কোনটার যন্ত্রণা বেশি আমি জানি না’

Slider খেলা জাতীয়

ff93c014308fa8d07283e8320783acde-Diego

আর্জেন্টাইনরা বরাবরই একটু খ্যাপা। আবেগে টইটম্বুর। আর্জেন্টিনায় খ্যাপা-পাগলাটেদের আদর করে ডাকা হয় ‘এল লোকো’। বুয়েনস এইরেসের রাস্তায় বেরোলে নাকি দশজনের মধ্যে আটজনকেই পাওয়া যাবে যার নাম এল লোকো!
তবে এই মুহূর্তে আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় এল লোকো ডিয়েগো সিমিওনে; যিনি এল লোকোদের শিরোমণি আরেক ডিয়েগো, ম্যারাডোনাকেও পাগলামিতে ছাড়িয়ে গেছেন। এত আবেগ, এত আবেগ!
এই আবেগ সিমিওনে শিষ্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে দেন। তাঁর রণকৌশল নিয়ে অনেকের প্রশ্ন আছে। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের শরীরনির্ভর খেলা নিয়েই কম সমালোচনা নেই। কিন্তু ফুটবল এখন এমন এক যুগে চলে এসেছে, যেখানে টাকা দিয়ে বাঘের দুধ অনায়াসে কিনে ফেলছে বড়লোক ক্লাবগুলো; অ্যাটলেটিকোর মতো ছোট দলগুলো করবেই বা কী!
টানা তিন বছরে দুবার দলকে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে নিয়ে গেলেন। দল অসহায়ভাবে হারলেও একটা সান্ত্বনা পেতেন। কিন্তু গতবার জিততে জিততে একেবারে নির্ধারিত সময়ের শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়াল। সেখানেই হার। আর এবার?
দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের লড়াই করে ম্যাচে সমতা এনে শেষ পর্যন্ত হার টাইব্রেকার নামের লটারিতে! আবেগটা লুকিয়ে রাখার একদমই চেষ্টা করলেন না সিমিওনে। এভাবে হারের পর শিষ্যদের সান্ত্বনা দেওয়া দরকার। কিন্তু সিমিওনেকে সান্ত্বনা দেবে কে!

ম্যাচ শেষে বললেন, ‘আমি এমন একপর্যায়ে আছি, বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আমাকে ভাবতে হবে। আপনি যখন শরীরের শেষ রক্তবিন্দুও দিয়ে দেবেন, তবু সেটা যথেষ্ট হবে না, কী করে মেনে নেবেন! দারুণ তিনটি বছর কাটালাম, কিন্তু আমি আজ মোটেও এতটুকু খুশি নই। জানি না কোনটার যন্ত্রণা বেশি, এই ফাইনালটি, নাকি গতবারেরটার। ওদের জন্য খারাপ লাগছে, যারা আমাদের খেলা দেখার জন্য এত দূর এসেছে।’

কাল সার্জিও রামোসের গোলের পর টিভি পর্দায় এক নজর দেখানো সেই অ্যাটলেটিকো-সমর্থকটাই যেন পুরো দলের প্রতীক। দেখে বোঝাই যায়, খুবই সাধারণ এক পরিবারের নারী। চেহারায় জীবনযুদ্ধের ছাপ। রামোসের গোলের পর যিনি সব হারানোর শঙ্কায় ডুকরে কেঁদে উঠলেন। তখনো যে জানতেন না, কান্নার জল জমিয়ে রাখতে হবে ম্যাচের শেষ অংশের জন্যও।

অ্যাটলেটিকো ক্লাবটাই ওই সমর্থকের মতো। রাজধানী মাদ্রিদেরই ক্লাব, কিন্তু রিয়াল বা রয়্যালের রাজকীয়তা নেই। রাজন্যদের আনুকূল্য কখনো পায়নি, চায়ওনি। ঠিক যেন বিশাল অট্টালিকা বা প্রাসাদের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা বস্তি। কিন্তু তবু রাজাদের চোখরাঙানিতে কখনো ডরায়নি। নিজেদের সাধ্যমতোই চেষ্টা করেছে। করে যাচ্ছে।

আর এই ক্লাবেই একসময় খেলে যাওয়া সিমিওনে প্রতিদান দিতে এসে অ্যাটলেটিকোকে তো নিয়ে গেছেন আরেক উচ্চতায়। বার্সা-রিয়ালের আধিপত্য ভেঙেছেন। সেটাও সাধারণ এত দল নিয়েই।

এই হিসাবটাই দেখুন। রিয়ালে রোনালদো আর গ্যারেল বেলের দাম ১৯০ মিলিয়ন ইউরো পেরিয়ে যায়। অথচ গোটা অ্যাটলেটিকো স্কোয়াডের খেলোয়াড়দের মোট দাম ১৪৪ মিলিয়ন ইউরো! অতি সাধারণ দল নিয়েও এত দূর আসাটাই তো অসাধারণ এক রূপকথা। সেটাও এমন এক সময়ে, যখন অ্যাটলেকোর মতো দলগুলো বাধ্য হয় দলের সেরা, তারকা হয়ে উঠে বড় ক্লাবের নজরে পড়া খেলোয়াড়দের বেচে দিয়ে আবারও নতুন অচেনা খেলোয়াড়দের এনে লড়াই করতে। ফ্যালকাও গেলে কস্তারা বেরিয়ে আসে। কস্তা গেলে উঠে আসে গ্রিজমানরা।

কিন্তু কাল সিমিওনের কথায় ইঙ্গিত থাকল অ্যাটলেটিকো ছেড়ে দেওয়ার। হয়তো আর পারছেন না! তীব্র আবেগের পর যে ঘিরে ধরে অবসাদ! সিমিওনে কি সত্যিই চলে যাবেন? লড়াইটায় তো আসল জয় এখনো বাকি, এল লোকো!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *