নন্দিতনেত্রী ‘শেখ হাসিনা’…

Slider বাধ ভাঙ্গা মত

33372_keya

 

খুব পরিচিত একখানা ছবি। ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নং ২তলা বাড়িটির অগ্রভাগে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার চিরাচরিত ভঙ্গিতে, জনতার উদ্দেশে হাত তুলে  কোনো বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন আর বাড়ি মূল অংশের বারান্দার রেলিং ধরে, দাঁড়িয়ে আছেন এক তরুণী নারী; তিনি আর কেউ নন, আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৪৭ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেয়া শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের  জ্যেষ্ঠ কন্যা। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা তাকে আদর করে ডাকতেন ‘হাসু’। পারিবারিক গভীর বন্ধনে আনন্দঘন পরিবেশে যার বেড়ে ওঠা। এই অকুতোভয় মহীয়সী নারী, জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ সত্তর বছরে পদার্পণ করেছেন। অন্যায়, আপোষহীন ব্যতিক্রমী অগ্রণী মেধাবী ব্যক্তিত্ব। যার জীবনে সামাজিক রাজনৈতিক আন্দোলন, সংগ্রামে দৃঢ়তায় এগিয়ে যাবার সাহসী ইতিহাস রয়েছে। সদা হাস্যোজ্জ্বল প্রখরতায় দীপ্তময়-উদার এক মানুষ, শেখ হাসিনা। যিনি পার্থিব জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করে, প্রবেশ করেছেন এক বৃহৎ কর্মক্ষেত্রে। অনাড়ম্বর সহজ-সরল জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে, সকলকে সুখী করার তার রয়েছে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। যার মূল লক্ষ্য পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘স্বপ্নের সোনার বাংলা’। আজ থেকে ৩৫ বছর আগে ১৯৮১ সালের ১৭ই মে, সেবাব্রতে উৎসর্গীকৃত জীবন বোধ নিয়ে, শেখ হাসিনা ফিরে এসেছিলেন দুঃখী বাঙালির পাশে। কর্মের মধ্য দিয়ে, শেখ হাসিনা থেকে তিনি হয়ে উঠলেন দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা। কর্মচাঞ্চল্যে মুখরিত শেখ হাসিনার পথচলা কখনোই নিরাপদ ছিল না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ‘বাতিঘর’কে জিইয়ে রাখতে, কন্যা শেখ হাসিনাকে বিপদে পড়তে হয়েছে বারংবার। তারপরও থেমে যাননি তিনি। যে নেত্রী মানুষের অধিকার আদায়ের মূলমন্ত্র নিয়ে দেশে ফিরলেন; দুঃখজনক হলেও সত্য, তাকেই সবচাইতে বেশি অধিকার বঞ্চিত হতে হয়েছে। মাতা-পিতা সহ পরিবারের সকল সদস্যদের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর, নিজ পিত্রালয়ে ধানমণ্ডি ৩২ নং বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেননি। একজন মুসলমান হয়েও মিলাদ-কালাম পড়তে পারেন নি সেখানে। কারণ, জিয়াউর রহমান তখন ক্ষমতায়। ক্ষমতার মসনদে বসে বাংলাদেশকে ধ্বংসলিলায় মত্ত হয়ে উঠে জিয়া ও তার অনুসারীরা।  বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর সবচাইতে সুবিধাভোগী ব্যক্তিত্ব জিয়াউর রহমান সবার আগে, বঙ্গবন্ধুর বিচারের পথ রুদ্ধ করেন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাঁচানোর জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ প্রণয়নের  মাধ্যমে, খুনিদের বিদেশি মিশনে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেন। পরিবারের অসংখ্য স্বজন হারিয়েও শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়েও বিচার চাইতে পারেন নি।  ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করায়, একজন সাধারণ নাগরিকের মতো থানায় গিয়ে একটা জিডি করার আইনি অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন নি। বঙ্গবন্ধু তার জীবন বাজি রেখে, নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে গেলেও মুক্তির স্বাদ দিতে পারেন নি। মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তানি দোসর বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে নেয়। পাকিস্তানি দোসরদের কারাগার থেকে বের করে মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী বানায়। কিন্তু ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমাদের এই বাংলাদেশ; এই বাক্য তো শুধু বক্তব্য আর বিবৃতি দেয়ার জন্য নয়।  চেতনার শক্তিতে বাস্তবে অর্জিত স্বাধীনতা ফলপ্রসূ করার জন্য শেখ হাসিনার আদর্শিক রাজনীতি। তাই ১৯৮১ সালের ১৭ই মে এক নতুন অধ্যায়ের শুরু হলো। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠলেন বাঙালি জাতি। বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার ভরসার প্রতীক শেখ হাসিনা। তার বিপরীতে যারা গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে না, মানুষের অধিকারে বিশ্বাস করে না, অসামপ্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চায় না,  সেই অপশক্তির কোপানলে পড়েন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা। আক্রমণের লক্ষবস্তু হয়ে, তার ওপর হামলা করা হয় ১৯ বার। সর্বশেষ, ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায়  শেখ হাসিনাকে হত্যা করার পৈশাচিকতার দৃষ্টান্ত হিসেবে রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত কলঙ্কিত এক অধ্যায়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি ‘সুখী-সমৃৃদ্ধ বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর কন্যা এগিয়ে যাচ্ছেন। আর এই এগিয়ে যাবার পথে, সকল চ্যালেঞ্জ গ্রহণে বাংলার আপামর জনসাধারণ তাকে শক্তি যুগিয়ে চলেছে। ৭০ বছর বয়সেও  জননেত্রী শেখ হাসিনা, তার প্রতিটি মুহূর্ত বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ৫০ লাখ মানুষের কাছে ১০ টাকা দরে ৩০ কেজি চাল তুলে দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। এক সময়ের মঙ্গাপীড়িত এলাকা কুড়িগ্রামের বাসিন্দা জুলেখা হাসিমাখা মুখের বয়ান, ‘শেখের বেটি ১০ টেকা দরে আমাদের চাউল দিতেছে’।  ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্য দিয়ে ৩০ পদের ওষুধ পাঠানো হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণের  দোরগোড়ায়। মাতৃমৃত্যু হার, শিশুমৃত্যু হার কমানোর পাশাপাশি, গৃহহীন মানুষ সরকারিভাবে ঘর পাচ্ছে।  কর্মহীন মানুষ প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে নিজেরাই কর্মসংস্থান গড়ছে। অসম শিক্ষানীতির পরিবর্তে, সকলের জন্য সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থায় বিনা পয়সায়, গত ৮ বছরে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হচ্ছে। সরকারের কর্মকাণ্ডের বহুমুখী উন্নয়নে, বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়ে ৪৬৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ৭০ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে এসেছে সরকার। স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট, পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ সেতু নির্মাণ করে, এক আস্থাশীল, আশাবাদী নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন শেখ হাসিনা। জননেত্রীর  সেবা থেকে কেউ বাদ পড়ে না।  সব্যসাচী অসুস্থ কবি সৈয়দ শামসুল হককে দেখতে যেমন তিনি হাসপাতালে ছুটে যান। ঠিক তেমনিভাবে, দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েও পায়রা নদীর কূলঘেঁষা চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ‘শীর্ষেন্দু’র ডাকযোগে প্রেরিত পত্রের প্রতিউত্তর দিতে তিনি ভুলেননি। তিনি আশ্বাস দিয়ে ‘শীর্ষেন্দু’কে লিখেন, ‘পায়রা নদীর উপরে সেতু নির্মিত হবে’। এভাবেই ব্যক্তি শেখ হাসিনা, রাজনীতিক শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সর্বোপরি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এগিয়ে চলেছেন। শুধু আওয়ামী লীগের নেত্রী হয়ে নয়, সারা দেশের, সারা বিশ্বের নেত্রী হিসেবে।
নন্দিত শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছেন, তার যাত্রাপথে, পথ হারাবার শত ভয়কে অতিক্রম করে, প্রলোভন-বিভীষিকা আর প্রতারণার রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে পদদলিত করে, সুন্দর পৃথিবীতে একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায়। জয় হোক, জননেত্রী শেখ হাসিনার। তিনি দীর্ঘজীবী হোন। লাল-সবুজের নিশানা হাতে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করুন বঙ্গবন্ধুর ‘স্বপ্নের সোনার বাংলা’য়। তার ৭০তম জন্মদিনে জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন ও ফুলেল ভালোবাসা।

লেখক:
কেয়া চৌধুরী
সমাজকর্মী ও সংসদ সদস্য

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *