতরে সরকারি সার্কিট হাউস বা রেস্ট হাউসে বিনা ভাড়ায় থাকতে পারবেন।

বিলটির ওপর আলোচনায় জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, ‘জেনারেল জিয়া ও আমাদের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ যেভাবে ক্ষমতায় এসেছেন; সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনের পর আর এভাবে ক্ষমতায় আসার সুযোগ নেই। কিন্তু একজন ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে আইন করা ঠিক হবে না। শুধু এরশাদকে লক্ষ্য করে, এক ব্যক্তির জন্য আইন করা ঠিক নয়। আমরা তিনবার ক্ষমতায় এসেছি, মহাজোটেও আছি।’

একই দলের কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, আদালতের রায়ে ১৯৮৬ সাল থেকে এরশাদের শাসনামলকে বৈধতা দিয়েছে। এরপরও তাঁর সুবিধাদি কেড়ে নেওয়া ঠিক হবে না। বিষয়টি আইনি এবং আইনের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্ট শেষ করেছেন। এটা তাঁর জন্য প্রযোজ্য হবে না।

নুরুল ইসলাম বলেন, কেউ যদি ছয় মাসের জন্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন, তিনি ভাতাসহ সুবিধাদি পাবেন। ’৮৬ সাল থেকে নিয়মানুযায়ী নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি এরশাদ। সে ক্ষেত্রে তিনিও আদালতের রায় অনুযায়ী আনুতোষিক ভাতাসহ সব সুবিধা পাবেন।

জবাবে মতিয়া চৌধুরী জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, নিজেরাই কেন নিজেদের দুর্বলতার দিক টেনে আনলেন। বিলে তো কারও নাম লেখা নেই। নিজেরাই প্রকারান্তরে স্বীকার করলেন যে জেনারেল এরশাদ মার্শাল ল দিয়ে রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। চুপ করে থাকলেই তো হতো। যার মনে যা লাফ দিয়ে ওঠে তা।

এ সময় ফখরুল ইমাম বলেন, বিলে বলা হয়েছে একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি দেশের ভেতরে ভ্রমণের সময় সরকারি সার্কিট হাউস বা রেস্ট হাউসে বিনা ভাড়ায় অবস্থান করবেন। কিন্তু খাওয়ার বিল কে দেবে? সেটা এখানে বলা নেই। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতির খাওয়ার বিল ডিসির এলআর ফান্ড থেকে দেওয়ার প্রস্তাব করেন।

জবাবে মতিয়া চৌধুরী বলেন, এলআর ফান্ড কোথা থেকে আসে? জনগণের পকেট থেকে আসে। ব্যবসায়ীদের ডাকলে কাঁপতে কাঁপতে চলে আসে। চাঁদাবাজি থেকে আসে। নিজের পকেটে একটু হাত দেন। ফাউ খাওয়ার টেনডেন্সি বন্ধ করা উচিত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকদের এলআর ফান্ড গঠন ও এর ব্যবহার বিষয়ে অর্থ বিভাগের কোনো অনুমোদন নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *