কূটনৈতিক জোনের ৮৩০ প্রতিষ্ঠান সরাতে চিঠি

Slider জাতীয় টপ নিউজ

23093_f2
কূটনৈতিক জোন গুলশান-বনানী-বারিধারার আবাসিক এলাকায় বেআইনিভাবে গড়ে উঠেছে ৮৩০টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে  ৭৭টি নামিদামি দেশি-বিদেশি রেস্টুরেন্ট, হোটেল, বার ও ফাস্টফুডের দোকান রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অনুসন্ধানে এই তথ্য উঠে আসে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (উপ-সচিব) মো. মমতাজ উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, সম্প্রতি জিম্মি ও ভয়াবহ জঙ্গি হামলার শিকার স্প্যানিশ রেস্তরাঁ হলি আর্টিজান আবাসিক ভবনে গড়ে তোলা হয়েছিল। তাদের ট্রেড লাইসেন্সও নেই। ডিএনসিসি’র আওতাধীন আবাসিক এলাকায় পাঁচ সহস্রাধিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়েছে। গত ৪ঠা এপ্রিল মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের পর ৬ মাসের মধ্যে নিজ থেকে গুটিয়ে নেয়ার জন্য আবাসিক এলাকার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নোটিশ দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। তবে সিটি করপোরেশনের এই সংখ্যার সঙ্গে দ্বিমত রয়েছে রাজউকের। রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) মো. আসমাউল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, সিটি করপোরেশনের তালিকার বাইরেও আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সঠিক সংখ্যা জানতে আমরাও অনুসন্ধান চালাচ্ছি। হলি আর্টিজানে দুর্ধর্ষ জঙ্গি হামলার পর ওই জোনে আমরা কাজ শুরু করেছি। এরই মধ্যে কূটনৈতিক জোন বারিধারায় ৩২টি আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির ৮টি জোনের মধ্যে গুলশান জোনে গুলশান এভিনিউর শুটিং ক্লাব থেকে গুলশান-২ এর গোলচত্বর, মাদানি ও কামাল আতাতুর্ক এভিনিউর গুলশান-বনানী ব্রিজ থেকে গুলশান-বারিধারা ব্রিজ পর্যন্ত, বনানী-১১ নম্বর রোড এবং গুলশানের সঙ্গে তেজগাঁও সংযোগ সড়কের কিছু অংশ বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে। কূটনৈতিক জোন গুলশান-বনানী-বারিধারার বাকি পুরো অংশই আবাসিক এলাকা। কিন্তু এখন পরিস্থিতি উল্টো। ওই বাণিজ্যিক এলাকাগুলোর চেয়ে গুলশান জোনের আবাসিক এলাকায়ই এখন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি। ডিএনসিসি’র হিসাবে এর ৩ নম্বর জোন গুলশান, বনানী, বারিধারা, খিলগাঁও এবং মালিবাগের আবাসিক এলাকায় ৮৩০টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরমধ্যে রেস্টুরেন্ট, হোটেল, বার ও ফাস্টফুডের দোকান রয়েছে ১০৫টি। খিলগাঁও এবং মালিবাগের ৮ প্রতিষ্ঠান বাদ দিলে বাকি ৯৭টি প্রতিষ্ঠানই রাজধানীর কূটনৈতিক জোন গুলশান-বনানী-বারিধারায়। এরমধ্যে রাজউকের অনুমোদিত বাণিজ্যিক এলাকায় রয়েছে মাত্র ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাকি ৭৭টি নামিদামি দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানই গুলশান-বনানী-বারিধারার আবাসিক এলাকায় অবস্থিত।
গুলশান এলাকার হোটেল, গেস্ট হাউস ও রেস্টুরেন্ট মালিকদের সংগঠন ‘ফেডারেশন অব হোটেল, গেস্ট হাউস ও রেস্টুরেন্ট ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফ. ম. আলাউদ্দিন মাহমুদ মানবজমিনকে বলেন, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং তা রাখতে হবে। বিশ্বের প্রায় দেশে আছে। সংগঠনটির মোট সদস্য দেড়শ’ এবং নিয়মিত সদস্য ৯০ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান আবাসিক এলাকার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে নেয়ার নোটিশ পেয়েছে।
ডিএনসিসি সূত্র জানায়, চলতি বছরের শুরুর দিকে রাজধানীর আবাসিক এলাকাগুলোতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক ভবনগুলোর তালিকা তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আবাসিক এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ৬ হাজার ৫৬টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে। এরমধ্যে দক্ষিণে ৭১৫টি এবং উত্তরে ৫ হাজার ৩৪১টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আবাসিক এলাকায় হলেও এরমধ্যে আবার ৪৫৯টি প্রতিষ্ঠান রাজউকের কাছ থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। বাকি ৪ হাজার ৮৮২টি প্রতিষ্ঠান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় বেআইনিভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ১ নম্বর জোন উত্তরা আবাসিক এলাকায় ৯৩৫টি, ২ নম্বর জোন মিরপুর (১) এ ৯১৯, ৩ নম্বর জোন গুলশানে ৮৩০, ৪ নম্বর জোন মিরপুর (২) এ ৬৭৩ এবং ৫ নম্বর জোন কাওরান বাজারের আবাসিক এলাকায় ১ হাজার ৫২৫টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ডিএনসিসি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ওই তালিকা পাঠায়। এরপর গত ৪ঠা এপ্রিল মন্ত্রিসভায় তা উত্থাপিত হয়। মন্ত্রিসভায় আবাসিক এলাকার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। এর অংশ হিসেবে ভবন ও প্রতিষ্ঠান মালিকদেরকে নোটিশ ইস্যু করা হচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মো. মেজবাহুল ইসলাম বলেন, আবাসিক এলাকায় যেসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে তা নিজ থেকে গুটিয়ে নেয়ার জন্য গত রমজানের প্রথম দিক থেকে নোটিশ দেয়া শুরু হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *