পিঠ খোলা ব্লাউজে ক্রিকেট শো হয় না

Slider খেলা

30700_cri

 

তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন পোস্টার গার্ল! অন্য ক্রিকেট অ্যাঙ্করদের সঙ্গে তফাত হল তাঁর স্বামী স্বয়ং ভারতীয় ড্রেসিংরুম নিবাসী। স্বামী এক ওভারে ৩২ রান দিলে, তাঁকে মায়ান্তি ল্যাঙ্গার বিনি-কেও তার ঝড় পোয়াতে হয়। কথা বললেন সায়ন আচার্য
বেঙ্গালুরু থেকে বান্দিপুরের ফার্মহাউজে ছুটি কাটাতে যাওয়ার পথেই ইন্টারভিউ দিলেন ভারতীয় ক্রিকেট অ্যাঙ্করিংয়ের লিডিং লেডি। তবে শর্ত একটাই। পাশে বসা স্বামী স্টুয়ার্ট বিনির টুইটার ট্রোলিং নিয়ে কোনও প্রশ্ন করা চলবে না…

• একটা অদ্ভুত কথা শুনেছি। ইন্ডিয়ান ক্রিকেটের পোস্টার গার্ল হয়েও আপনি নাকি ক্রিকেট একদম পছন্দ করেন না?

না, না, তেমন কিছু নয়। (একটু থেমে) তবে সত্যি বলতে কী, ফুটবল বেশি পছন্দ করি। ছোটবেলা থেকেই ফুটবল দেখে বড় হয়েছি, নিজেও খেলেছি। সুতরাং, আই অ্যাম মোর অফ এ ফুটবল ফ্যান। তবে, আজকাল ক্রিকেটও খুব পছন্দ করি। এখনও ডাই হার্ড ফ্যান হইনি যদিও…

• আপনি ভারতীয় ক্রিকেট অ্যাঙ্করিংয়ের  প্রধান মুখ। স্বামীর নাম স্টুয়ার্ট বিনি। শ্বশুর ১৯৮৩ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য রজার বিনি। বলছেন কী, আপনি ক্রিকেট ভক্ত নন?

(একটু হেসে) কী করি বলুন তো! ছোটবেলা থেকেই ফুটবল ভাল লাগত, পরে যখন অ্যাঙ্করিংয়ে এলাম, তখনও সেই ফুটবল শো-ই পেলাম। তবে আজকাল কিন্তু আমি ক্রিকেটটা বেশ ভাল বুঝি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাঠে বসে বুঝেছি কী ভাবে কী হয়।

• আর বাড়ির দুই টেস্ট ক্রিকেটারের কোনও টিপস?

কোনও টিপস নিই না ওদের কাছ থেকে। বাড়িতে তো আমরা ক্রিকেট নিয়ে আলোচনাই করি না। আর অ্যাঙ্করিংটা আমি নিজেই জানি যখন, তখন ওদের কথা শোনার কোনও মানেই হয় না। বাড়ির দুই ক্রিকেটারের কাছে গেলেই তো জ্ঞান দেবে।  মাঝে মধ্যে হয়তো ইয়ার্কিও মারবে আমাকে নিয়ে। আরে ভাই, আমার কাজ আমি বুঝে নেব। অ্যাঙ্করিংয়ে আমারও তো দশ বছর হয়ে গেল নাকি!• দশ বছর আগে যখন এই পেশায় এলেন, তখন বাজার কাঁপাচ্ছেন মন্দিরা বেদী। লোকে তো বলে আজকাল আপনি তাঁর জনপ্রিয়তাকেও পাল্লা দিচ্ছেন…

তাই নাকি? কিন্তু, আমার মনে হয় না সে রকম কিছু হয়েছে। আমি জাস্ট আমার কাজ করছি।

• একটু বেশি বিনয় হয়ে গেল না? আগে মন্দিরার ফ্যাশন স্টেটমেন্ট নিয়ে লোকজন কথা বলত।  আপনি তো বিনা ফ্যাশনে টকিং পয়েন্ট…

(একটু হেসে) দেখুন, মন্দিরা না থাকলে ওই বেঞ্চ মার্কটাই বোধহয় তৈরি হত না। আমরা অনেকেই হয়তো এই পেশায় আসতাম না। কিন্তু এটাও মানতে হবে যে টিভিতে শো করলেই খুব সাজতে হবে, এই ধারণাটা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। আজকাল আর সুন্দর শাড়ি বা পিঠ খোলা ব্লাউজে দর্শককে ইনফ্লুয়েন্স করা যায় না। দশ বছর আগে পর্দায় লুকিং গুড ওয়াজ ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট। এখন আর তা নেই। শুধু সুন্দরী হলেই, ভাল ক্রিকেট অ্যাঙ্কর হওয়া যায় না—সবাই বুঝেছে এটা।

• এই বাজারে মন্দিরা বেদী-রা কামব্যাক করলে কি প্রথমে বলেই বোল্ড হতেন না?

সেটা কী করে বলব। (একটু থেমে) আরে ভাই, তোমাকে তো আল্টিমেটলি খেলাটা নিয়েই বকবক করতে হবে। তুমি কত ভাল সাজলে, কিংবা কী ড্রেস পড়লে, সেটা নিয়ে কেউ বদার্ড নয়। অফিস থেকে ফিরে লোকে ক্রিকেট নিয়ে আড্ডা দিতে চায়, তোমাকে সেটাই করতে হবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তুমি লাউড মেকআপ নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলে অথচ খেলার কিছুই বোঝো না, তাতে কী হবে? খেলার মাঠে খোলামেলা পোশাক বা শরীর দেখিয়ে লাভ নেই।

• টেস্ট ক্রিকেট পছন্দ করেন? না টি২০?

কেন বলুন তো?

• উত্তরগুলো কী রকম যেন টেস্ট ক্রিকেটের মতো লাগছে। প্রথম বল থেকেই মেপে খেলছেন…

(হেসে) সবই তো সত্যি, ভাই। আমি কিন্তু মোটেও কনজারভেটিভ নই। বরং সব দিক দিয়েই আধুনিক হওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু যখন দরকার নেই, তখন খামোকা শরীর দেখাতে যাব কেন? আমার মনে হয়, এই বাজারে কনটেন্ট ইজ দ্য কিং। (একটু থেমে) আর শুনুন, আমার সব ফর্ম্যাটের ক্রিকেটই ভাল লাগে। তবে অ্যাঙ্করিং-য়ের দিক থেকে, টি ২০ ইজ দ্য ইজিয়েস্ট…

• ক্রিকেটাররা তো আবার উল্টো কথা বলেন। সেই দলে কিন্তু আপনার বেটার হাফও পড়েন…

(থামিয়ে দিয়ে) ওদের কারণটা ওরা বলবে। আমি না হয় আমারটা বলি। একজন অ্যাঙ্করের কাছে টি ২০টা হল শেখার জায়গা। ২০০৭-এ টি ২০ বিশ্বকাপ যখন শুরু হল, আমি অ্যাঙ্করিং করেছিলাম। তার আগে ক্রিকেটে কাজ করিনি। প্রথমে ভীষণ নার্ভাস লেগেছিল। কিন্তু আল্টিমেটলি ওখান থেকেই শিখেছিলাম প্লেয়ারদের ভাবনাচিন্তা, স্ট্র্যাটেজি, সব কিছু। টি২০-ই তো একজন ফুটবল অ্যাঙ্করকে ক্রিকেট অ্যাঙ্কর হতে সাহায্য করেছে। এতগুলো ক্রিকেটারকে কাছ থেকে জানার সুযোগ করে দিয়েছে…

• যেমন স্টুয়ার্ট…

(হেসে) হুমম… কিন্তু শুধু ও-ই বা কেন? সকলকেই কাছ থেকে জানার সুযোগ পেয়েছি, বোঝার সুযোগ হয়েছে। তাঁদের দুঃখ, কষ্ট। তবে হ্যাঁ, স্টুয়ার্টকে বিয়ে করার পর বুঝতে পারছি যে ক্রিকেটাররা আসলে ভীষণ ইমোশনাল। একটা খারাপ ইনিংস কিংবা একটা হার কী ভীষণ আঘাত করে ওদের। এখন ওদের মেন্টালিটিটা বুঝতে পারি। আই ক্যান এমপ্যাথাইজ উইথ দেম।

• টি২০ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে  ভারতের হারের পর মহেন্দ্র সিংহ ধোনির রিঅ্যাকশন নেওয়াটা কতটা কঠিন ছিল?

ইট ওয়াজ ভেরি টাফ। একটু আগেই ওদের ওপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গেল, আর তখনই আমাকে বুম হাতে জিজ্ঞেস করতে হচ্ছে, কী করে এ রকম হল? সেই মুহূর্তে একজন বিধ্বস্ত ক্যাপ্টেনকে কিছু জিজ্ঞেস করাই উচিত নয়। কিন্তু আমার কাজই তো ওটা।  আগে অবশ্য এত কিছু বুঝতাম না, কিন্তু এখন বুঝি। যতই হোক, ক্রিকেটারের বউ তো! কিন্তু কী করি বলুন, আমাদের পেশাটাই যে এ রকম। ইউ হ্যাভ টু প্রোমোট পজিটিভিটি। নিজের দেশ টি২০ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেলেও, আমাকে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে ডোয়েন ব্র্যাভোর প্রশংসা করতে হয়েছে! আর একটা কথা বলি?

• বলুন…

আমি ম্যাচের পর স্টুয়ার্টের সঙ্গে কথা বলি না। সেই মুহূর্তে ওরা অন্য গ্রহের মানুষ, নিছকই কিছু স্টোরি সাবজেক্ট। বাস্তবে ও আমার স্বামী হতে পারে, কিন্তু সেই মুহূর্তে আমাকে নিউট্রাল থাকতেই হবে।• আচ্ছা, একটা কথা বলুন। যে দিন কাছের মানুষটা সেঞ্চুরি করেন কিংবা যে দিন তার এক ওভারে ৩২ রান দেওয়ার জন্য সমালোচনার ঝড় বয়ে যায় দেশজুড়ে, সে দিন কি আদৌ নিরপেক্ষ থাকা সম্ভব?

(একটু থেমে) মন খারাপ হোক কিংবা ভীষণ আনন্দ—প্রকাশ করার কোনও উপায়ই নেই। স্টুডিয়োয় ঢুকে গেলে তুমি অন্য গ্রহের বাসিন্দা। ব্যক্তিগত দুঃখ-কষ্টের কোনও স্থান নেই সেখানে।

• আচ্ছা, টিম ইন্ডিয়ায় আপনার প্রিয় ক্রিকেটার কে? স্টুয়ার্টকে বাদ দিয়ে বলবেন কিন্তু…

(জোরে হেসে) স্টুয়ার্ট এমনিতেও আমার প্রিয় ক্রিকেটার নয়। ইন ফ্যাক্ট, আমার কোনও খেলাতেই প্রিয় বলে কেউ নেই। একজন অ্যাঙ্করের কোনও প্রিয় থাকা উচিত নয়।

• আর প্রিয় কো-অ্যাঙ্কর?

(হেসে) সবাই… সবার থেকেই তো কত কিছু শিখেছি। আকাশ (চোপড়া) শোয়েব আখতার…সবাই।

• শুনেছি, অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটার নাকি আপনাকে ভীষণ পছন্দ করেন!

কে যে এই সব বলে!

• সমালোচনা নিতে পারেন? লোকে তো বলে, আপনি ভীষণ ঠোঁটকাটা…

(মাঝপথে থামিয়ে) নিজের সমালোচনা নেওয়ার ক্ষমতা আমার আছে। কিন্তু কেউ যদি ফালতু বিতর্ক সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে তো আমি মুখ খুলবই। আমি নিজের কাজ করি, বাকিদেরও তাই করা উচিত…

• স্টুডিয়োতে এত জন পুরুষ অ্যাঙ্করের মধ্যে একমাত্র মহিলা আপনি। কতটা চ্যালেঞ্জিং?

আমি কোনও দিনই পুরুষ-নারী ইকুয়েশন মানি না। স্টুডিয়োয় আমরা প্রত্যেকেই একটা ইউনিট। বাকিরা কখনও বুঝতে দেয় না যে আমি একজন মহিলা। তবে, সব জায়গাতেই কিন্তু আমি বস (হাসি)!• বাড়িতেও বস?

একদম। অবশ্য এর পুরোটাই সম্ভব হয়েছে বাড়ির সাপোর্টের জন্য।
বাবা (রজার বিনি) কিংবা স্টুয়ার্ট, কেউই নিজেদের মত চাপিয়ে দেয় না। তবে আমিও কিন্তু ফ্যামিলিকে কখনওই নেগলেক্ট করি না। বেঙ্গালুরুতে বাড়ি, আর মুম্বইতে অফিস—দুটো সমান ভাবে সামলাচ্ছি। এবং বোধহয় সেই কারণেই বন্ডিংটা বেটার হচ্ছে।

•আর কাজ?

সেটাও চলবে। আরও ভাল কাজ করতে চাই। এখন ‘সুপারস্টারস’ শো-টা করছি। যেখানে প্রত্যেক ক্রিকেটারের মনের কথা জানতে হয়। তাঁদের মাঠের বাইরের জীবনটা তুলে আনতে হয়। এবং ক্রিকেটারদেরও সত্যি কথা বলাটা নিয়ম।

• স্টুয়ার্টের এপিসোডটা শ্যুট করেছেন?

(একটু থেমে) না… কেন বলুন তো?

• প্ৰথম প্রশ্নটা কী হবে ঠিক করেছেন?

(হেসে) স্টুয়ার্টকে জিজ্ঞেস করব, ও আমাকে ভয় পায় কি না! যা জ্বালাই ওকে। তবু বেচারা কিছুই বলে না। আশা করি এ বার ক্যামেরার সামনে অন্তত সত্যিটা বলবে!

সুত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *