শ্রীপুরে ডিবি পুলিশের উপর হামলার নেপথ্যে———–

Slider জাতীয় সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী

sreepurgazipur-bormy-bazar-strike-1-7

গাজীপুর;  গাজীপুর জেলার   ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। এই পুলিশ সুপারের আমলে দলমত নির্বিশেষে সকল ধরণের অপরাধীরা ভয়ে তটস্থ রয়েছেন। পুলিশ সুপারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত জেলা গোয়েন্দা শাখা(ডিবি)  কোথাও অভিযানে গেলে এলাকা কম্পমান হয়ে যায়। তুলনামুলকভাবে ডিবির ভয়েই অনেকটা আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রন হচ্ছে বলে জনমনের ধারণা। আর এই ডিবির উপর সাধারণ ও শান্তিপ্রিয় ব্যবসায়ীরা কেন, কার বা কাদের  প্ররোচনায় হামলা করলেন তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। বর্তমানে ঘটনার পর আটককৃতদের মুক্তির দাবিতে  আন্দোলন করছেন ব্যবসায়ীরা।

 

শক্তীহীন লোকদের শক্তি সঞ্চয়ে কারা উস্কানী দিলেন তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। জেলা ডিবির উপর প্রথম হামলার ঘটনা  শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজারে সংঘটিত হওয়ার পেছনে রাজনৈতিক কোন কারণ,  না পুলিশের আভ্যন্তরীন ইউনিট গুলোর মধ্যে স্বার্থসংশ্লিষ্টতার বিষয় ছিল তাও তদন্তের আওতায় রয়েছে বলে তদন্তসংস্থার সূত্রে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বরমী বাজারে ইউপি নির্বাচন থেকেই দুটি শক্তিশালী গ্রুপ সক্রিয় আছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের দুটি শক্তিশালী গ্রুপ প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে পরস্পর বিরোধী অবস্থান করছে। এই দুই গ্রপের মাঝে সালফিউরিক এসিড হিসেবে কাজ করছে বিএনপির একটি গ্রুপ। ফলে প্রায়ই ছোট খাট বিষয় নিয়ে বরমীতে উত্তেজনা দেখা দেয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুর ডিবি পুলিশ ইতোমধ্যে শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘন ঘন যাতায়াত করছে। আটকৃ করছে একাধিক অপরাধী। উদ্ধার করেছে আলামতও। তুলনামুলকভাবে গাজীপুর জেলার ৫টি উপজেলার  ৬টি থানা এলাকার মধ্যে শ্রীপুর অপরাধপ্রবন এলাকার আওতায় রয়েছে। ফলে থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশ শ্রীপুরে অধিকাংশ সময় যাতায়াত করছে।  এই অবস্থায় একাধিক অপরাধীকে আটক করতে গিয়ে অনেক নীরিহ মানুষও হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। প্রায়ই নীরিহ মানুষকে হয়রানীর অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়।  এতে শান্তিপ্রিয় মানুষের একটি ক্ষোভ ডিবির উপর রয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টারা বলছেন, অনেক রাজনৈতিক নেতা ডিবিতে আটককৃতদের ছাড়িয়ে নিতে তদ্বির করেন। অনেকে সফল হন আবার অনেকে বিফল হন।  এই নিয়েও রাজনীতিবিদদের মধ্যে ডিবির প্রতি একটি মহলের ক্ষোভ বিদ্যমান।

একটি সরকারী গোয়েন্দা সংস্থার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র জানায়,  পেশাগত অপরাধীরা অপরাধ করার আগে স্থানীয় থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেন বলে একটি মুখরোচক সমালোচনা রয়েছে। যদি তাই হয়, তবে থানা এলাকায় জেলা ডিবির ঘন ঘন অভিযান স্থানীয় থানার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা হয়। শ্রীপুরের বরমীতে ডিবি পুলিশের উপর হামলার ঘটনা তেমন কোন কিছু কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা বলছে,  হামলাকারীরা ডিবির উপর হামলা করে ডিবির টিমকে স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতি অফিসে নিয়ে যায়। সেখান থেকে শ্রীপুর থানা পুলিশ গিয়ে ডিবির টিমকে উদ্ধার করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পুলিশ সুপার বা ডিবির প্রতি মাঠ পর্যায়ে কোন কোন পুলিশ কর্মকর্তার চাপা কোন ক্ষোভ হামলাকারীদের উস্কানী দিয়ে থাকতে পারে। অথবা স্থানীয় কোন্দলের জের ধরে প্রতিপক্ষকে হয়রানী করতে বিপদে ফেলানোর জন্যও হামলাকারীদের মদদ দেয়া হয়ে থাকতে পারে।

সাধারণ মানুষের দাবী, ডিবি পুলিশের উপর হামলার  প্রকৃত কারণ উদঘাটন খুবই জরুরী। যদি ডিবির টিম কোন অনৈতিক কাজ করে থাকে তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আর যদি পুলিশের আভ্যন্তরীন কোন কারণ ঘটনার নেপথ্যে থেকে থাকে তাও উদঘাটন জরুরী। ঘটনার সষ্ঠু তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া  না হলে, ডিবি পুলিশের উপর আক্রমন অপরাধ ও অপরাধীদের  অপরাধ সংঘটনে উৎসাহিত করবে ও পুলিশ সুপারের সম্মান ও অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

প্রসঙ্গত; বৃহসপতিবার রাত ৯টার দিকে শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজারে গাজীপুর ডিবি পুলিশ অবৈধ পলিথিন উদ্ধার করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়। হামলাকারীরা ডিবির টিমকে মারধর করে স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতি অফিসে নিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে শ্রীপুর থানা পুলিশ ডিবি পুলিশকে উদ্ধার করে।  এই ঘটনায় শ্রীপুর থানায় মামলা হয়। পুলিশ ওই মামলায় ৩জনকে গ্রেফতার করে।  গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবিতে  বরমী বাজার ব্যবসায়ী সমিতি শুক্রবার সকল দোকানপাট বন্ধ রেখে প্রতিবাদ সভা করে।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *