গুপ্তহত্যা প্রতিহত করার প্রত্যয় ১৪ দলের

Slider জাতীয়

 

19405_f3

 

 

 

 

 

 

গুপ্তহত্যা প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। গুপ্তহত্যার ঘটনায় দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে জোটের পক্ষ থেকে। গুপ্তহত্যা প্রতিরোধে সারা দেশের শহর-গ্রাম-পাড়া-মহল্লায় আগামী ১৫ থেকে ২১শে জুলাই প্রতিবাদ
সপ্তাহ পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। জঙ্গিবাদ ও গুপ্তহত্যার প্রতিবাদে গতকাল দেশব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত সারা দেশে এই কর্মসূচির পালিত হয়েছে। রাজধানীর গাবতলী, শ্যামলী, আসাদ গেট, ২৭ নম্বর রোড, রাসেল স্কয়ার, গ্রিন রোড, বসুন্ধরা, সোনারগাঁও হোটেল, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, প্রেস ক্লাব, পল্টন মোড়, নূর হোসেন স্কয়ার, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার, গুলিস্তান পার্ক, ইত্তেফাক মোড়, রাজধানী মার্কেট, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা মোড় পর্যন্ত ১৯টি পয়েন্টে ১৪ দলের নেতাকর্মীরা রাস্তার পাশে দাঁড়ান। এদিকে ১৪ দলীয় জোটের বাইরে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত বিএনএ এর পক্ষ থেকে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেয়। প্রেস ক্লাব ও শাহবাগ এলাকায় তার নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী ব্যানারসহ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে: রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রাসেল স্কয়ারের সামনে ১৪ দল আয়োজিত মানববন্ধন সমাবেশে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ শান্তির দেশ। এটাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য বিএনপি-জামায়াত ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। বিএনপি এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপ শুরু করে যখন তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল। তখন শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য তারা ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে। যে হামলায় আইভী রহমানসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী নিহত এবং আহত হন। এ ছাড়াও তাদের সময়ে দশ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ে।
আজকেও তারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। এ কারণে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া প্রতিদিন ইফতারের সময় আওয়ামী লীগের ওপর দোষারোপ চাপিয়ে হত্যাকাণ্ডের খুনিদের আড়াল করে প্রকাশ্যেই তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। খালেদা জিয়া একজন হতাশ নেত্রী। বিগত সময়ে সরকার পতনের নামে বিএনপি-জামায়াতের টানা অবরোধ-হরতালের সময় আগুন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সুতরাং আজকেও অশান্ত পরিবেশের জন্য তিনিই দায়ী। তার নির্দেশেই নিরীহ মানুষকে গুপ্তহত্যা করা হচ্ছে। যাতে প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের দেশগুলো সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে।
১৫-২১শে জুলাই প্রতিরোধ সপ্তাহ পালনের আহ্বান
এদিকে  গুপ্তহত্যা প্রতিরোধে সারা দেশের শহর-গ্রাম-পাড়া-মহল্লায় আগামী ১৫ই জুলাই থেকে ২১শে জুলাই প্রতিবাদ সপ্তাহ পালনের আহ্বান জানিয়েছেন ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গেটে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, দেশের জঙ্গিবাদ ও গুপ্তহত্যার প্রতিরোধের জন্য দেশের প্রগতিশীল সকল শক্তি এগিয়ে আসতে হবে। গুপ্ত হত্যাকারীদের প্রতিরোধ করতে সারা দেশের শহর-গ্রাম-পাড়া-মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। এ সময় বিএনপি নেতাদের ঐক্যের কথা তুলে ধরে নাসিম বলেন, ঐক্য চান ঐক্য হবে। আগে সাহস থাকলে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে ঘোষণা দিন জামায়াত আপনাদের সঙ্গে থাকবে না। তাহলে আমরা তখন চিন্তা করে দেখব। জোটের অন্যতম নেতা ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আজকের এই মানববন্ধনে জনগণের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে মাদারীপুরের শিক্ষক হত্যাচেষ্টাকারী ফাহিমকে যেমনভাবে ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এমন ভাবে সারা দেশে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মানববন্ধনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে পেট্রল বোমার তাণ্ডব চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল। সরকার পতনে ব্যর্থ হয়ে এখন গুপ্তহত্যায় জড়িয়ে পড়েছে। বেগম খালেদা জিয়া তার রূপ পরিবর্তন করতে পারেনি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মনে করেছিলেন গুপ্তহত্যার মাধ্যমে সরকারকে উৎখাত করতে পারবেন। কিন্তু বাংলার মাটিতে এটা সম্ভব নয়। এদেশের মানুষ গুপ্তহত্যা পছন্দ করে না। খালেদা জিয়ার পেট্রল বোমা যেভাবে বন্ধ হয়েছে একই ভাবে এদেশে গুপ্তহত্যা বন্ধ হয়ে যাবে। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, জাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, জেপির শেখ শহিদুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন।
বড় ধরনের কর্মসূচি চান কাদের :
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসকে চিরতরে এদেশ থেকে বিড়ারিত করতে বড় ধরনের অ্যাকশনধর্মী কর্মসূচি দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজধানীর আসাদগেটে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীরা তলে তলে বড় ধরনের আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই শুধু মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি দিয়ে তাদের প্রতিহত করা সম্ভব হবে না। তাদেরকে চিরতরে এই দেশ থেকে বিতাড়িত ও নির্মূল করতে হলে অ্যাকশনধর্মী কর্মসূচি নেওয়া উচিত।
আসাদ গেট পয়েন্টে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
যানজটে দুর্ভোগ: এদিকে মানববন্ধনের আগে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। বিকাল থেকে শুরু হওয়া মানববন্ধন কর্মসূচিতে নেতাকর্মীরা অংশ নিতে আরও আগে থেকে রাস্তার পাশে অবস্থান নেন। চারটার পর তারা অনেকে পায়ে হেঁটে যার যার গন্তব্যে রওনা দেন। এতে বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় তীব্র যানজট দেখা দেয়। এ যানজট লেগে ছিল ইফতারের সময় পর্যন্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *