ঢাকা; গত ২৫ মার্চ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অসমাপ্ত রেখেই দেশে ফিরতে হয়েছিল তাসকিন আহমেদকে। সেদিন ছেলের জন্য মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডে অপেক্ষায় ছিলেন বাবা আবদুর রশিদ। মুখটা তাঁর বিষণ্ন, হতাশায় মাখা। তাসকিন যখন ঘরে ফিরলেন, তাঁর মুখেও একই অভিব্যক্তি—হতাশা, ক্লান্তি আর বিষাদের ছায়া।
গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আরাফাত সানির সঙ্গে বোলিং অ্যাকশন অবৈধ হওয়ার পর ভীষণ যন্ত্রণাময় সময় কেটেছে তাসকিনের। ‘দিনটা যেমন-তেমন, রাতে ঘুম আসত না। ভীষণ টেনশন’—গত পাঁচটা মাস ছিল তাঁর এমনই উদ্বেগভরা। কখনো কখনো হতাশাও ঘিরে ধরেছে তাঁকে। তবে ভেঙে পড়েননি। পুনর্বাসনপ্রক্রিয়া চালিয়ে গেছেন একাগ্রে। স্থানীয় কোচ মাহবুবুল আলীর পরামর্শে নিজের ঘরে বসিয়েছেন ৬ ফুট আয়না, যেটির সামনে নিয়মিত অনুশীলন করেছেন।
বোলিং অ্যাকশন শুধরে আসার পর বেশির ভাগ বোলারকে প্রশ্নটা শুনতে হয়, আগের ধারটা থাকবে তো? তাসকিনকেও শুনতে হচ্ছে। তিনি অবশ্য আত্মবিশ্বাসী, ‘ধার কমে যাবে, এই কথায় আমি বিশ্বাসী নই। সবকিছু নিজের কাছে। আগের চেয়ে ভালো কিছু তো হতেও পারে।’
‘ভালো কিছু’র ইঙ্গিত মিলেছে গত কিছুদিনে তাঁর পারফরম্যান্সেই। নিজেকে শুদ্ধ করে তোলার প্রক্রিয়ার পাশাপাশি খেলেছেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। রাজ্যের চাপ সামলে ১৫ ম্যাচে ২৬ উইকেট নিয়ে হয়েছেন পেসারদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। ভালো করেছেন বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি ম্যাচেও।
গতিই তাসকিনের বোলিংয়ের মূল শক্তি। অ্যাকশন শুদ্ধ করার পর সেটি কমে যাবে না তো? তাসকিন অবশ্য আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে জানিয়েছেন, তাঁর গতি আগের চেয়ে বেড়েছে! সাদা চোখে হয়তো এটা বোঝা কঠিন। তবে বোলিং অ্যাকশন ঠিক করতে গিয়ে তাঁর গতিতে যে পরিবর্তন আনা হয়নি, কোচ মাহবুবুল আলী আগেই জানিয়েছেন, ‘ওর গতিতে পরিবর্তন আনলে তাসকিন আর তাসকিন থাকবে না। আমরা সেটি মাথায় রেখেই কাজ করেছি।’
যন্ত্রণার প্রহর কাটিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু তাসকিনের। তিনি অনেকবারই বলেছেন, ‘এই বাধাটা আমাকে দুই ধাপ ওপরেও নিয়ে যেতে পারে।’ দুঃসময় পেরিয়ে এবার তাসকিনের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা।