৮ ভারতীয় সেনা নিহতের দাবি পাকিস্তানের, নয়াদিল্লির নাকচ

Slider ফুলজান বিবির বাংলা সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী সারাদেশ

dbdd8b56311f3cde515f83e182782e21-untitled-21

ঢাকা; পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জঙ্গি আস্তানায় ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দাবি করেছে ভারত। গতকাল বৃহস্পতিবার ভারত বলেছে, ভারতে ঢুকে হামলার প্রস্তুতি নেওয়া সন্দেহভাজন জঙ্গিদের ওপর এ হামলা চালিয়েছে তারা।
ভারতের ‘আক্রমণ রুখতে’ গিয়ে দুজন সেনা নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করলেও পাকিস্তান তাদের ভূখণ্ডে ভারতীয় হানার কথা অস্বীকার করেছে।
গতকাল রাতে নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে পাকিস্তানের ডন পত্রিকার খবরে বলা হয়, নিয়ন্ত্রণরেখায় ওই ঘটনার সময় কমপক্ষে আট ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন। পাকিস্তানি বাহিনীর গুলির ভয়ে তাঁদের মৃতদেহও উদ্ধারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি ভারতীয় বাহিনী। এ ছাড়া এক ভারতীয় সেনাকে আটক করা হয়েছে।
তবে পাকিস্তানের এ দাবি নাকচ করেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেনা সূত্রের বরাত দিয়ে পিটিআইয়ের খবরে বলা হয়, পাকিস্তানি গণমাধ্যমের একটি অংশ ভারতীয় সেনা নিহত ও আটকের যে খবর দিচ্ছে, তা পুরোপুরি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
কিন্তু ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র রয়টার্সকে বলে, ‘৩৭ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের এক সদস্যকে যে পাকিস্তানি পক্ষ অস্ত্রসহ আটক করেছে এ খবর নিশ্চিত।’
দুই পক্ষের দাবির সত্যতা কোনো নিরপেক্ষ সূত্র থেকে যাচাই করা যায়নি। তবে এ হামলা পরমাণু শক্তিধর দুই বৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে নতুন করে কোনো সংঘাতের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে উরির সেনাছাউনিতে ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলায় ১৮ জন ভারতীয় সেনাসদস্য নিহত হন। এ হামলায় পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। উরির হামলার পর প্রথম কোনো সামরিক অভিযান পরিচালনা করল ভারত।
ভারতের সেনাবাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশন (ডিজিএমও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রণবীর সিং গতকাল বলেন, গত বুধবার মধ্যরাতে এই হামলা করে ভারত। তিনি বলেন, ‘কয়েকটি জঙ্গিগোষ্ঠী সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে ঢুকে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সুনির্দিষ্ট ও যথাযথ তথ্যের ভিত্তিতেই এ হামলা করা হয়।’ তিনি বলেন, বুধবার মধ্যরাতে শুরু হওয়া এ হামলা শেষ হয় বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটায়। রণবীর সিং বলেন, তিনি পাকিস্তানের ডিজিএমওকে এ হামলার বিষয়টি জানিয়েছিলেন।
তবে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ভারতীয় এ দাবিকে ‘একেবারে ভিত্তিহীন ও সর্বৈব মিথ্যা’ বলে আখ্যায়িত করেন। মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম বাজওয়া বলেছেন, দুই ডিজিএমওর মধ্যে দুই দেশের সীমান্তে গুলিবিনিময়ের বিষয়ে কথা হয়েছে। বিদ্যমান আইনের পরিপ্রেক্ষিতেই এ ধরনের যোগাযোগ হয়েছে। আসিম বাজওয়া পাকিস্তানের টেলিভিশন চ্যানেল জিয়ো টিভিকে বলেন, ‘ভারতের দাবি আমরা প্রত্যাখ্যান করি। আমাদের ভূখণ্ডে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। গত রাতে গোলাগুলি হয়েছে। আমরা এর জবাব দিয়েছি।’
পাকিস্তানের মাটিতে হামলা চালানোর ঘটনা প্রকাশকে নজিরবিহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন নয়াদিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্টের অজয় সাহানি। তিনি বলেন, এ হামলার মধ্য দিয়ে ভারত সরকার নিজ দেশের মানুষ এবং আন্তর্জাতিক মহলকেও বার্তা দিতে চেয়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরও সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিতে ভারত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন চায়। পাশাপাশি এ ধরনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নিতে তিনি যে সক্ষম, তা প্রমাণের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ওপরও ব্যাপক চাপ রয়েছে।
যে সময়ে এ হামলা হলো, তা পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল রাহিল শরিফের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে শিগগিরই। তাঁর স্থলাভিষিক্ত কে হবেন এখনো সেই ঘোষণা দেননি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। নওয়াজ শরিফ এ হামলাকে ‘বিনা প্ররোচনায় নগ্ন’ হামলা বলে আখ্যায়িত করেছেন। পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে তিনি আজ শুক্রবার মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন।
গতকাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা-সংক্রান্ত কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপরই ভারতের পক্ষ থেকে হামলার কথা জানানো হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভারতীয় এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যে আমাদের যা করার দরকার ছিল তা-ই হয়েছে। বিশ্বকে এটি জানান দেওয়া দরকার, এখন সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
পাকিস্তানে প্রবেশ করে ভারতীয় হামলার খবর প্রকাশের আগে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইস। হোয়াইট হাউস এ কথা জানায়। রাইস সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে আরও নিবিড় সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ভিমবার, হটস্প্রিং, কেল ও লিপা এলাকায় গতকাল ছয় ঘণ্টা ধরে গোলাগুলি হয় বলে জানায় পাকিস্তান। কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেন, নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে পাকিস্তানের দিক থেকে গোলা নিক্ষেপ করা হয়েছে। গতকাল দিন পর্যন্ত এটি চলে। তবে এতে ভারতের কোনো ক্ষয়ক্ষতির কথা জানানো হয়নি।
ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই পুরো কাশ্মীর নিজেদের বলে দাবি করে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানে স্বাধীন হওয়ার পর দুটি দেশ এ পর্যন্ত তিনটি যুদ্ধে জড়ায়। এর মধ্যে দুটিই হয় কাশ্মীর নিয়ে।
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গত জুলাইয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বুরহান ওয়ানি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার পর সেখানে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। এর মধ্যেই ১৮ সেপ্টেম্বরের উরি হামলা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে। ভারত এ হামলায় পাকিস্তানকে দায়ী করে দেশটির ওপর ব্যাপক চাপ প্রয়োগ শুরু করে। সদ্য শেষ হওয়া জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে পাকিস্তানকে একঘরে করার দাবি করে তারা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স এ হামলার নিন্দা জানায়। নিরাপত্তা পরিষদের আরেক স্থায়ী রাষ্ট্র ও পাকিস্তানের বন্ধু হিসেবে পরিচিত চীন দুই দেশের মধ্যে আলোচনার তাগিদ দেয়। এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে গত বুধবার ভারত, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় সার্ক সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *