রাজধানীর কল্যাণপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিহত এক ‘জঙ্গি’ নিজের ছেলে বলে নিশ্চিত হলে জাতির কাছে ক্ষমা চাইবেন তাঁর বাবা। এমনকি ছেলের লাশও গ্রহণ করবেন না। ইতিমধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ওই ‘জঙ্গি’র পরিচয় প্রকাশ করেছে। পুলিশের তথ্য অনুসারে, তাঁর নাম সাব্বিরুল হক কনিক। বাবার নাম আজিজুল হক। নিহত ওই ‘জঙ্গি’ তাঁর ছেলে সাব্বিরুল কি না, তা নিশ্চিত হতে ঢাকায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আজিজুল হক।
আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) নুরে আলম মিনা তাঁর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তবে সংবাদ সম্মেলনে আজিজুল হক উপস্থিত ছিলেন না।
এসপি নুরে আলম মিনা বলেন, কল্যাণপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে সাব্বিরুল হক নামের এক যুবক নিহত হন বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু গণমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়। সাব্বিরুলের গ্রামের বাড়ি আনোয়ারা উপজেলায়। তাঁর বাবার নাম আজিজুল হক। তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগের কর্মী। আজ সকালে আজিজুল হককে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। সে সময় আজিজুল হক জানিয়েছেন, বিয়ের দাওয়াতে যাওয়ার কথা বলে সাব্বিরুল তাঁর বাবার কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর থেকে তাঁর আর কোনো খোঁজ পায়নি পরিবার।
এসপি বলেন, আজিজুল হকের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছে। তাঁর কাছ থেকে জানতে পেরেছি, ২০১৩ সালে সাব্বিরুল আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিভাগে ভর্তি হন। এর কিছুদিন পর থেকে সাব্বিরুলের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন দেখতে পায় তাঁর পরিবার। আজিজুল হক মাজারভক্ত ব্যক্তি। এ কারণে সাব্বিরুল তাঁর বাবার সঙ্গে প্রায়ই বিতর্কে জড়াতেন। পরিবারের সদস্যদের ধর্মকর্ম পালন নিয়েও প্রশ্ন তুলতেন। নিজের জবাই করা ছাড়া তিনি কোনো মাংস খেতেন না। ধর্মকর্ম বিষয়ে আত্মীয়দেরও ভুল ধরতেন। এ ছাড়া তাবলিগ জামাতে যাওয়ার কথা বলে ১৫-২০ দিনের জন্য উধাও হয়ে যেতেন।
সংবাদ সম্মেলনে এসপি আরও বলেন, ‘আমরা ডিএমপি থেকে অনলাইনে নিহত যুবকের ছবি এনে আজিজুল হককে দেখাই। ছবি দেখে তিনি এই যুবকের ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারেননি। আজিজুল হকের সন্দেহ, তাঁর ছেলের চুল ছোট ছিল। চোখ ও থুতনিতেও অমিল দেখতে পান তিনি। এরপরও আমরা ডিএমপির উপকমিশনার মাসুদুর রহমানের সঙ্গে তাঁর কথা বলিয়ে দিই। উপকমিশনার তাঁকে সাব্বিরুলের লাশ দেখতে দেবেন বলে জানিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আজিজুল হক জানিয়েছেন, নিহত ওই জঙ্গি তাঁর ছেলে হলে চট্টগ্রামের এসপি কার্যালয়ে এসে জাতির কাছে দুঃখ প্রকাশ করবেন ও ক্ষমা চাইবেন। ছেলের লাশ তিনি গ্রহণ করবেন না বলেও জানিয়েছেন।’
এদিকে অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার এমরান ভুঞা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলের লাশ কি না, শনাক্ত করতে আজিজুল হক ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এ কারণে গণমাধ্যমের সঙ্গে এখন কথা বলতে আগ্রহী নন। তিনি আনোয়ারার একটি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বলে আমাদের জানিয়েছেন। সন্তানের বিষয়টি নিয়ে তিনি ভেঙে পড়েছেন। নিহত যুবক যদি তাঁর ছেলে হন, তাহলে তিনি গণমাধ্যমের সামনে আসবেন বলে জানিয়েছেন।’
এদিকে প্রথম আলোর আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আজিজুল হক বরুমচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। চাচা প্রয়াত মোজাম্মেল হক চৌধুরীও একই ইউনিয়নে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সাব্বিরুল ২০১০ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি এবং ২০১২ সালে বাণিজ্য বিভাগ থেকে ৪.৮০ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন।
সাব্বিরের বাবা আজিজুল হক বলেন, ‘পুলিশের প্রকাশিত ছবি থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না এটা সাব্বির কি না। যদি সাব্বির হয়ে থাকে, তাহলে তাঁর লাশ আমি নেব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ঐতিহ্যগতভাবে মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী লীগ পরিবারের মানুষ। তাই কয়েক মাস ধরে সে নিখোঁজ থাকলেও লজ্জায়-ভয়ে থানায় জিডি করিনি।’
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ বলেন, আমরা খোঁজ নিচ্ছি, নিহত যুবক সাব্বিরুল কি না। সাব্বিরুলের বাবা এখনো তা নিশ্চিত করেননি।’