১৬৬টির চূড়ান্ত রায় এ মাসেই

Slider বাংলার আদালত

 

8424_thumbM_f2

 

 

 

 

পূর্ণাঙ্গ রায় লেখার জন্য অবসরপ্রাপ্ত দুই বিচারপতির কাছে বছরের পর বছর ঝুলে থাকা বহুল আলোচিত ১৬৮ মামলা নিয়ে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তির অবসান হতে যাচ্ছে। ছয় থেকে দুই বছর পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ রায় লেখার জন্য অপেক্ষমাণ এসব মামলার মধ্যে ১৬৬টি মামলার চূড়ান্ত রায় এ মাসের মধ্যেই প্রকাশ করা হবে। ইতিমধ্যে ১৬০টিরও বেশি মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা শেষ হয়েছে। তবে বহুল আলোচিত রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) সংক্রান্ত মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় এখনই লেখা হচ্ছে না।
আইনজীবীরা বলছেন, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার কারণেই পুনঃশুনানি না করে বছরের পর বছর ঝুলে থাকা ১৬৬টি মামলার দ্রুত পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা সম্ভব হয়েছে। এটি বিচার বিভাগে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের জটিলতা এড়াতেও এ দৃষ্টান্ত সহায়ক হবে। সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধান বিচারপতির প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের আলোকে ১৬৮টি মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় লেখার দায়িত্ব গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রধান বিচারপতি নিজে পূর্ণাঙ্গ রায় লেখার জন্য রাখেন ২৬টি মামলা। এ ছাড়া প্রধান বিচারপতির নির্দেশক্রমে সুপ্রিম কোর্ট থেকে আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞাকে ৩৯টি, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানাকে ৩টি, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে ১৩টি, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীকে ৫১টি এবং বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে ৩৬টি মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় লেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট বিচারপতিদের দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রধান বিচারপতি ইতিমধ্যে তার কাছে থাকা ২৪টি মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা শেষ করে স্বাক্ষরও করেছেন। শিগগিরই ওই রায়গুলো আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের অন্য বিচারপতিদের কাছে স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হবে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দুটি মামলার নথি এখনও প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দপ্তরে রয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম সংক্রান্ত মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রধান বিচারপতি লিখতে পারেন।

তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই মামলায় পূর্ণাঙ্গ রায় লেখার আগে আপিল বিভাগে এ বিষয়ে ফের শুনানি নেওয়া হতে পারে। এটি এখনও চিন্তা-ভাবনার পর্যায়ে রয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম সংক্রান্ত এই মামলায় সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছিলেন। এর পর থেকে বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের কাছেই এই মামলার নথি পূর্ণাঙ্গ রায় লেখার জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। অবসরের পর রায় লেখা নিয়ে তুমুল বিতর্কের মধ্যে গত এপ্রিলের শেষ দিকে ওই মামলাসহ তার কাছে থাকা ৯টি মামলা এবং বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর কাছে থাকা ১৬১টি মামলার নথি ফেরত নেন বর্তমান প্রধান বিচারপতি।

আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট অন্য বিচারপতিদের দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কাছে থাকা ৭টি মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা এখনও শেষ হয়নি। তবে অন্যদের মধ্যে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী তাদের কাছে থাকা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা শেষ করেছেন। প্রশাসনিক বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই সংশ্লিষ্ট বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর ওই রায়গুলো বিচারপ্রার্থীদের জন্য প্রকাশ করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম  বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় লেখার জন্য আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট বিচারপতিদের মধ্যে মামলার নথিগুলো বিতরণ করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি পাওয়া গেলেই বিচারপ্রার্থীদের জন্য প্রকাশ করা হবে।’

গত ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বাণীতে অবসরের পরে রায় লেখাকে সংবিধান পরিপন্থী হিসেবে উল্লেখ করেন। এর ব্যাখ্যায় প্রধান বিচারপতি তার বাণীতে বলেন, ‘কোনো বিচারপতি অবসর গ্রহণের পর তিনি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে গণ্য হন বিধায় তার গৃহীত শপথও বহাল থাকে না।’ এ নিয়ে আইন অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় দেখা দেয়। ওই প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই ২৮ এপ্রিল পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা শেষ না হওয়া ১৬৮টি মামলা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দুটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় পুনঃশুনানির জন্য অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মধ্যে অবসরে যাওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের কাছে ৯টি এবং আপিল বিভাগের বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর কাছে ১৬১টি মামলা পূর্ণাঙ্গ রায় লেখার জন্য অপেক্ষমাণ ছিল। দীর্ঘদিনেও তারা পূর্ণাঙ্গ রায় লিখে জমা না দেওয়া ১৬৮ মামলা পুনঃশুনানির সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি। তবে গত ৫ মে সংশ্লিষ্ট মামলার আইনজীবী আদালতের পুনঃশুনানির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানালে প্রধান বিচারপতি তার আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। ওই দিন আদালতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা যাচাই-বাছাই করছি। এটা (পুনঃশুনানি) হচ্ছে না। আপনাদের আমি কথা দিচ্ছি, সব রায় এক মাসের মধ্যে দিয়ে দেব। আমি দায়িত্ব নিয়েছি। দু-চারটি মামলায় প্রয়োজনে পুনঃশুনানি হতে পারে।’

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন  বলেন, ১৬৮ মামলার পুনঃশুনানির সিদ্ধান্ত দিয়ে প্রধান বিচারপতি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ তৈরি করেছিলেন। তবে পরে তিনি আইনজীবীদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সেই উদ্বেগের অবসান ঘটিয়েছেন। এখন দ্রুত পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা শেষ হলে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের অপেক্ষারও অবসান ঘটবে। বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক  বলেন, ‘পুনঃশুনানির ফলে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা এবং দীর্ঘসূত্রতা দেখা দিত। সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে প্রধান বিচারপতি পরে যে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এক মাসের মধ্যে রায় লেখা শেষ হওয়ায় সেটাই প্রমাণ করে।’ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘বিচার বিভাগের ইতিহাসে এ ঘটনা নজিরবিহীন। দ্রুত সময়ের মধ্যে রায় লেখা শেষ করে প্রধান বিচারপতি প্রমাণ করলেন, সদিচ্ছা থাকলে বছরের পর বছর পূর্ণাঙ্গ রায় লেখার জন্য মামলাগুলো ঝুলে থাকে না। খন্দকার মাহবুব হোসেন আরও বলেন, উচ্চ আদালতে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় অবকাশকালীন ছুটি থাকে। বিচারপতিরা ইচ্ছা করলেই অবসরে যাওয়ার আগে রায় লেখার কাজ শেষ করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *