ভয়াবহ হামলায় কমপক্ষে ৭০ জন নিহত হওয়ার পর শোকে স্তব্ধ পাকিস্তান। গতকাল কোয়েটার সিভিল হাসপাতালে ওই হামলা চালায় জঙ্গিরা। একই সঙ্গে এ হামলার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিকে তালিবান পাকিস্তানের একটি অংশ দ্য জামায়াতুল আহরার এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস)। গতকাল প্রথমে বেলুচিস্তান বার এসোসিয়েশনের সভাপতি বিলাল আনোয়ার কাসিকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। তার লাশ নেয়া হয় সিভিল হাসপাতালে। এ সময় সেখানে শোকার্ত জনতার ভিড় জমলে জরুরি বিভাগেই শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে সাংবাদিক, আইনজীবী সহ কমপক্ষে ৭০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। তাদের অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে নিহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ হামলার পর পরই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মামনুন হোসেন, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ, সেনাপ্রধান রাহিল শরীফ নিন্দা জানিয়েছেন। ওদিকে প্রথমে আইনজীবী কাসি’কে টার্গেট করে হত্যা ও পরে হাসপাতালে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করেছে জামায়াতুল আহরার। একই সঙ্গে এর দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট। আইএসের বার্তা সংস্থা আমাক’কে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ওই হামলা ছিল আত্মঘাতী। এর দায় স্বীকার করেছে আইএস। তারা বার্তা সংস্থা আমাক-এ জানিয়েছে, ‘কোয়েটায় আইন মন্ত্রণালয়ের ও পাকিস্তানি পুলিশের সদস্যদের এক জমায়েতস্থলে শরীরে বেঁধে রাখা আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে আইএসের এক শহীদ’। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারাও মনে করছেন, প্রথমে কাসি ও পরে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হত্যাকা-ের সঙ্গেই আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী জড়িত। উল্লেখ্য, নিহত ৭০ জনের মধ্যে ৫৫ জনই আইনজীবী। এর মধ্যে রয়েছেন বেলুচিস্তান বার এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি বাজ মুহাম্মদ কাকার, সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাবেক সহ সভাপতি সৈয়দ কাহির শাহ, এডভোকেট সাঙ্গাত জামালদানি, এডভোটেক দাউদ লাসি প্রমুখ। নিহতদের মধ্যে রয়েংছেন কমপক্ষে দু’জন ক্যামেরাম্যান। তারা হলেন আজ টিভির শাহজাদ খান ও ডন নিউজের মেহমুদ খান। গতকাল ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যখন বিস্ফোরণ হয় তখন সেখানে এক চরম বিশৃংখল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। মুহূর্তেই মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যায় মৃতদেহ। রক্তে ভেসে যায় মেঝে। তার মাঝে বাঁচার আকুতি নিয়ে আর্তনাদ করছেন আহতরা। সে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। চারদিকে ধোয়ায় আচ্ছন্ন। সে ধোয়া ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালের করিডোরে। মেঝেতে ছড়িয়ে আছে কাচের গুঁড়ো। যারা প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন তাদেরকে এর ভিতর দিয়েই প্রাণপণ দৌড়াতে দেখা যায়। কেউ হতবিহ্বল হয়ে কান্না শুরু করে দেন। প্রত্যক্ষদর্শী ওয়ালিউর রেহমান বলেছেন, জরুরি ওয়ার্ডে তিনি তার অসুস্থ পিতার সঙ্গে কথা বলছিলেন। ঠিক তখনই বিস্ফোরণে পুরো হাসপাতাল ভবন কেঁপে ওঠে। এতে তার পিতা ও তিনি দু’জনেই মেঝেতে পড়ে যান। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী এডভোকেট আবদুল লতিফ বলেছেন, আইনজীবী কাসি হত্যায় শোক জানাতে তিনি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমি ভাবতে পারি নি যে, একজনের লাশ দেখতে এসে এত লাশ দেখতে হবে। উল্লেখ্য, কোয়েটার সব হাসপাতালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। আহত অনেককে স্থানান্তর করা হয়েছে অন্য হাসপাতালে।