পর্দার মন্দ মানুষেরা বাস্তবে যেমন

Slider বিনোদন ও মিডিয়া

 

 

21704_Binodon- Milu

 

 

 

 

 

 

সিনেমায় নায়কের পাশাপাশি গল্পের তাগিদে প্রয়োজন হয় একজন খলনায়কের। বিশ্বের সব দেশের সিনেমাতেই দেখা যায় এমন। দেখা যায় নায়ক বনাম খলনায়কের যুদ্ধ। ঢাকার ছবিতে এখন আর তেমন কোনো শক্তিমান খলনায়ক নেই। এক মিশা সওদাগর কয়েক বছর ধরে একাই প্রধান খলনায়কের ভূমিকায় টানা অভিনয় করছেন। জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন আকাশচুম্বী। তার পাশাপাশি আরও অভিনয় করছেন এটি এম শামসুজ্জামান, মিজু আহমেদ, সাদেক বা”চু, অমিত হাসানসহ অনেকে। তবে পর্দায় তাদের দর্শকরা মন্দ মানুষ হিসেবে দেখলেও বাস্তবে তারা কেমন এটা জানার প্রয়াসেই ঢাকার ছবির পাঁচ শীর্ষ খলনায়ককে নিয়ে সাজানো হয়েছে এ প্রতিবেদনÑ
এটিএম শামসুজ্জামান
প্রথম দিকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চল”িচত্র জীবন শুরু করেন এটিএম শামসুজ্জামান। অভিনেতা হিসেবে পর্দায় তার আগমন ১৯৬৫ সালের দিকে। ১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চল”িচত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর ‘লাঠিয়াল’, ‘অশিক্ষিত’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘স্বপ্নের নায়ক’সহ অসংখ্য চল”িচত্রে খল চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান। এটিএম শামসুজ্জামান অভিনয়ের জন্য স্বীকৃতি হিসেবে এ পর্যন্ত জাতীয় চল”িচত্র পুরস্কার পেয়েছেন পাঁচ বার। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সর্বো”চ সম্মাননা একুশে পদক। তার পুরো নাম আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান। ১৯৪১ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী জেলার ভোলাকোটের বড় বাড়ি। বতর্মানে ঢাকার সূত্রাপুরের দেবেন্দ্রনাথ দাশ লেনের ৪৬ নাম্বার বাড়িতে থাকেন। ম্যাট্রিক পাস করার পর ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট হাই স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষে জগন্নাথ কলেজ ভর্তি হন। তার পিতা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল এবং শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। মাতা নুরুন্নেসা বেগম। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শামসুজ্জামান সবার বড়। ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চল”িচত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন। এছাড়া প্রয়াত পরিচালক খান আতাউর রহমান, কাজী জহির, সুভাষ দত্তের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। প্রথম কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ চল”িচত্রের জন্য। ছবির পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা। এ ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চল”িচত্রে অভিষেক। এ পর্যন্ত শতাধিক ছবির চিত্রনাট্য ও কাহিনী লিখেছেন এটিএম শামসুজ্জামান। বাস্তব জীবনে সব সময়ই সাদা পোশাক পরতে পছন্দ করেন এ মানুষটি। নিয়মিত নামাজ পড়েন। বেশি মানুষের সঙ্গে কথা না বলে নিভৃতে একা ঘরে অবসরে বই পড়তে ভালোবাসেন তিনি। সাদামাটা কিš‘ সততার সঙ্গে জীবন কাটাতে পছন্দ করেন এই অভিনেতা।

আহমেদ শরীফ
দেশীয় চল”িচত্রে খলনায়ক চরিত্রে আহমেদ শরীফ এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী নাম। তার অভিনীত প্রথম ছবির নাম ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’। সুভাষ দত্ত পরিচালিত এ ছবিতে নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন আহমেদ শরীফ। তবে খলনায়ক হিসেবে ১৯৭৬ সালে তিনি প্রথম অভিনয় করেন দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর পরিচালনায় ‘বন্দুক’ ছবিতে। এ ছবিটি সুপারডুপার হিট হয়। এরপর এ পর্যন্ত প্রায় ৮শ’রও বেশি ছবিতে খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন এ সুঅভিনেতা। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বাসায় অবসরে ক্রিকেট খেলা ও খবর দেখতে বেশি পছন্দ করেন। আহমেদ শরীফ বলেন, অবসরে বইপড়া ও টিভি দেখা হয়। বিশেষ করে ক্রিকেট খেলা আমি একবার দেখতে বসলে কোনো বল বা ব্যাট দেখা মিস দিই না। টানা খেলা দেখি। ক্রিকেটে আমি আগে পাকিস্তানের সাপোর্টার থাকলেও বর্তমানে বাংলাদেশের খেলা দেখতে পছন্দ করি। তামিম ইকবালের খেলা আমার খুব পছন্দের। আর লেখকদের মধ্যে সমরেশ মজুমদার ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই পড়তে পছন্দ করি। স্ত্রী মেহরুন আহমেদ ও একমাত্র কন্যা আফিয়া মুবেশ্বীরাকে নিয়েই আহমেদ শরীফের পরিবার। একমাত্র মেয়ে আফিয়া ও লেভেল শেষ করে সম্প্রতি মালয়েশিয়া থেকে ‘আমেরিকান ডিগ্রি ট্রান্সফার প্রোগ্রাম’ বিষয়ে দুবছরের পড়াশোনা শেষ করেছেন। আহমেদ শরীফের স্ত্রী মেহরুন আহমেদ নরসিংদীতে আবদুল কাদের মোল্লা ইন্টা: স্কুলে (ইংরেজি মিডিয়াম) সংগীতের ক্লাস নেন। সেখানে খুব শিগগিরই আহমেদ শরীফও অভিনয়ের উপর ড্রামা ক্লাস করাবেন। আহমেদ শরীফ বর্তমানে উত্তরার চার নম্বর সেক্টরে থাকেন। আর অবসরে গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায় সময় কাটাতে পছন্দ করেন।

মিজু আহমেদ
শক্তিশালী খল অভিনেতা মিজু আহমেদ ১৯৭৮ সালে ‘তৃষ্ণা’ ছবির মাধ্যমে চল”িচত্রে নাম লেখান। শৈশব থেকেই কুষ্টিয়ার ¯’ানীয় নাট্যগোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। বড় পর্দায় এ পর্যন্ত প্রায় ৮০০টির মতো ছবি মুক্তি পেয়েছে তার। মিজু আহমেদ একাধিক ছবি প্রযোজনাও করেছেন। তার প্রযোজনা সং¯’ার নাম ফ্রেন্ডস মুভিজ। স্ত্রী পারভীন আহমেদ, দুই মেয়ে কেয়া ও মৌ এবং একমাত্র ছোট সন্তান হারসাতকে নিয়েই তার পরিবার। অবসরে ক্রিকেট খেলা দেখতে পছন্দ করেন তিনি। বললেন, বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা দেখতে বেশি পছন্দ করি। নিজেও একসময় খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত ছিলাম। খেলা দেখার পাশাপাশি নিয়মিত পাঁচওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন এই অভিনেতা। নীতি ও সততার সঙ্গে জীবন কাটানো এ খল অভিনেতা বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বহুবার। নিরপাদ সড়ক চাই আন্দোলনের সঙ্গেও তিনি যুক্ত।

মিশা সওদাগর
আশির দশকে নতুন মুখের সন্ধানে কার্যক্রমে নায়ক হয়ে আসেন মিশা সওদাগর। ছট্কু আহমেদ পরিচালিত এ ছবির নাম ছিল ‘চেতনা’। পরে তমিজউদ্দিন রিজভীর পরিচালনায় ‘আশা ভালোবাসা’ ছবিতে সর্বপ্রথম খল চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর ২০০০ সালের শুরু থেকে বলতে গেলে ঢালিউডের ছবি চলছে একমাত্র খলনায়ক মিশা সওদাগরের ওপর ভর করে। বছরের ৯৫ ভাগ ছবিতেই কাজ করতে হ”েছ তাকে। ফলে একদিকে এই শক্তিমান শিল্পী যেমন হাঁপিয়ে উঠছেন ঠিক তেমনি নির্মাতারাও তার শিডিউল পেতে অহরহ ঘাম ঝরা”েছন। পর্দায় খারাপ হলেও বাস্তবে এই মানুষটি বেশ সাদাসিদে। এ পর্যন্ত ৮৫০ এর বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। মিশা সওদাগর বলেন, পর্দায় আমি খারাপ মানুষ হলেও বাস্তবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতে পছন্দ করি। অনেক আগে থেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। এমনকি শুটিংয়ে নামাজের সময় হলে আমি কাজ করি না। শুক্রবারে শুটিং করি না। পরিবারকে ওইদিনটা সময় দেয়ার চেষ্টা করি। আমার দুই সন্তানের নাম ইয়োশি ও কোয়ারনি। মিশা সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। ইন্ডাস্ট্রিতে তার খুব কাছের বন্ধু ওমর সানী। কাজ না থাকলে বাইরে কখনো কোথায় আড্ডা দেন না মিশা। তার স্ত্রীর নাম মিতা। মিশার আসল নাম শাহিদ হাসান। তবে কিভাবে আসলো মিশা নামটা? সেটা কি তার ডাক নাম? নাকি বন্ধুরা তাকে আদর করে ডাকতো মিশা বলে না, ঘটনা জানা যায় ভিন্ন। ১৯৯৩ সালে বিয়ে করেন শাহিদ হাসান। তার স্ত্রীর নাম মিতা। স্ত্রীর নামের ‘মি’ আর শাহিদ নামের ‘শা’ দুয়ে মিলে আজকের মিশা। বিয়ের আগে হয়তো কেউই ভাবতেই পারেনি শাহিদ হাসান হয়ে যাবেন আজকের নম্বর ওয়ান খলনায়ক মিশা সওদাগর। চল”িচত্রে অনেক সংসার ভাঙার কারিগর হলেও বাস্তব জীবনের অনেক সুখী মিশা ও তার পরিবার। ২০০৮ সালে হজব্রতও পালন করেছেন এ অভিনেতা।

সাদেক বা”চু
তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। বর্তমানে ঢাকায় রাজারবাগের মোমেনবাগে থাকেন তিনি। তার স্ত্রী শাহানাজ জাহান। পরিবারে সাদেক বা”চুর দুই মেয়ে এক ছেলে। দুই মেয়ের নাম মেহজাবিন, নওশিন এবং এক ছেলের নাম সোহালিয়িন। সাদেক বা”চু বাংলা চল”িচত্রের অন্যতম খল অভিনেতা। মঞ্চ ও টিভি নাটক থেকে চল”িচত্রে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। ১৯৭৭-৭৮ সালে বিটিভির নিয়মিত শিল্পী হিসেবে অভিনয় শুরু করেন এ অভিনেতা। বিটিভিতে তার অভিনীত প্রথম নাটক ‘প্রথম অঙ্গীকার’। ১৯৮৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রামের সুমতি’ চল”িচত্রে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। সাদেক বা”চু  বলেন, অভিনয় ছাড়া জীবনে কিছুই শিখি নাই। আর আমার পরিবারকে দেখতে গিয়েই আমি মূলত দেরিতে বিয়ে করেছি। অভিনয় করে বাড়ি গাড়ি কিছুই করতে পারিনি। বাস্তব জীবনে কাজ না থাকলে আমি বই পড়তে পছন্দ করি। কাজী নজরুল ইসলামের গ্রš’ আমাকে বেশ টানে। তার লেখা ‘আমার কৈফিয়ত’ কবিতাটি আমার ভীষণ প্রিয়। শুটিং না থাকলে চিন্তা হয় পরিবারের। নামাজ পড়ে, বই পড়ে সময় কাটে আমার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *