গাজীপুর জেলা পরিক্রমা-৯- রাজনীতিতে কারো সর্বানাশ, কারো ভাদ্রমাস

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় ফুলজান বিবির বাংলা রাজনীতি

DSC02614

 

শিহাব সুমন/আনোয়ার হোসেন, গাজীপুর থেকে ফিরে: আওয়ামীলীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে গাজীপুর জেলায় কারো সর্বানাশ হয়েছে। আবার কারো ঘরে ভাদ্রমাসের ধুম পড়েছে। যারা ভাদ্রমাসে আছেন তারা গাজীপুর ছেড়ে ঢাকার উত্তরা সহ অভিজাত এলাকায় বাসা নিয়ে বসবাস করছেন। আর যাদের সর্বনাশ হচ্ছে তারা গাজীপুরেই থাকছেন। রাজনীতির মাঠে এই বৈষম্য এখন ওপেন। ভাল সময় আসলে গাজীপুর ছেড়ে ঢাকায় চলে যান নেতারা। আর খারাপ সময়ে গাজীপুরেই থেকে যান। অবশ্য ভাল সময়ে অনেক নেতা গাজীপুরেও থাকেন এটাও সত্য। কিন্তু অভিজাত নেতারা ঢাকায় থাকতে পছন্দ করেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজনৈতিক ভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা শতাধিক নেতা ঢাকার উত্তরা, গুলশান, মিরপুর, ধানমন্ডি ও যাত্রাবাড়িতে বসবাস করছেন। ঢাকায় থাকা গাজীপুরের রাজনীতিতে চেনামুখের ওই সকল নেতাদের মধ্যে বিএনপির নেতার সংখ্যাই বেশী। মামলা হামলার ভয়ে বিএনপির নেতারাই বেশী করে ঢাকায় থাকছেন। বিএনপির আমলে সুবিধাভোগী কিছু নেতা এখন ঢাকায় থাকেন। দলের দুর্দিনে তারা আত্মগোপনে  থেকে ঢাকার কেন্দ্রিয় অফিসে যোগাযোগ রাখছেন।

তথ্য পাওয়া গেছে., ঢাকার উত্তরায় গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন একটি অফিস করেছেন। ওই খানে গাজীপুর জেলা বিএনপি, অংগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা মিলিত হন। মিলন সাহেবের সঙ্গে দেখা করলেই পদ পদবী নিশ্চিত ভেবে তারা ঢাকায় বসে গাজীপুরের রাজনীতি করছেন। এছাড়া বিএনপির সিনিয়র নেতা আ স ম হান্নান শাহ, অধ্যাপক এম এ মান্নান সহ অনেক নেতা ঢাকায় থাকেন।  দলের সুবিধাজনক সময়ে তারা আবার গাজীপুরে ঝাঁকে ঝাঁকে চলে আসেন। আর তখন খেয়ে না খেয়ে থাকা নেতারা পদ তো দুরে থাক দলীয় অফিসে বসার জায়গাও পাবেন না। এছাড়া অনেক নেতা আছেন যারা টাকা পয়সার অভাবে মামলায় হাজিরা দিতে না পেরে ঢাকা শহরে আত্মীয় স্বজনের বাসায় অবস্থান করছেন।

গাজীপুরের রাজনীতি ঢাকায় স্থানান্তরের পদ্ধতি অনুসরণ করছেন মাঠ পর্যায়ের অনেক নেতা। উপজেলা ছেড়ে অনেকে জেলায় বসবাস করছেন। অনেকে আবার গ্রাম ও ইউনিয়ন ছেড়ে  উপজেলা শহর বা বিভিন্ন উপ-শহরে বসবাস করছেন। আর ফাঁকে ফাঁকে এলাকায় গিয়ে কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।

বিএনপি ও আওয়ামীলীগের অসংখ্য নেতা রয়েছেন যারা ঢাকায় স্বপরিবারে বসবাস করছেন। নিজ জেলায় মাঝে মাঝে তারা কয়েক ঘন্টার জন্য বেড়াতে আসেন। ওই সময় তাদের ভক্তবৃন্ধ আগত নেতাদের শুভেচ্ছা জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। তবে অনেক নেতা রয়েছেন যারা প্রতি শুক্রবার নিজ এলাকায় এসে জুমার নামাজ আদায় করেন। ওই সময় কর্মীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়। গনতান্ত্রিক ভাবধারায় বিশেষায়িত রাজনীতির কারণে আজ মাঠের নেতারা মাঠে নেই। তারা বড় বড় শহরে বসবাস করে ছোট শহরের রাজনীতি পরিচালনা করছেন।

গাজীপুর জেলার রাজনীতিতে এই অভিজাত সংস্কৃতি চালু হওয়ায় প্রধান দুই দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মাঠ পর্যায়ের কর্মীর সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। ক্ষমতাসীন সরকারের জুুলুম নির্যাতনের কারণে ও নেতারা জেলায় না থাকায় বিএনপির কর্মীরা মাঠে নেই। আর ক্ষমতার সাদ আহরণের জন্য ঢাকামুখি ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা, মন্ত্রী, এমপি ও সরকারী লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফলে তারা আর গাজীপুরে আসার সময়ও তেমন পাচ্ছেন না।  এই সব কারণে মুলত দুই দলেই মাঠ পর্যায়ে কর্মী শুন্য হয়ে পড়ছে।

জানা গেছে, গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর সরকারী বাসভবনে গিয়ে নিজ এলাকার লোকদের দেখা করতে হয়। তার নিজ নির্বাচনী এলাকা গাজীপুর-১(কালিয়াকৈর)  এর অনেক সাধারণ মানুষ এই কথা বলেছেন। তাদের দাবি, মন্ত্রী যদি সপ্তাহে একদিন নির্বাচনী এলাকায় অফিস করতেন তবে তাদের সুবিধা হত। গাজীপুর-৫(কালিগঞ্জ) আসনের এমপি মেহের আফরোজ চুমকি এখন প্রতিমন্ত্রী। তিনিও একই স্টাইলে রাজনীতি করছেন।

গাজীপুর-২(সদর-টঙ্গী)  আসনের এমপি জাহিদ আহসান রাসেল টঙ্গীতে নিজ বাসায় বসলেও উত্তরায় বসবাস করেন। গাজীপুর-৩(শ্রীপুর) আসনের এমপি এড. রহমত আলী ঢাকায় স্থায়ীভাবেই বসবাস করেন। একটি স্বাক্ষর আনতে হলে কাউকে শ্রীপুর থেকে ঢাকায় যেতে হয়।

গাজীপুর-৪( কাপাসিয়া) আসনের এমপি সিমিন হোসেন রিমি ঢাকার বাসিন্দা আগে থেকেই। তাই বাসায় যোগাযোগ করা ছাড়া তার নিজ নির্বাচনী এলাকার লোকজনের আর কিছুই করণীয় নেই।

সাধারণ মানুষ মনে করেন, জনপ্রতিনিধিরা নিজ এলাকায় থাকলে তাদের সুবিধা হয়। যে কোন প্রয়োজনে তারা এমপির সঙ্গে দেখা করতে পারেন যে কোন সময়। আর এই ভাবে তারা ঢাকায় চলে গেলে দেখা সাক্ষাত করতে ঢাকায় যেতে হয়। ফলে অনেক অসহায় ও  গরীব মানুষ ঢাকায় যাওয়া আসার ভাড়া জোগার করতে না পেরে আর যেতেই পারেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *