এক বছরে দেড়শ’ কোটি টাকার ২৯ গাড়ি জব্দ

Slider টপ নিউজ ফুলজান বিবির বাংলা

24900_f4

 

 অবৈধভাবে গাড়ি আমদানির হিড়িক চলছে দেশে। বিলাসবহুল গাড়ি আনার ক্ষেত্রে প্রভাবশালীরাই এগিয়ে। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা এসব গাড়ি নিয়ে এখন চরম বেকায়দায় মালিকরা। গত এক বছরে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ২৯টি নামিদামি গাড়ি এনেছেন দেশের প্রভাবশালীরা। এদের মধ্যে অনেকে আবার কম সিসির গাড়ি আমদানির ঘোষণা দিয়ে বেশি সিসির গাড়িও এনেছেন। এসব গাড়ি বাজার মূল্য প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা। প্রতিটি গাড়ির গড় মূল্য ৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২২ কোটি টাকা দামের গাড়িও রয়েছে বলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে। এখন গাড়িগুলো নিয়ে বিপাকে আছে সংস্থাটি। এগুলো কাকরাইলস্থ অধিদপ্তরের নিজস্ব গাড়ি রাখার জায়গায় রাখা হয়েছে। ফলে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত নিজস্ব গাড়ি নগরীর বিভিন্ন গ্যারেজে রাখতে হচ্ছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর মহাপরিচালক ডক্টর মইনুল খান মানবজমিনকে বলেন, যারা এই গাড়ির পিছনে বিনিয়োগ করেছেন তারা প্রভাবশালী। ছোটখাটো ব্যক্তিরা এত নামিদামি গাড়ি আমদানি করতে পারেন না। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, কেউ কেউ কম সিসির গাড়ি ঘোষণা দিয়ে বেশি সিসির গাড়ি আমদানি করেন। মহাপরিচালক বলেন, আটক করা গাড়ির মধ্যে একটি গাড়ির দাম আছে ২২ কোটি টাকা।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৩রা মে রাজধানীর বনানীর ভারসাটাইল অটোমোবাইল, বাড়ি নম্বর ৩৯, রোড নম্বর ৭, ব্লক-জি হতে বিলাসবহুল সাদা ‘ওডিআর৮’ রেসিং গাড়ি আটক করা হয়। ২০১৩ সালে মংলা বন্দর দিয়ে গাড়িটির ছাড় হয়েছে ‘ওডি টিটি ২৫০০ সিসি হিসেবে। কিন্তু পাওয়া গেছে ‘ওডিআর৮’ ৫২০০ সিসি, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। মূলত গাড়িটি শুল্ক ফাঁকি দেয়ায় আটক করা হয়েছে। এ বছরের ২৫শে মে তেজগাঁও এলাকায় ৩৪৫ নম্বরের মাল্টিব্রান্ড ওয়ার্কশপ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিএমডব্লিউ আরেকটি গাড়ি আটক করে। গাড়িটিতে গ্যারেজ থেকে ঢাকা মেট্রো শ ০০-০৫০১ ভুয়া প্লেট ব্যবহার করা অবস্থায় পাওয়া গেছে। গাড়িটির  আনুমানিক মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের ১২ই জুন রাজধানীর বারিধারাস্থ স্বদেশ অটো লিমিটেড হতে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আমদানিকৃত চারটি বিলাসবহুল গাড়ি আটক করা হয়। গাড়িগুলো হচ্ছে অডিএ৫, মার্সিডিজ ই-২৪০ এবং  দুটো জিপের একটি মার্সিডিজ এমএল ৩৫০ ও বিএমডব্লিউ এক্স৫। গাড়ি চারটির বাজার মূল্য ১৫ কোটি টাকা। পরদিন ১৪ই জুন কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মার্সিডিজ নিউ ব্র্যান্ডের গাড়ি আটক করা হয়। সিসি কম দেখানো এবং শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে গাড়িটি আটক করা হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৬ কোটি টাকা। ধানমন্ডিস্থ বাড়ি নম্বর ২৩/এ, রোড নম্বর ৫-এর  বেলায়েত হোসেন বেলাল নামের এক ব্যক্তি অবৈধভাবে বা চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে গাড়ি আমদানি করে। তিনি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে এই গাড়ি এনেছে। একই সঙ্গে জাল কাস্টমস দলিলাদি দাখিল করে একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি আনেন দেশে। শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে গাড়িটি আটক করে। যার বাজার মূল্য প্রায় সাত কোটি টাকা। এ বিষয়ে বিভাগীয় ও ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সূত্র জানায়, দুবাই এভিয়েশন কর্পোরেশনের পক্ষে মো. গোলাম রব্বানী, ম্যানেজার সিকিউরিটি এবং সাইফুল হক, চেয়ারম্যান, (ঠিকানা-বসতি এভিনিউ, হাউজ নম্বর ১০, বাড়ি নম্বর ৫৩, ইউনিট-সি ৪, গুলশান-২)। এয়ার সার্ভিসেস এগ্রিমেন্টের আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে উপযুক্ত তথ্য সরবরাহ ও সঠিক তথ্য গোপন করে ল্যান্ডরোভার জিপ, রেঞ্জ রোভার জিপ, রোলস রয়েস সিডান কার এবং মার্সিডিজ বেঞ্জ সিডান কার ব্র্যান্ডের চারটি গাড়ি  আমদানিতে প্রায় ৩৪ দশমিক ১৪ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে। এ বিষয়ে একটি বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এভাবে প্রভাবশালীরা শুল্ক ফাঁকি দিয়ে গাড়িগুলো দেশে আনান বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এদিকে, সংস্থাটি চলতি মাসের ৮ থেকে ২৩শে জুলাই সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ অভিযান ‘আইরিন’ পরিচালনা করে। উদ্দেশ্য সন্ত্রাসে ব্যবহৃত অস্ত্র, বিস্ফোরক ও মাদক পাচার প্রতিরোধ করা। ‘রাইলো এপির ৩৩টি সদস্য দেশগুলোতে এ উদ্যোগে বাংলাদেশের পক্ষে শুল্ক গোয়েন্দা সক্রিয়ভাবে সংযুক্ত হয়েছে। এ অভিযানে স্বর্ণ, বৈদেশিক মুদ্রা, নকল ভায়াগ্রা, মাদক, ধারালো ছুরি, দুই কন্টেইনার নকল সিরিঞ্জ ও ইনসেক্টিসাইড, বোমা সরঞ্জাম সন্দেহে কুরিয়ার পার্সেল এবং পুরনো কম্পিউটার যন্ত্রাংশ আটক হয়েছে। এতে সার্বিকভাবে চারটি অর্জন স্পষ্ট হয়েছে বলে কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তল্লাশি সত্ত্বেও তেমন ক্ষতিকর কিছু না পাওয়ায় ইঙ্গিত করে যে, শুল্ক বন্দর অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ নয়, শুল্ক কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় অপরাধীচক্রের ঝুঁকি বাড়ায় অপরাধীরা এই কাজ থেকে বিরত হবেন। যৌথ তল্লাশির ফলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব ও সমঝোতা তৈরি হওয়ায় সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম আরো কার্যকর হবে এবং নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি হবে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে এক ধরনের ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে বলে কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *