১৮৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৫১তম

Slider সারাদেশ

9f9bc692c6a3dbe10e1d0af97ceb2f6d-22

বৈশ্বিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো নয়। ১৮৮টি দেশের স্বাস্থ্যের ভালো থেকে খারাপ পরিস্থিতির ক্রম তালিকায় বাংলাদেশ ১৫১তম। তালিকায় মূলত আফ্রিকার দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি ভালো।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট দেশগুলোর স্বাস্থ্য পরিস্থিতির তুলনামূলক এই চিত্র তৈরি করেছে। গতকাল শনিবার প্রকাশিত এই তালিকায় দেখা গেছে, ৮৫.৫ স্কোর পেয়ে শীর্ষে আছে আইসল্যান্ড। আর ২০.৪ স্কোর পেয়ে তালিকার নিচে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র। বাংলাদেশের স্কোর ৩৮-এর সামান্য কিছু কম। ৩৩টি সূচকের ভিত্তিতে দেশগুলোর অবস্থান ঠিক করা হয়েছে। এতগুলো সূচক নিয়ে ল্যানসেট প্রথম এমন কোনো তালিকা প্রকাশ করল।
পৃথিবীর ১৩০টি দেশের ১ হাজার ৮৭০ জন বিজ্ঞানী, গবেষক ও জনস্বাস্থ্যবিদ এই বিশ্লেষণে অংশ নিয়েছেন। তাঁরা ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। এই কাজে অর্থায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।
বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসায় নীতিনির্ধারণ ও কর্মসূচি তৈরির ক্ষেত্রে ল্যানসেট-এর যথেষ্ট প্রভাব আছে। তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিষ্ঠানকে গবেষণা ও নীতি-সহায়তা দেয়।
সাময়িকীটির এই তালিকা সম্পর্কে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব রশীদ-ই-মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ রকম একটি তালিকা দেশের অবস্থান বুঝতে সহায়তা করে। তবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন পরিস্থিতি জানার জন্য এ রকম তালিকা নিয়মিত হবে বলে আশা করা যায়।’
স্বাস্থ্যসূচক নিয়ে বেশ কয়েক বছর কাজ করছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক শামস-এল-আরেফিন। তিনি বলেন, এই তালিকা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। আবার দুশ্চিন্তা করারও কিছু নেই। শুধু নজরের বাইরে ছিল এমন সূচক ও দুর্বল জায়গাগুলোতে এখন গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশের অবস্থান: কয়েক বছর ধরে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যের অগ্রগতি হচ্ছে। অবশ্য এই তালিকা বলছে, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে নেপাল (১৫৮তম) ও আফগানিস্তান (১৮০তম) ছাড়া বাকি পাঁচটি দেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়ে ভালো। আগে বলা হতো, শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সার্কের মধ্যে সবচেয়ে ভালো। কিন্তু এই তালিকা বলছে, সবচেয়ে ভালো মালদ্বীপের (৬৩তম) আর শ্রীলঙ্কার অবস্থান ৭৯তম। এরপর আছে ভুটান (১১৪তম)। বাংলাদেশের (১৫১তম) কাছাকাছি আছে পাকিস্তান (১৪৯তম)। আর সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী ভারতের অবস্থান ১৪৩তম।
এই ১৮৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ৩৭টি দেশের চেয়ে ভালো। এর মধ্যে ৩২টি দেশই আফ্রিকা মহাদেশের। বাকি ৫টি এশিয়ার।
অবস্থান নির্ণয়ের পদ্ধতি: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত ৩৩টি সূচকের ভিত্তিতে এই বৈশ্বিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে দুর্যোগ পরিস্থিতি, খর্বাকৃতি শিশুর হার, কৃশকায় শিশুর হার, অতি ওজন বা স্থূলতা, মাতৃমৃত্যুর হার, দক্ষ প্রসব সহায়তাকর্মী, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুহার, নবজাতকের মৃত্যুহার (২৮ দিন বয়সী), এইচআইভি, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, হেপাটাইটিস বি, অসংক্রামক ব্যাধি, আত্মহত্যা, মদপান, সড়ক দুর্ঘটনা, পরিবার পরিকল্পনা চাহিদা পূরণ, সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা পরিস্থিতি, বায়ুদূষণে মৃত্যু, অনিরাপদ পানি ও পয়োব্যবস্থার কারণে মৃত্যু, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, পয়োব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যবিধি (হাইজিন), পেশাগত স্বাস্থ্যঝুঁকি, যুদ্ধ। স্কোর তৈরিতে ১০০ থেকে শূন্য-এর মধ্যে এসব সূচকের মান যাচাই করা হয়েছে।
বাংলাদেশের ভালো-মন্দ
মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ শামস-এল-আরেফিন বলেন, গত কয়েক বছর বাংলাদেশের স্বাস্থ্যের অগ্রগতি তুলনা করা হয়েছে মূলত উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে। কিন্তু ল্যানসেট-এর গবেষণায় উন্নত দেশগুলোকেও তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন কিছু সূচক নেওয়া হয়েছে।
যুদ্ধসূচকে বাংলাদেশ ১০০-এর মধ্যে ১০০ পেয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে যুদ্ধ নেই, বাংলাদেশ কারও সঙ্গে যুদ্ধে জড়িতও নয়। যুদ্ধের কারণে দেশে স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না বা মৃত্যু হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সবচেয়ে কম স্কোর পেয়েছে স্বাস্থ্যবিধি সূচকে, ১০০-এর মধ্যে মাত্র ৫। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ওয়াটার এইডের পরিচালক খায়রুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন সরকারি সমীক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি ও পানির গুণগত নিম্নমান নিয়ে উদ্বেগ ছিল। কিন্তু এমডিজি বাস্তবায়নে সাফল্যের আত্মতুষ্টি এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য লাগসই কর্মসূচি গ্রহণে মনস্তাত্ত্বিক বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এসডিজির স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কর্মসূচি নিতে হবে।’
বাংলাদেশে মদপানের হার কম, তাই এই সূচকে ৯৯ পেয়েছে। এরপর স্থূলতা সূচকে, ৯৭। বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু বৈশ্বিক পরিস্থিতির তুলনায় দেশের অবস্থা ভালো নয়। এই দুটি সূচকে স্কোর যথাক্রমে ২৯ ও ৪৪।
বাংলাদেশের অবস্থান ও পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কোন গবেষণা-পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা বোঝা দরকার। তবে আমরা এমডিজি অর্জনে সাফল্য দেখিয়েছি। এসডিজির ক্ষেত্রেও তা হবে।’
তবে রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, ‘দাতাদের কথায় আমরা কিছু কাজে গুরুত্ব দিই, কিছু কাজে নজরই দিই না। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। সরকারের উচিত হবে স্বাস্থ্যনীতি নিয়ে আবার পর্যালোচনায় বসা এবং কাজের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা। তা না হলে বছরের পর বছর তালিকার নিচের দিকে থেকে যেতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *