বার্ধক্য জয়ের পথে বিজ্ঞান!

Slider বাংলার সুখবর বিচিত্র

27349_b4

 

ভাবুন তো- আপনারই শরীরের কোষ থেকে তৈরি নতুন হার্ট, লিভার আর কিডনি প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। হাঁটু আর কোমরের হাড় প্রতিস্থাপন এখন যেমন সাধারণ একটা বিষয় ঠিক তেমনি। অথবা আপনি আপনার ৯৪তম জন্মদিন উদ্‌যাপন করছেন বাল্যবন্ধুদের সঙ্গে ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিয়ে। অন্য কথায় এমন একটি বিশ্বের কথা ভাবুন তো- যেখানে বুড়িয়ে যাওয়ার ধারণাই বিলুপ্ত হয়েছে।
অমন একটি বিশ্ব এখনও বাস্তব নয়। তবে, অনুরূপ একটা সময় হয়তো আসবে একদিন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেকেই বার্ধক্যে উপনীত হওয়ায় অভিজ্ঞতা লাভ করে। অন্য কথায় শৌর্য-বীর্য আর বিক্রম হ্রাস হওয়া স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। চিকিৎসক, জীববিজ্ঞানীরা এই বাধ্যর্কের বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। বার্ধক্য একেবারে ঠেকিয়ে দেয়া এখনও সম্ভব নয়। তবে তার গতি কমিয়ে দেয়াটা হয়তো সম্ভব। বিগত শতাব্দীতে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে অনেক। কিন্তু এর পেছনে অবদান উন্নত খাবার, বাসস্থান, জনস্বাস্থ্য ও কিছু ঔষধ পথ্যের। নির্দিষ্ট কিছু বার্ধক্য নিরোধক ওষুধে হয়তো আয়ুকে বাড়াতে পারে। এমন কিছু ওষুধও হয়তো ইতিমধ্যে আবিষ্কার হয়েছে। আশাব্যাঞ্জক এই দাবি অনেকের আয়ুষ্কাল বর্তমানের সর্বোচ্চ ১২০ বা এর কাছাকাছি উন্নীত করবে। কিন্তু এটা হয়তো হতে পারে শুরু মাত্র। পরবর্তী ধাপে শুধু গড় আয়ু নয়, সর্বোচ্চ আয়ু বাড়বে। শরীরের কোনো অঙ্গ বিকল হয়ে গেলে, তা সারানো যাবে বা নতুন প্রতিস্থাপন করা হবে। দীর্ঘ জীবনের জন্য অপটিমাইজ করা হবে ডিএনএকে। স্বল্পমূল্যে পাওয়া যাবে বার্ধক্য নিরোধক আর শতায়ু ওষুধ। উচ্চাভিলাষী এই লক্ষ্যে অনেক আশাবাদী ব্যক্তি উদ্যোগ নিচ্ছেন। এদের অনেকে ‘স্টেমসেল’ ব্যবহার করে ক্ষয়িষ্ণু টিস্যুগুলোকে উজ্জীবিত করতে চান। এমন জৈব-সংস্কারের ভিত্তি এখনও প্রমাণিত নয়। ওদিকে শূন্য থেকে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকশিত করার গবেষণাও চলছে। বর্তমানে এ ‘অর্গানয়েড’গুলো ছোট, অসম্পূর্ণ এবং প্রধানত ওষুধ পরীক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। তবে, নিশ্চিতভাবে এটা পরিবর্তন হবে।  দীর্ঘায়ুর বিষয়টি রক্তে প্রবাহিত হয় বলে ধারণা রয়েছে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট ধরনের  কিছু জীন আয়ুকে বাড়ায়। অনেকে এটা নিয়ে গবেষণা করছেন। তারা ভাবছেন ভবিষ্যতে জীন-সম্পাদনার আধুনিক প্রযুক্তি বাস্তব হবে। এতে করে যাদের প্রয়োজন তারা এ প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে আয়ু বাড়াতে পারবেন।
নিতান্ত সাধারণ কোনো মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে, এসব কিছু অত্যন্ত আকর্ষণীয় শোনাতে পারে। তবে সামগ্রিকভাবে সমাজের ওপর এর গভীর প্রভাব পড়বে। তার সবগুলো যে ভালো প্রভাব তা কিন্তু নয়।
একটা উদ্বেগ হলো- দীর্ঘ জীবন বিদ্যমান সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাকে আরো উস্কে দেবে। সব থেকে আগে যে চ্যালেঞ্জ আসবে তাহলো বার্র্ধক্য নিরোধক চিকিৎসার সহজলভ্যতা। দীর্ঘ জীবন পাওয়ার বিষয়টি যদি ব্যয়বহুল হয় তাহলে কে এই সুবিধা প্রথমে পাবে। ইতিমধ্যেই, আয়ুষ্কাল অন্যতম আগাম ধারণা নির্দেশক হলো উপার্জন। দরিদ্রদের নাগালের বাইরে থাকা চিকিৎসাসুবিধার দূরত্ব আর বাড়ালে বিভক্তি আরো গভীর হবে, যা ইতিমধ্যে গণতন্ত্রকে ক্ষতবিক্ষত করছে।
বয়স্ক কর্মীরা কি বৈষম্যের শিকার হবে? নাকি বয়স বাড়ার ফলে অল্পবয়সীদের ওপর তাদের কর্তৃত্ব বাড়ছে? বসেরা কি পদ আঁকড়ে ধরে থাকবে আর অধীনস্তদের উত্থানের পথ থমকে যাবে? নাকি, তারা বিরক্ত হয়ে কাজ ছেড়ে দেবে? নাকি ভিন্ন কোনো কিছু করে বসবে?  আর এসব মানুষেরা কি নিজেদের বয়স্ক ভাবা বন্ধ করে দিয়ে ফিরিয়ে আনবে তারুণ্যের মানসিক ধ্যানধারণা? নাকি সমাজকে আরো রক্ষণশীল করে তুলবে? (কেননা, বয়স্কদের মধ্যে রক্ষণশীল হওয়ার প্রবণতা থাকে) অবসর নেয়ার বিষয়টা পিছিয়ে যাবে অনেকের জন্য। অনেকে কর্মজীবনে বৈচিত্র্য খুঁজবেন। ৫০-এর কোঠায় পাঠগ্রহণ করে ভিন্ন কোনো পেশায় যোগ দেবেন।
একঘেয়েমি আর, বৈচিত্র্যের চাহিদা পারিবারিক জীবনকেও পাল্টে দেবে? এক সঙ্গীর সঙ্গে জীবন কাটানোর রীতি যা কিনা ইতিমধ্যে কমে যাচ্ছে তা বিরল হয়ে উঠতে পারে। সিরিজ বিবাহের বিষয়টি কে কার সঙ্গে কিভাবে সম্পর্কিত তার হিসাব রাখা জটিল করে তুলবে।
এসব জল্পনা কল্পনা আনন্দের খোরাক। অনেকাংশেই আশা জাগানিয়া। তবে গুরুত্বপূর্ণ হলো- এমন কোন ভবিষ্যতে দীর্ঘায়ুর জীবন যেন একইসঙ্গে সুস্থও হয়। মানবতা যেন ওই ফাঁদে না পড়ে যায় যেমনটা পড়েছিল গ্রীক পুরাণের টাইথোনাস। দেবতারা তাকে চিরজীবনের বর দিয়েছিল। কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল চিরতারুণ্য চাইতে। শেষমেশ টাইথোনাস পরিণত হয় বিবর্ণ গুবরে পোকায়। কামনা করতে থাকে মৃত্যুর।
[ইকোনমিস্ট অবলম্বনে, সংক্ষেপিত]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *