রাতেই ২০ জনকে জবাই

Slider জাতীয়

 

untitled-1_222424

 

 

 

 

 

মেঝেতে রক্তের ছাপ। চারদিকে ছড়িয়ে বোমার স্পি্নন্টার ও গুলির খোসা। পড়ে ছিল চারটি অবিস্ফোরিত ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি)। খাবার টেবিলের নিচে একেকটি রক্তাক্ত মৃতদেহ। সবার গলায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত। কারও দেহে আবার গুলির চিহ্ন। কিছুক্ষণ আগেও যাদের হাতে ছিল কাঁটাচামচ, অল্পসময়ে সেই হাত রক্তস্নাত। মুহূর্তে নিভে যায় একেকটি প্রাণ। এ যেন মৃত্যুপুরী। জীবনের সব স্পন্দন সেখানে অতীত। গুলশানে ‘হলি আর্টিসান’ এবং ‘ও’কিচেন’ রেস্টুরেন্টে গতকাল শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর সফল কমান্ডো অভিযানের পর সেখানে এমন দৃশ্য দেখা যায়। ‘থান্ডারবোল্ট’ নামে ওই অভিযানে ছয় বন্দুকধারী নিহত হলেও শুক্রবার রাতেই রেস্টুরেন্টে ২০ জনকে গলা কেটে ও গুলি করে হত্যা করে তারা।

নিহতের মধ্যে ৯ জন নারী ও ১১ জন পুরুষ। তাদের মধ্যে ১৭ জন বিদেশি নাগরিক, একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ও দু’জন বাংলাদেশি নাগরিক। গতরাত পর্যন্ত নিহত সকলের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। মরদেহগুলো ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে রাখা হয়েছে। ট্রান্সকম গ্রুপের কর্ণধার লতিফুর রহমানের নাতি ফারাজ আইয়াজ হোসেন, ঢাকার ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান ক্রিয়েটিভসের সাবেক পরিচালক ইশরাত আখন্দ ও ল্যাভেন্ডার গ্রুপের মালিক মনজুর মোর্শেদের নাতনি অবিন্তা কবির নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নয়জন ইতালি, সাতজন জাপানের, একজন ভারতীয় আছেন। এ ছাড়া বন্দুকধারীদের পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- রিপন, বাঁধন, ডন, আকাশ ও বিকাশ। পুলিশের দাবি, তাদের বাড়ি উত্তরাঞ্চলে। তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন অব বাংলাদেশের (জেএমবি) নেতা। পুলিশ তালিকাভুক্ত এই জঙ্গিদের দীর্ঘদিন ধরে খুঁজে আসছিল। গুলশানের পুরো ঘটনা নিয়ে আজ পুলিশ সদর দপ্তরের বিবৃতি দেওয়ার কথা রয়েছে।

এ ছাড়া সেনাবাহিনীর কমান্ডো অপারেশনে তিন বিদেশি নাগরিকসহ ১৩ জনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

গতকাল দুপুরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনী গুলশানে ২০ জন নিহত হওয়ার কথা জানায়।

শুক্রবার রাত পৌনে ৯টায় রেস্টুরেন্টে ঢুকে সাত অস্ত্রধারী এলোপাতাড়ি গুলি করে বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে। অস্ত্রধারীদের সবাই একটি প্রাইভেটকারে অতিথি সেজে রেস্টুরেন্টে ঢুকেছিল। সবার কাছে ছিল বোমা, গুলি ও অস্ত্রভর্তি ব্যাগ। ১১ ঘণ্টা পর সেনাবাহিনীর ১২ মিনিটের সমন্বিত কমান্ডো অভিযানে জিম্মি নাটকের রক্তাক্ত অবসান হয়। এতে অভিযানকারীদের কেউ হতাহত হননি। তবে শুক্রবার রাতে জিম্মিদের উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালাতে গেলে বন্দুকধারীরা গুলি ও হাতবোমা নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশের দুই কর্মকর্তা মারা যান। আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ পুলিশ সদস্যসহ ৪০ জন। সব মিলিয়ে ২৮ জন নিহত হন।

এদিকে, গুলশানের সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা ও হতাহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। ঘটনার দ্রুত সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। এ ছাড়া দুঃসহ এ ঘটনার নিন্দা জানান বিশ্বনেতারা।

গতকাল রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন বর্বরোচিত এ হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত করার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। দু’দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়। জাপানের প্রধানমন্ত্রীও এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। রাজধানীসহ দেশব্যাপী নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। গুলশানে হামলার পর শুক্রবার রাতে এর দায় স্বীকার করে বার্তা দেয় আল কায়দার ভারতীয় উপমহাদেশীয় শাখা আনসার আল ইসলাম ও ইসলামিক স্টেট। তবে কারা, কেন, কী উদ্দেশ্যে এই হামলা করেছে, তা নিয়ে গতকাল পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ পর্যায় থেকে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকালও বলেছেন, জঙ্গিবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে। উগ্রপন্থিদের বিন্দুমাত্র ছাড় নয়। পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল বলেন, ‘গুলশানে যে পাঁচজন নিহত হয়েছে, তারা পুলিশের তালিকাভুক্ত জঙ্গি। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছিল। এ ঘটনায় তারা নিহত হলো। কোনো কিছু ঘটলেই আইএস দায় স্বীকার করে। এ ঘটনায় তারা দায় স্বীকার করেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সরকারপ্রধানের সময়োচিত সাহসী সিদ্ধান্ত: গতকাল দুপুরে সেনা অফিসার মেসে সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী বলেন, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে দুষ্কৃতকারীরা গুলশান ২ নম্বর সেকশনের ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিসান বেকারি নামে একটি রেস্তোরাঁয় গুলি ছুড়তে ছুড়তে ঢুকে পড়ে। রেস্তোরাঁর সবাইকে জিম্মি করে। এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সেখানে পেঁৗছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। পরে পুলিশ রেস্তোরাঁটি ঘিরে রেখে সন্ত্রাসীদের যথেচ্ছ কর্মকাণ্ড থেকে নিবৃত্ত করে। এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে অভিযান চালানোর আদেশ দেন সরকারপ্রধান। সেই আদেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ চালানোর পরিকল্পনা করে। প্রথমে ঘটনাস্থলে অবস্থানরত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর পর সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র‌্যাব সম্মিলিতভাবে অভিযান চালায়।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাঈম আশফাক চৌধুরী জানান, সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডোর নেতৃত্বে সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে কমান্ডো অভিযান শুরু হয়। এর ১২-১৩ মিনিটের মধ্যেই সব সন্ত্রাসীকে নির্মূল করে টার্গেট এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে যৌথ বাহিনী। অন্যান্য কার্যক্রম শেষে সকাল সাড়ে ৮টায় অভিযানের সফল সমাপ্তি ঘটে। অভিযানে তিন বিদেশি নাগরিকসহ মোট ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। অভিযানে ছয় সন্ত্রাসী নিহত হয় এবং সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযান শেষে তল্লাশির সময় ২০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তাদের বেশির ভাগকেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত চারটি পিস্তল, একটি ফোল্ডেড বাট একে-২২, চারটি অবিস্ফোরিত আইইডি, একটি ওয়াকিটকি সেট ও ধারালো দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। অভিযানে অংশ নেওয়া কেউ হতাহত হননি।

সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গতকাল রাতের অভিযানে অংশ নিয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তা শাহাদাতবরণ করেন। তারা সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলায় অংশ নেন। অকুতোভয় এই দুই কর্মকর্তার রুহের মাগফিরাত কামনা করেন তিনি।

নাঈম আশফাক চৌধুরী জানান, অভিযানে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা নিরলসভাবে সাহসিকতার সঙ্গে অংশ নেন। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় সার্বিক কৌশলের ব্যবহারের মাধ্যমে অতিদ্রুততার সঙ্গে এ অভিযান সফল করার জন্য সবাইকে কৃতজ্ঞতাও জানান তিনি।

তিনি বলেন, সরকারপ্রধানের সময়োচিত, দৃঢ়, সাহসী সিদ্ধান্ত ও সঠিক দিকনির্দেশনার জন্য এ অভিযান সফল হয়। তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনার অন্যান্য বিস্তারিত তথ্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরে জানানো হবে। অভিযান শেষে উদ্ধার মৃতদেহগুলো প্রচলিত নিয়ম মেনে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ময়নাতদন্ত করা হবে। নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে সেনাবাহিনীর প্রভোস্ট মার্শালের (০১৭৬৯০১২৫২৪) সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হয়েছে। সেনাসদরে এই সংবাদ সম্মেলনে তিন বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

বিভীষিকার সেই রাত: অপারেশন ‘থান্ডারবোল্ট’ সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর ওই রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী একাধিক কর্মকর্তা সিসিটিভির ফুটেজসহ নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে  জানান, একটি গাড়িতে বন্দুকধারীরা রেস্টুরেন্টে ঢোকে। ভেতরে প্রবেশ করেই তারা গুলি করতে থাকে। ভয় ও আতঙ্কে অনেকে টেবিলের নিচে আশ্রয় নেন। রেস্টুরেন্টের ওয়েটাররা বাথরুমে ঢুকে পড়েন। এরপর অস্ত্রধারীরা বাইরে থেকে বাথরুমের দরজা তালাবদ্ধ করে রাখে। শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে জিম্মিদের অধিকাংশকে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। বাংলাদেশি দু’জনসহ ১১ বিদেশি নারীকে বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাদের গলা, পেটসহ সারা শরীর কুপিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। রেস্টুরেন্টের ভেতরে কয়েকজনের লাশ একসঙ্গে পড়ে ছিল। কমান্ডে হামলার পর সিআইডির ক্রাইম সিনের সদস্যরা আলামত পরীক্ষা করেন। শুক্রবার রাত থেকেই রেস্টুরেন্টে আটকাপড়া অনেকের স্বজনের মোবাইলে খুদেবার্তা পাঠিয়ে যোগাযোগ করেন। তারা প্রাণ বাঁচানোর আকুতি জানান। এ ছাড়া স্বজনের কান্না আর শোকে গুলশানের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছিল।

হামলাকারী কারা: একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা  জানান, বন্দুকধারীরা বড় ধরনের জঙ্গি হামলা চালাতে সম্প্রতি উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকায় আসে। তারা জেএমবির সদস্য। তাদের সকলের বয়স ২২ থেকে ২৫-এর মধ্যে। জঙ্গিদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স’ গতকাল রাতে পাঁচ হামলাকারীর ছবি প্রকাশ করে। গুলশানে হামলায় সময় তাদের পরনে ছিল প্যান্ট, গেঞ্জি ও পায়ে কেডস। বন্দুকধারীদের একজনের গলায় ছিল লাল পাগড়ি। তিনজনের গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি ছিল। হামলার পর রেস্টুরেন্ট থেকে তিনটি একে-৪৭ রাইফেলসহ বিপুলসংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ছিল পিস্তল, একটি ফোল্ডেড বাট একে-২২, চারটি অবিস্ফোরিত আইইডি, একটি ওয়াকিটকি ও ধারালো দেশীয় অস্ত্র। তবে বন্দুকধারীদের কাছে সুইসাইডাল ভেস্ট পাওয়া যায়নি। বন্দুকধারীরা কমান্ডো হামলার সময় মারা গেছে। এই হামলার নেতৃত্ব দেয় রিপন। এর আগেও রাজধানীতে একাধিক ‘অপারেশনে’ রিপন সম্পৃক্ত ছিল। রেস্টুরেন্টের ছাদে কয়েকজন বিদেশিকে বন্দুকধারীরা অস্ত্রের মুখে হাঁটাহাঁটি করিয়েছে। এ ছাড়া কমান্ডো হামলার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তারা রেস্টুরেন্টের ভেতর আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এর আগে শুক্রবার রাতে বন্দুকধারীরা একেকজন হত্যা করে সেই ছবি তাদের ‘সদর দপ্তরে’ পোস্ট করতে থাকে। এর পরই ওই রাতে গুলশানের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

টার্গেট ছিল বিদেশিরা: দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বন্দুকধারীদের মূল টার্গেট ছিল বিদেশিরা। রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করেই তারা বিদেশিদের আলাদা করে ফেলে। জিম্মিকারীরা মুসলমানদের সূরা পড়তে বলে। পারভীন নামের বাংলাদেশি হিজাব পরিহিত নারী কলেমা পড়তে পারায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। শনিবার সকালে রেস্টুরেন্টের ভেতর দু’জন বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। এর পর তাদের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত হয়, রেস্টুরেন্টের ভেতরে থাকা বিদেশি নাগরিকদের কেউ বেঁচে নেই। এর পরই কমান্ডো অভিযান চালানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। হামলাকারীদের কেউ কৌশলে আগে থেকে ওই রেস্টুরেন্টে পরিচয় গোপন করে চাকরি নিয়েছিল কি-না তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ‘হলি আর্টিসান’ এবং ‘ও’কিচেন’ থেকে জীবিত উদ্ধার ১০ জন ওয়েটারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই ঘটনায় নিহতদের লাশের ময়নাতদন্ত ও পরে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।

রুদ্ধশ্বাস ১২ ঘণ্টা: শুক্রবার রাত পৌনে ৯টায় বন্দুকধারীদের হামলার পর থেকে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত গুলশানে ছিল শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। পুরো গুলশান এলাকায় ছিল ভীতিকর অবস্থা। প্রধান প্রধান সড়কে গতকালও যান চলাচল বন্ধ থাকে। আতঙ্ক ও উদ্বেগ ছিল সারাদেশেও। ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকায় সেনা, বিমান, নৌ, র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসের কয়েকশ’ সদস্য সশস্ত্র পাহারায় ছিলেন। শনিবার ভোররাত থেকে কমান্ডো অভিযান শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। রেস্তোরাঁর আশপাশের একাধিক ভবনে শুরু থেকেই র‌্যাবের সদস্যরা পাহারা বসান। ঘটনাস্থলের মানচিত্রসহ অনেক তথ্য নেয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরই মধ্যে হাতমাইকে বন্দুকধারীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেয়নি। গতকাল সকালে গুলশানে ঘটনাস্থলে যান সেনাপ্রধান জেনারেল আবুল বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক ও নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ। এর কিছু সময় পরই শুরু হয় ১২ মিনিটের ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’।

১৩ অ্যাম্বুলেন্সে লাশ নেওয়া হয় সিএমএইচে: সকালে কমান্ডো অভিযানের পর গতকাল বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারি থেকে উদ্ধার করা লাশগুলো সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হয়। পুলিশের ১৩টি অ্যাম্বুলেন্সে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে লাশগুলো বহন করা হয়। পরে ৭৯ নম্বর সড়কের মুখে ব্যারিকেড দিয়ে রাখা হয়। ডিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ঘটনাস্থল এখনও নিরাপদ বলে মনে করছে না পুলিশ। এ কারণে জায়গাটি ঘিরে রাখা হয়েছে। আপাতত সাংবাদিক বা অন্যদের সেখানে ঢুকতে দেওয়া হবে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করছে বলেও তিনি জানান।

গোয়েন্দা ব্যর্থতা: গুলশানের সুরক্ষিত কূটনৈতিক এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে কীভাবে ব্যাগ নিয়ে বন্দুকধারীরা নির্বিঘ্নে ঢুকল, সে নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। বড় ধরনের জঙ্গি হামলা হতে পারে- এমন গোয়েন্দা তথ্য থাকার পরও পুলিশ পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়নি। এ ছাড়া রেস্টুরেন্টের ভেতরের পরিস্থিতি সঠিক মূল্যায়ন না করেই সেখানে প্রথম দফায় অভিযানে যায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বন্দুকধারীরা হাতবোমা ও গুলি ছুড়লে পুলিশের ৩০ সদস্যসহ ৪০ জন আহত হন। গুরুতর আহত হয়ে শুক্রবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এসি রবিউল করিম ও ওসি সালাহউদ্দিন খান।

নিহতদের পরিচয়: নিহত বিদেশিদের মধ্যে ১০ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- ইতালির বায়িং হাউস স্টুডিও টেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাদিয়া বেনেদিত্তো, আরেক ইতালীয় বায়িং হাউস ডেকাওয়ার্ল্ডের পরিচালক ভিনসেনজো ডি ভিনসেজা, অ্যাডেল, মারকো, মারিয়া, সিমিন, ক্রিশ্চিয়ান রোসি, ক্লাদিও ক্যাপেলি ও সিমোনা মন্টি। নিহত আরেক একজন হলেন ভারতীয় নাগরিক তারুশি জেইন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ায় পড়াশোনা করতেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *