বিএনপির শেষ শ্রদ্ধা, জানাজায় নেতাকর্মীদের ঢল

Slider ফুলজান বিবির বাংলা রাজনীতি

14516540_844925895644164_9028852283740511541_n

 

ঢাকা; দলের নীতি নির্ধারনী ফোরামের সদস্য ও রাজনৈতিক দুঃসময়ের সাহসী কণ্ঠস্বর প্রয়াত হান্নান শাহকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিএনপি। নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত জানাজায় বিপুল উপস্থিতি, ফুলেল শ্রদ্ধা আর অশ্রুসিক্ত চোখে স্মৃতিচারণ আর দলীয় পতাকায় কফিন ঢেকে দেয়ার মাধ্যমে প্রিয় নেতার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। হান্নান শাহর জানাজায় অংশ নিতে  সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও হান্নান শাহর শুভাকাক্সক্ষীরা জড়ো হতে থাকেন নয়াপল্টনে। দুপুর পৌনে একটায় হান্নান শাহর কফিন এসে পৌঁছায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে। এ সময় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ওঠে কান্নার রোল। সেখানে সড়কে কালো কাপড় দিয়ে তৈরি অস্থায়ী একটি মঞ্চে রাখা হয় দলের নীতি নির্ধারক ফোরামের প্রয়াত এ সদস্যের কফিন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা দলীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে দেন হান্নান শাহর কফিন। এরপর দলের  পক্ষে মহাসচিব মির্জা আলমগীর, ঢাকা মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে মির্জা আব্বাসসহ সিনিয়র নেতারা প্রথমে ফুল দিয়ে তাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। তারপর পর্যায়ক্রমে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দল, তাঁতীদল, মৎস্যজীবী, মুক্তিযোদ্ধা দল, ড্যাব, জাসাস, তৃণমূল দলসহ প্রতিটি অঙ্গদল ও জোটের শরিক দলের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জানাজার আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের নীতি নির্ধারক ফোরামের সদস্য মরহুম হান্নান শাহের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তিনি শুধু একজন সৈনিক ছিলেন না, তিনি সত্যিকার অর্থে একজন গণতন্ত্রের সৈনিক ছিলেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার ভূমিকা চিরকাল স্মরণীয় থাকবে। বিএনপির রাজনীতিতে তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। বিশেষ করে ওয়ান ইলেভেনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেক নেতা যখন সরকারের চাপে দলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন, ঠিক সেই সময় নিজের জীবন বিপন্ন করে বিএনপি এবং জিয়া পরিবারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি। জেল-জুলুম, হুমকি-ধামকিতেও তিনি অগণতান্ত্রিক শক্তির কাছে মাথা নত করেননি। গণতন্ত্রের সে সংকটের সময়ে; বিএনপির পক্ষে, বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। তার এই চলে যাওয়া কেবল বিএনপির রাজনীতিতে নয়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশাল এক শূন্যতা সৃষ্টি করলো। আমরা তার জন্য দোয়া চাই, আল্লাহ যেন তাকে বেহেশ্ত নসিব করেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, শনিবার বাদ আসর নয়াপল্টনের কার্যালয়ে হান্নান শাহের স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হবে। পরে জানাজায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, আহমেদ আযম খান, ডা. জাহিদ হোসেন, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, গিয়াস কাদের চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার সহ হাজার হাজার নেতা কর্মী অংশ নেন। এর আগে সকাল থেকে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে আসম হান্নান শাহের রুহের মাগফেরাত কামনা করে কোরআনখানি অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া দলের পক্ষ থেকে চারদিনের ঘোষিত শোক কর্মসূচির অংশ হিসেবে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ওদিকে সিএমএইচের হিমঘর থেকে সকালে মহাখালী ডিওএইচএসে নেয়া হয় হান্নান শাহর কফিন। সকাল ১০টায় মহাখালী ডিওএইচএস জামে মসজিদে মরহুম হান্নান শাহর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, এলডিপি সভাপতি কর্ণেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ড. ওসমান ফারুক ও মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রম, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রফেসর আনিসুজ্জামানসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা অংশ নেন। সেখানে মরহুমের ছোট ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান জানান, শনিবার বাদ মাগরিব মহাখালী ডিওএইচএসএর জামে মসজিদে হান্নান শাহর রুহে মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। পরে বেলা সাড়ে ১১টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় অনুষ্ঠিত জানাজায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সাবেক বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক, আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি জাহিদ আহসান রাসেল, সাবেক হুইপ শহীদুল হক জামাল, সাবেক এমপি এবিএম আশরাফউদ্দিন নিজান, ভিপি জয়নাল, নাজিমউদ্দিন আলম, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, আবদুল মোমিন তালুকদার খোকা, সেলিম রেজা হাবিবসহ বিভিন্ন দলের এমপি ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জানাজার পরে সেখানে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, জাতীয় সংসদের পক্ষে প্রধান হুইপ আসম ফিরোজ, বিরোধী দলীয় নেতার পক্ষে নুরুল ইসলাম, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে দলের ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, এলডিপির পক্ষে আবদুল করীম আব্বাসী ও শাহাদাত হোসেন সেলিম আলাদাভাবে ফুল দিয়ে প্রয়াত এই মন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *