জঙ্গিদের সহায়তাকারী তামিমসহ ১০ জন

Slider টপ নিউজ

eadcd148c18446cb5f0003c200a6b220-Tamim_Ahmmed_Chy

‘নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবি ও সমর্থনপুষ্ট অন্যান্য সংগঠনের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শের মাধ্যমে সহায়তা ও প্ররোচনা’ দেওয়ার অভিযোগে তামিম চৌধুরীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
রাজধানীর কল্যাণপুরে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলি এবং নয় জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার মিরপুর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এই মামলাটি করা হয়। বাদী মিরপুর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. শাহজালাল আলম।
মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে গত মঙ্গলবার ভোরে কল্যাণপুরে গুলিবিনিময়ের ঘটনায় আহতাবস্থায় গ্রেপ্তার হওয়া রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যানকে। তামিম চৌধুরীসহ নয়জনকে পলাতক আসামি হিসেবে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
আসামি তামিম চৌধুরী সম্প্রতি আলোচনায় আসা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরী কি না, এ বিষয়ে মুঠোফোনে খুদে বার্তা (এসএমএস) পাঠিয়ে জানতে চাইলে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম তা নিশ্চিত করেন। তিনি এও জানান, বাংলাদেশে তামিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে এটাই প্রথম মামলা।
পুলিশের অপর একটি সূত্র বলছে, তামিম চৌধুরীকে গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা।
কল্যাণপুরের ঘটনায় করা মামলার এজাহারভুক্ত বাকি আসামিরা হলেন ইকবাল, রিপন, খালেদ, মামুন, মানিক, জোনায়েদ খান, বাদল, আজাদুল ওরফে কবিরাজ ও অজ্ঞাতনামা অনেকে। তামিমসহ এসব আসামির কারও বাবার নাম ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা দেওয়া হয়নি। আহতাবস্থায় গ্রেপ্তার হওয়া রাকিবুল হাসানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাঁদের আসামি করা হয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
মামলায় বলা হয়েছে, আসামিরা বাংলাদেশের জননিরাপত্তা, সংহতি ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন ও বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। তাঁরা আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক, ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে পুলিশকে আহত করা, প্রশিক্ষণ, গ্রেনেড সরবরাহ, সহায়তা, অর্থায়ন ও প্ররোচনা দেওয়ার অপরাধে অপরাধী।
এজাহারে পুলিশ বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান বলেছেন, এজাহারভুক্ত আসামি ও অজ্ঞাতনামা অনেকে তাঁদের কল্যাণপুরের ফ্ল্যাটে আসতেন। তাঁদের ধর্মীয় ও জিহাদি কথাবার্তায় উদ্বুদ্ধ করতেন এবং প্রয়োজনীয় টাকাপয়সা দিয়ে যেতেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, কল্যাণপুরের তাজ মঞ্জিলে সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ৩৫ মিনিটের দিকে তল্লাশির জন্য দরজায় কড়া নাড়লে পুলিশকে উদ্দেশ করে জঙ্গিরা কয়েকটি গ্রেনেড নিক্ষেপ ও গুলি ছোড়ে। এতে পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) দীল মোহাম্মদ আহত হন।
এদিকে গতকাল সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেছেন, গুলশানে নিহত জঙ্গিদের সঙ্গে কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গিদের কারও কারও যোগাযোগ ছিল। তিনি বলেন, গুলশানে নিহত জঙ্গি নিবরাস কল্যাণপুরে নিহত শেহজাদ রউফ ওরফে অর্কের বন্ধু। কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গি রায়হান কবির এর আগে পুলিশের খাতায় তারেক নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁকে অনেক দিন ধরে পুলিশ খুঁজছিল। তাঁর বাড়ি রংপুরে।
রায়হান কবির সম্পর্কে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গুলশান হামলার তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পেরেছি, সাত জঙ্গিকে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের একটি চরে দুজন প্রশিক্ষণ দেয়। এই দুই প্রশিক্ষকের একজন রায়হান ওরফে তারেক। সে জেএমবির ঢাকা অঞ্চলের কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করত।’
কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গিদের ‘নব্য জেএমবি’ দাবি করে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযানের সময় তারা তাদের ব্যবহার করা দুটি ল্যাপটপ ভেঙে ফেলেছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি ও নগদ টাকা পুড়িয়ে ফেলেছে। তারপরও সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। আহত জঙ্গি হাসানসহ বিভিন্ন সূত্র থেকেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। হাসান জানিয়েছে, কল্যাণপুরের বাসা থেকে পলাতক আরেক জঙ্গির নাম ইকবাল। তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।’
কাউন্টার টেররিজম বিভাগের প্রধান মনিরুল বলেন, নিহত জঙ্গিরা সবাই চার মাস থেকে দুই বছর আগে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তাঁদের ভাষায় হিজরত করেন। তিনি বলেন, কল্যাণপুরে নিহত যে আট জঙ্গির পরিচয় মিলেছে, তাঁদের তিনজন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। একজন পাস করে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। দুজন পড়ছিলেন। বাকিদের মধ্যে তিনজন মাদ্রাসার ছাত্র, একজন স্বল্পশিক্ষিত ও একজন নোয়াখালী সরকারি কলেজে পড়তেন।
এদিকে কল্যাণপুরের ওই বাড়িটিতে গতকালও কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ওই বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাড়িটির সামনে ও দুই পাশে পুলিশের প্রহরা রয়েছে। মিরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জুবায়ের হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা এখান থেকে আলামত সংগ্রহ করছেন। তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাড়ির বাসিন্দাদের কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *