জাহিদুলকে নিয়েই শোলাকিয়া হামলার ছক

Slider জাতীয়

 

 

 

22304_zahidul

 

 

 

 

 

 

 

শোলাকিয়া মিশনে অংশ নেয়া জঙ্গিদের রাস্তাঘাট চিনিয়ে দেয় স্থানীয় তরুণ জাহিদুল হক তানিম। তাকে সঙ্গে নিয়েই হামলার ছক কষে জঙ্গিরা । এক কিলোমিটারের মতো দূরবর্তী ভাড়া বাসা থেকে ঈদগাহ ময়দান দফায় দফায় রেকি করা হয়। আর এতে গাইডের ভূমিকা পালন করে তানিম। কোন পথে ঈদগাহ ময়দানে ঢুকবে, কোন পথে পুলিশের সম্ভাব্য বাধা সহজে এড়ানো যাবে আবার হামলা শেষে কোন পথে নিরাপদে বেরিয়ে আসা যাবে- এসব ব্যাপারে নির্দেশনা দেয় সে। এর আগে কিশোরগঞ্জে বাসা ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে এলাকা নির্বাচন এবং খালি বাসার সন্ধানও দেয় তানিম। ছক অনুযায়ী, তানিমের দেখানো পথে নীলগঞ্জ রোডের বাসা থেকে বেরিয়ে উকিলপাড়া রোড দিয়ে আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন রেলক্রসিং পার হয় হামলাকারীরা। কিন্তু বিদ্যালয়ের সামনের রোড ধরে সবুজবাগ মুফতি মোহাম্মদ আলী (রহ.) জামে মসজিদ মোড়ে পুলিশের প্রথম চেকপোস্টেই তল্লাশির মুখে পড়ে তাদের একজন। পুরো এই মিশনে ৫ জনের একটি দল অংশ নেয়। রিমান্ডে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্যই দিয়েছে জঙ্গি হামলার ঘটনাস্থল সবুজবাগ এলাকার আবদুল হান্নান ভূঁইয়া বাবুলের বাসার আঙিনা থেকে পুলিশের হাতে আটক হওয়া স্থানীয় জঙ্গি জাহিদুল হক তানিম। তার দেয়া এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এমন তথ্য অনানুষ্ঠানিকভাবে জানালেও আনুষ্ঠানিকভাবে তারা এ নিয়ে কথা বলছেন না। জাহিদুল হক তানিমের রিমান্ড জিজ্ঞাসাবাদের পুরো বিষয়টিতে তারা কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করে চলেছেন। পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গুলি বিনিময়ের সময় জাহিদুল হক তানিম ঘটনাস্থলের একটি বাসায় ঢুকে পড়ে। সেখানে পোশাক বদল করে সে আত্মগোপনের চেষ্টা করে। সে সময়েই তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ তাকে আটক করে। এ সময় বাসার ভেতর থেকে ফ্রিজের পেছনে লুকিয়ে রাখা জাহিদুল হক তানিমের ব্যবহৃত গাঢ় সবুজ রংয়ের পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা, রক্তমাখা টুপি ও পাগড়ি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়। রিমান্ডে থাকা শোলাকিয়া মামলার আসামি জাহিদুল হক তানিম কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিম তারাপাশা মনিপুরঘাট এলাকার আবদুস সাত্তার ওরফে চান মিয়ার ছেলে। এদিকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া জাহিদুল হক তানিমকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দাবি করেছেন বাবা আবদুস সাত্তার। তিনি জানান, বছর দেড়েক আগে জাহিদুলের মা মারা যাওয়ার পর জাহিদুল ও তার আরেক ভাই ফয়সাল মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। বড় ভাই ফয়সালকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়। দুই ভাইকে সুস্থ করার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হলেও পীর-ফকিরকে দেখানো হয়েছে। পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি শহরের পশ্চিম তারাপাশা মনিপুরঘাট এলাকার বাসিন্দা আবদুস সাত্তার দাবি করেন, জাহিদুল রাজধানীর তিতুমীর কলেজে ইংরেজি বিষয়ে অনার্সের ছাত্র ছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণে দেড় বছর আগেই তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। তবে সে মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে কখনো কখনো না বলে কয়েকদিনের জন্য বেরিয়ে যেত। এই সময়টাতে সে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় তার বোনের বাসায় থাকতো। তবে জাহিদুল হক তানিমের এই উধাও রহস্য উদঘাটনেও কাজ করছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তানিম বিভিন্ন জেলায় তার অবস্থানের তথ্য পুলিশকে দিয়েছে। তবে উধাও হয়ে যাওয়া নিয়ে জাহিদুলের দেয়া এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করছে পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শোলাকিয়ার হামলার সঙ্গে জাহিদুলের উধাও রহস্যের কোনো না কোনো সংযোগ রয়েছে। এদিকে র‌্যাবের হেফাজতে চিকিৎসাধীন জঙ্গি শরীফুল ইসলাম ওরফে শফিউল ইসলাম ওরফে সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. মোর্শেদ জামান। মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শরীফুল ইসলাম ওরফে শফিউল ইসলাম ওরফে সাইফুল ইসলামের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর ও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ময়মনসিংহে যান। রাতে সেখান থেকে ফেরার পথে মুঠোফোনে তিনি মানবজমিনকে জানান, শরীফুলের গুরুতর ইনজুরি ছিল। সে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে। তবে পুরোপুরি সুস্থ হতে আরো বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। সুস্থ হওয়ার পর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তাকে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যবস্থা করা হবে। এর বাইরে তিনি কোনো কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানান। তবে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তা প্রায় আড়াই ঘণ্টা শরীফুলকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে সে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। এখন শরীফুলকে জিজ্ঞাসাবাদ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করবে পুলিশ।
শোলাকিয়ার ঈদগাহের অনতিদূরের সবুজবাগ মোড় পুলিশ চেকপোস্টে বোমা ও চাপাতি নিয়ে জঙ্গিদের হামলায় নিহত হন দুই পুলিশ সদস্য জহিরুল ও আনসারুল। এ সময় আহত হন আরো ১২ পুলিশ। জঙ্গি এই হামলার পর হামলাকারীদের ধরতে অভিযানে নামে পুলিশ। অসীম সাহসিকতার সঙ্গে চেকপোস্টেই তারা জঙ্গিদের রুখে দেন। জীবনবাজি রেখে তাদের প্রায় দুই ঘণ্টার অভিযান নির্বিঘ্ন করে শোলাকিয়ার ঈদজামাত। জঙ্গি সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও ঈদগাহ ময়দানে আগত মুসল্লিদের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের এই অভিযানে পুলিশ এ সময় ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে ১৩ ধরনের আলামত জব্দ করে। এর মধ্যে পুলিশ নিহত জঙ্গি আবির রহমানের কাছ থেকে জাপানে তৈরি কাঠের বাঁটযুক্ত একটি সচল পিস্তল, পিস্তলের ভিতর একটি ম্যাগাজিন ও ম্যাগাজিনের ভিতর দুইটি অব্যবহৃত তাজা গুলি, পিস্তলের চেম্বারে ব্যারেলের সাথে আটকানো অবস্থায় পিস্তলে ব্যবহৃত একটি গুলির খোসা, পিস্তলে ব্যবহৃত খালী ম্যাগাজিন, একদিকে ধারালো রক্তমাখা ১৫ ইঞ্চি লম্বা ও আড়াই ইঞ্চি প্রস্থের লোহা দিয়ে তৈরি একটি চাপাতি, পিস্তলের ছয়টি গুলির খোসা, চায়না রাইফেলের নয়টি গুলির খোসাসহ রুমাল ও হাতঘড়ি জব্দ করা হয়। সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত বিস্ফোরিত গ্রেনেডের একটি সেফটি পিন ও একটি অবিস্ফোরিত গ্রেনেড (হাত বোমা) সহ কিছু কাপড়চোপড়ও জব্দ করে পুলিশ। এ ছাড়া র‌্যাবের হাতে আটক হওয়া জঙ্গি শরীফুলের কাছ থেকে একটি খালি ম্যাগাজিনসহ জাপানে তৈরি কালো রংয়ের সচল পিস্তল এবং ঘটনাস্থল এলাকা থেকে র‌্যাবের উদ্ধার করা একটি লোহার তৈরি চাপাতি ও দুইটি চাইনিজ কুড়াল আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়।
ঈদের দিন চরশোলাকিয়া সবুজবাগ এলাকার মুফতি মোহাম্মদ আলী (রহ.) জামে মসজিদ লাগোয়া মোড়ের চেকপোস্টে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মুসল্লিদের ভিড়ের সঙ্গে মিশে মাথায় পাগড়ি-টুপি ও পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত এক তরুণ ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে চেকপোস্ট পেরোনোর চেষ্টা করলে তার গতিরোধ করেন দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য। এ সময় অতর্কিতে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে পুলিশের ওপর চাপাতি নিয়ে চড়াও হয় ওই তরুণ। সঙ্গে সঙ্গে ঘটানো হয় বোমার বিস্ফোরণ। বোমার বিস্ফোরণে কয়েক পুলিশ সদস্য মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কিছু পুলিশ সদস্য আত্মরক্ষার্থে পিছু হটেন। এর মধ্যেই মাটিতে পড়ে যাওয়া পুলিশদের চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে দুই সন্ত্রাসী। এ পরিস্থিতিতে পিছু হটে যাওয়া পুলিশ প্রস্তুতি নিয়ে সামনে আসে। সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে শুরু হয় গুলিবর্ষণ। সন্ত্রাসীরাও দ্রুততার সঙ্গে পাল্টা গুলি ছোঁড়া শুরু করে। ওয়্যারলেস মেসেজ পেয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন এবং ওসি (তদন্ত) মো. মোরশেদ জামানের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে ব্যাপক গুলি বিনিময় হয়। সঙ্গে সঙ্গে  ঘটনাস্থলে ছুটে যান পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান পিপিএম। এ সময় হামলাকারীরা পিছু হটে সবুজবাগ এলাকার বাসাবাড়ির গলিতে অবস্থান নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হয়। বন্দুকযুদ্ধে পুলিশের গুলিতে সন্ত্রাসী আবির রহমান (২৩) ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এদিকে সন্ত্রাসী এই হামলার ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম তপুর মৃত্যু হয়। অন্য আহতদের মধ্যে কনস্টেবল আনসারুল হক (২৮), রফিকুল, প্রশান্ত, তুষার, জুয়েল, মতিউর ও এএসআই মতিউরের অবস্থার অবনতি ঘটায় তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে কনস্টেবল আনসারুল হককে ময়মনসিংহ সিএমএইচে নেয়ার পর সেখানে তার মৃত্যু হয়। নিহত দুই কনস্টেবলের মধ্যে কনস্টেবল (নং-১৪৭৬) জহিরুল ইসলাম তপু ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া বালাশর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মজিদের ছেলে এবং কনস্টেবল (নং-১৪৩০) আনসারুল হক নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে। অন্যদিকে পুলিশের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা বন্দুকযুদ্ধ চলাকালে সবুজবাগ এলাকার ঝরণা রাণী ভৌমিক (৪৫) নামে এক গৃহবধূ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিজ বাসাতেই মৃত্যুবরণ করেন। নিহত গৃহবধূ ঝরণা রাণী ভৌমিক এলাকার ব্যবসায়ী গৌরাঙ্গ চন্দ্র ভৌমিকের স্ত্রী। এদিকে বন্দুকযুদ্ধ চলাকালে পুলিশ ও র‌্যাব অভিযান চালিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত সন্ত্রাসী শরীফুল ইসলাম ওরফে শফিউল ইসলাম ওরফে সাইফুল ইসলামকে ঘটনাস্থল সবুজবাগ এলাকার মাহাবুবুল আলম ভূঁইয়া সোহাগের বাসার সামনে টয়লেটের উত্তরপাশের সেফটি ট্যাংকের ওপর থেকে র‌্যাব এবং আবদুল হান্নান ভূঁইয়া বাবুলের বাসার আঙিনা থেকে জাহিদুল হক তানিমকে পুলিশ আটক করে। এ ঘটনায় চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনকারী পাকুন্দিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ সামসুদ্দীন বাদী হয়ে শরীফুল ইসলাম ওরফে শফিউল ইসলাম ওরফে সাইফুল ইসলাম এবং জাহিদুল হক তানিম এই দুইজনের নাম উল্লেখসহ আরো কিছু অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীকে আসামি করে রোববার কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয় ওসি (তদন্ত) মো. মোর্শেদ জামানকে। মামলা দায়েরের দিনই পুলিশের হাতে আটক হওয়া জাহিদুল হক তানিমকে আদালতের মাধ্যমে ১০দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
ঈদের দিন চরশোলাকিয়া সবুজবাগ এলাকার মুফতি মোহাম্মদ আলী (রহ.) জামে মসজিদ লাগোয়া মোড়ের চেকপোস্টে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মুসল্লিদের ভিড়ের সঙ্গে মিশে মাথায় পাগড়ি-টুপি ও পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত এক তরুণ ব্যাগ সঙ্গে নিয়ে চেকপোস্ট পেরোনোর চেষ্টা করলে তার গতিরোধ করে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য। এ সময় অতর্কিতে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে পুলিশের ওপর চাপাতি নিয়ে চড়াও হয় ওই তরুণ। সঙ্গে সঙ্গে ঘটানো হয় বোমার বিস্ফোরণ। বোমার বিস্ফোরণে কয়েক পুলিশ সদস্য মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কিছু পুলিশ সদস্য আত্মরক্ষার্থে পিছু হটেন। এর মধ্যেই মাটিতে পড়ে যাওয়া পুলিশদের চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে দুই সন্ত্রাসী। এ পরিস্থিতিতে পিছু হটে যাওয়া পুলিশ প্রস্তুতি নিয়ে সামনে আসে। সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে শুরু হয় গুলিবর্ষণ। সন্ত্রাসীরাও দ্রুততার সঙ্গে পাল্টা গুলি ছোড়া শুরু করে। ওয়্যারলেস মেসেজ পেয়ে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন এবং ওসি (তদন্ত) মো. মোর্শেদ জামানের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে ব্যাপক গুলিবিনিময় হয়। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে যান পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান পিপিএম। এ সময় হামলাকারীরা পিছু হটে সবুজবাগ এলাকার বাসাবাড়ির গলিতে অবস্থান নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হয়। বন্দুকযুদ্ধে পুলিশের গুলিতে সন্ত্রাসী আবির রহমান (২৩) ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এদিকে সন্ত্রাসী এই হামলার ঘটনায় আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম তপুর মৃত্যু হয়। অন্য আহতদের মধ্যে কনস্টেবল আনছারুল হক (২৮), রফিকুল, প্রশান্ত, তুষার, জুয়েল, মতিউর ও এএসআই মতিউরের অবস্থার অবনতি ঘটায় তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে কনস্টেবল আনসারুল হককে ময়মনসিংহ সিএমএইচ-এ নেয়ার পর সেখানে তার মৃত্যু হয়। নিহত দুই কনস্টেবলের মধ্যে কনস্টেবল (নং-১৪৭৬) জহিরুল ইসলাম তপু ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভাটিপাড়া বালাশর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মজিদের ছেলে এবং কনস্টেবল (নং-১৪৩০) আনসারুল হক নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে। অন্যদিকে পুলিশের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা বন্দুকযুদ্ধ চলাকালে সবুজবাগ এলাকার ঝরনা রানী ভৌমিক (৪৫) নামে এক গৃহবধূ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিজ বাসাতেই মৃত্যুবরণ করেন। নিহত গৃহবধূ ঝরনা রানী ভৌমিক এলাকার ব্যবসায়ী গৌরাঙ্গ চন্দ্র ভৌমিকের স্ত্রী। এদিকে বন্দুকযুদ্ধ চলাকালে পুলিশ ও র‌্যাব অভিযান চালিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত সন্ত্রাসী শরীফুল ইসলাম ওরফে শফিউল ইসলাম ওরফে সাইফুল ইসলামকে ঘটনাস্থল সবুজবাগ এলাকার মাহবুবুল আলম ভূঁইয়া সোহাগের বাসার সামনে টয়লেটের উত্তর পার্শ্বের সেফটিক ট্যাংক এর উপর থেকে র‌্যাব এবং আবদুল হান্নান ভূঁইয়া বাবুলের বাসার আঙিনা থেকে জাহিদুল হক তানিমকে পুলিশ আটক করে। এ ঘটনায় চেকপোস্টে দায়িত্ব পালনকারী পাকুন্দিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ সামসুদ্দীন বাদী হয়ে শরীফুল ইসলাম ওরফে শফিউল ইসলাম ওরফে সাইফুল ইসলাম এবং জাহিদুল হক তানিম এই দুইজনের নাম উল্লেখসহ আরো কিছু অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীকে আসামি করে রোববার কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয় ওসি (তদন্ত) মো. মোর্শেদ জামানকে। মামলা দায়েরের দিনই পুলিশের হাতে আটক হওয়া জাহিদুল হক তানিমকে আদালতের মাধ্যমে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *