সম্পাদকীয়: গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রন অপরাধ ও জনরোষ বাড়াবে

Slider টপ নিউজ রাজনীতি সম্পাদকীয়

21022-atockamar

 

ভুল ত্রুটি ধরার মাধ্যম না থাকলে ভুলের মাত্রা যেমন বেড়ে যায় তেমনি ভুলের লাগামহীন ঘোাড়ার নীচে চাপা পড়ে মানুষও মারা যায়। এতে জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। সংক্ষুব্ধ আর বিক্ষুব্ধ মানুষের লাইন লম্বা হয়ে সৃষ্টি হয় জনরোষ। এই সূযোগে নতুন নতুন অপরাধ মাথা চাড়া দিয়ে উঠে যার তালিকায় জঙ্গীবাদও থাকতে পারে।

পরিস্থিতি বিবেচনায় দেখা যায়, আমাদের প্রধান দুই জোটের মধ্যে রাজনৈতিক হিংসা ও হানাহানি এখন চরম পর্যায়ে। এক দল যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে জোট করেছে। অন্যদল সৈরাচার নিয়ে সরকার পরিচালনা করছে।  আবার এই দুই জোটই   জনগনের ভোট হরণও করেছে।  শেষ পরিস্থিতি বলছে, জনগণ দুই জোটের কাছে তাদের ভোটাধিকার নিরাপদ মনে করছেন না। অবশ্য এই দুই জোট ছাড়া বাংলাদেশের রাজনীতিও হয় না। নতুন কোন জোট আসবে বলে তেমন কোন সম্ভাবনাও নেই। তাহলে এখন আমরা কি করব তাও আমাদের জানা নেই। তবে মাঝে মধ্যে ভয় হয় কখন যেন কি ধরণের বিপদ চেপে বসে। হঠাৎ সরকার আসার সংস্কৃতি থাকায় জনগণ উদ্বিগ্ন থাকে সব সময়।

সম্প্রতি সরকার গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রন করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সরকার সমালোচনা অপছন্দ করায় গণমাধ্যমের উপর এই খড়গ হতে পারে। যদি তাই হয়, তবে সরকারের কাজে যে ভুল হয় তা ধরিয়ে দিবে কে?  তাহলে ভুল গুলো তো হতেই থাকবে। আর এতে ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশ ও জনগন। জনগন সরকারের প্রতিও  আরো বেশী করে   নাখোশ হতে থাকবে।

পরিস্থিতি বিবেচনায় বলতে হয়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী এক তরফা নির্বাচনের পর যে কয়টি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে তা সুষ্ঠু হয়নি। জনগনের ভোটের প্রতিফলন ঘটে নি। জনগণ অনেক ক্ষেত্রে ভোট দিতে পারেনি। ভোট দিয়ে গিয়ে খুনও হয়েছে। ভোট নিতে গিয়েও খুনের ঘটনা ঘটেছে। ভোটের কেন্দ্রেও হামলা লুটপাট হয়েছে। মানে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিএনপি ১৯ ৯৬ সালে ও আওয়ামীলীগ ২০১৪ সালে একই ঘটনা ঘটিয়েছিল।

সবশেষে  তৃনমূল ভোট, শেষ ভরসাও নষ্ট করে দিয়েছে।   ফলে জনগন এখন আর ভোটের উপর আস্থা রাখতে পারছে না। এই অবস্থায় সরকারকে প্রজাতন্ত্র  নির্ভর হয়ে চলতে হচ্ছে। শৃঙ্খলা ও স্বশস্ত্র  বাহিনী মুখ ফিরিয়ে নিলে সরকারকে চলে যেতে হবে। আর সরকারও জানে, জনগনের নিকট ভোটের জন্য গেলে ফলাফল হিতে বিপরীত হবে। তাই প্রজাতন্ত্রই একমাত্র ভরসা। এই কারণে প্রজাতন্ত্র সরকারকে যা যা বলছে সরকারও তাই করছে।

গনমাধ্যম সক্রিয় থাকলে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের ভুল ও অপরাধ ধরা পড়ে যায়। এতে তারা বিব্রত হয়। পাশাপাশি জনগনও প্রতিক্রিয়া দেখায়। তাই হয়ত সরকার প্রজাতন্ত্রের চাপে গনমাধ্যমের উপর খড়গ চাপিয়ে দিতে পারে।

মনে রাখতে হবে,  গনমাধ্যম যদি নিস্ক্রিয় বা নিয়ন্ত্রিত হয়, তবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা নির্বিঘ্নে ভুল করতে থাকবে। আর এই ভুলের সূযোগে নতুন নতুন অপরাধ সংঘট হবে।  প্রজাতন্ত্রের সকল ভুল ও অন্যায়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে জনগন ও দেশ। এমন হলে দেশে শ্বাসরোদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে। আমাদের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে একাধিকবার জনগনের সরকার হোঁচট খেয়ে ছিটকে গেছে। আর এখন আমাদের আভ্যন্তরীন দুরবস্থার মাত্রা বিশ্বকেও সম্পৃক্ত করে ফেলছে। তাই আমাদের ভয় আগের চেয়ে বেশী হওয়ারই কথা।

তাই দাবি থাকবে,  গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আশাবাদ থাকলে সরকারের উচিত হবে জবাব দিহিতার মাধ্যম গণমাধ্যমকে মুক্ত করে রাখা। মুক্ত করার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের জবাবদিহিতাও বিবেচনার দাবি রাখে।   এই ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে ঢেলে সাজানো যায় কিন্তু নিয়ন্ত্রন করে রাখা বিপদজনক হতে পারে সরকার, দেশ ও জনগনের জন্য। এমনটি হলে সরকারের শেষ লাঠিও ভেঙে যাবার  উপক্রম হতে পারে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *