প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, ‘বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। বিচারকেরা সম্পূর্ণ স্বাধীন। বিচারকাজে কোনো হস্তক্ষেপ হয় না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের প্রশ্নে আমার শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতেও কারও সঙ্গে এ বিষয়ে আপস নেই।’
দেশব্যাপী সফরের অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার কুমিল্লায় নিম্ন আদালতের বিচার কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে জেলা আইনজীবী সমিতির সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সাক্ষী না এলে মামলা আইন অনুযায়ী চালাতে হবে। যথাসময়ে সাক্ষীদের আদালতে হাজির করার ব্যাপারে আদালত (কোর্ট) পুলিশ, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। তা না হলে মামলাজট লেগেই থাকবে। আমি এ অবস্থা দেখতে চাই না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের প্রশ্নে আমার শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতেও কারও সঙ্গে এ বিষয়ে আপস নেই।’
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, বিচারপ্রার্থীরা দিনের পর দিন আদালতের দুয়ারে এসে হয়রানির শিকার হয়ে ফিরে যাবেন, এটা হতে দেওয়া যায় না। বিভিন্ন আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে বিচারকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, সাক্ষী না আসার কারণে অনেক মামলা বছরের পর বছর ধরে ঝুলছে। মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সবার ইতিবাচক আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকতে হবে।
প্রধান বিচারপতি কুমিল্লার আদালতের বিভিন্ন কক্ষ ও এজলাসের অবস্থা দেখে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোর্টগুলোতে ঠিকমতো বসার জায়গা নেই। ফাইল রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। কোর্টের প্রত্যেকটি কক্ষ ছোট ছোট। আলো-বাতাস ঠিকমতো পাওয়া যায় না। দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। আর এ অবস্থার মধ্যেই মামলা নিয়ে আমাদের বিচারক, আইনজীবী থেকে শুরু করে বাদী-বিবাদী সবাই কষ্ট করছেন।’
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অসংখ্য মামলা ও বিচারক অপ্রতুলতা নিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এ চিত্র সারা দেশেরই। যেখানে মামলা বেশি এবং যেখানে বিচারক-সংকট, সেখানে বিচারক নিয়োগ দেব। এটা শিগগিরই হচ্ছে।
কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. সফিকুল আলমের সভাপতিত্বে ও আইনজীবী সৈয়দ নুরুর রহমানের সঞ্চালনায় ওই মতবিনিময় সভা হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য কাইমুল হক, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সৈয়দ আবদুল্লাহ, আবদুর রেজ্জাক, কাজী নাজমুস সাদাত ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ হ ম তাইফুর আলম প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কুমিল্লা জেলা সরকারি কৌঁসুলি মোস্তাফিজুর রহমান জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার দিলজার হোসেন, বিশেষ কর্মকর্তা হোসনেয়ারা আক্তার ও প্রধান বিচারপতির বিশেষ অফিসার মো. সাব্বির ফয়েজ প্রমুখ।
মতবিনিময় সভা শেষে বিকেল পাঁচটায় কুমিল্লা সার্কিট হাউসে কুমিল্লার আদালতে কর্মরত বিচারকদের সঙ্গে বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ মো. নুরুল ইসলাম। রাতে তিনি কুমিল্লা সার্কিট হাউসে অবস্থান করেন।