১ বছরে ছোলার দাম দ্বিগুণ

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

15104_b4

 

 

 

 

রমজান মাসকে কেন্দ্র করে প্রতি বছরই বেড়ে যায় ভোগ্যপণ্যের দাম। এর মধ্যে চাহিদার শীর্ষে থাকা ছোলার দাম বেড়ে যায় বেশি। পণ্যটির দাম বাড়ার প্রবণতা প্রতি বছরই ঘটে। তবে এবার রমজান মাসের প্রায় দেড় মাস আগে থেকেই অস্থির পণ্যটির বাজার। সর্বশেষ গতকাল প্রতিকেজি ছোলা ১১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। গত সপ্তাহে এর দাম ছিল ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা। এক বছরে পণ্যটির দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি)’র তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসের ব্যবধানে ভোক্তা পর্যায়ে ছোলার দাম বেড়েছে ১৪.২০ শতাংশ। খুচরা বাজারে গত মাসে ছোলা প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৭৮ থেকে ৮৪ টাকা। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৮৮ টাকা। গত দুই দিন ধরে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। তবে খুচরা বাজারে ব্যবসায়ীরা প্রতিকেজি ছোলার দাম চাইছেন ১১০ টাকা।
জানা গেছে, গত বছর এ সময়ে পাইকারি বাজারে ছোলা বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা কেজি। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৭৫ থেকে ৮২ টাকা পর্যন্ত। দামের পার্থক্য হয়েছে ২০ থেকে ২২ টাকা। আর খুচরা বাজারে এই ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত এক মাস ধরেই অস্থির রয়েছে ছোলা ও ডাল জাতীয় পণ্যের দাম। পাইকারি বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা। প্রতি কেজি অস্ট্রেলিয়ান ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। মিয়ানমারের ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৯৫ থেকে ১০০ টাকা।
ছোলার দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বলতে পারছেন না তারা। তবে রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা ফায়দা লুটছে বলে অনেকেই জানান। পাইকারি বাজারেও গত মাস থেকেই দফায় দফায় বেড়ে গেছে ছোলাসহ ডালজাতীয় সব পণ্যের দাম। দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারছেন না পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তবে কাওরান বাজারের পাইকারি দোকানের বিক্রেতা শরিফুল ইসলামের মতে, দাম বৃদ্ধির এ প্রবণতা রমজানের পূর্ব পর্যন্তও থাকতে পারে।
সূত্র জানায়, প্রতিমাসে দেশে ছোলার চাহিদা প্রায় ১২ হাজার টন। রমজান মাসে চাহিদা বেশি থাকায় সেটা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টনে। এ বছর চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি ছোলা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গুদামে তুলেছেন আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা। তবুও বেড়ে যাচ্ছে পণ্যটির দাম। এছাড়া গত মাস ধরেই অস্থির রয়েছে ভোগ্যপণ্য চিনি, রসুন, লবণ ও মুরগির দাম।
এদিকে বাজারে প্রতিকেজি মসুর ডাল (দেশি) বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা থেকে ১৪৫ টাকা, নেপালি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকায়। কানাডার বড় দানার মসুর বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। অস্ট্রেলিয়ান ছোট দানার মসুর বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। মটর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৩ টাকা।
গরুর মাংসের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে ব্যবসায়ীরা জানান, একদিকে রমজান সামনে অপরদিকে গরুর মাংসের চাহিদা বাড়ছে। পাশাপাশি ভারতীয় গরু আনতে সীমান্ত এলাকায় আগের চেয়ে বেশি পরিমাণ ঘুষ দিতে হয়। ফলে গরুর মাংসের দাম বাড়ছে। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা থেকে ৬২ টাকায়, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৫৫ টাকা থেকে ৫৮ টাকা। এ ছাড়া প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা থেকে ১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১৬৫ টাকা থেকে ১৭০ টাকায়। তবে বাজারে খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি খাসির মাংস ৫৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বাজারে প্রতি হালি ব্রয়লার মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৪ টাকা থেকে ৩৬ টাকায়, গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৩২ টাকা থেকে ৩৪ টাকায়। পাইকারি বাজারে ব্রয়লার মুরগির ১০০ ডিম ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাঁসের ডিম ১০০টি বিক্রি হচ্ছে ৮২০ টাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪২ থেকে ৪৪ টাকা। গত সপ্তাহে এটি বিক্রি হয়েছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। আমদানি করা পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে। এটিও গত সপ্তাহের বাজার দর থেকে কেজিপ্রতি ২/৩ হারে টাকা বেড়েছে।
এদিকে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে আমদানি করা রসুনের দাম। প্রতিকেজি রসুন কিনতে গুনতে হবে বাজারভেদে ২৪০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। বেড়েছে দেশি রসুনের দামও। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা থেকে ১২৫ টাকা। যা গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা হারে। কিন্তু গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও মসলার বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। কয়েকটি সবজির দাম কমলেও স্থিতিশীল রয়েছে অন্য সব সবজির দাম। যার মধ্যে প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৫০-৬০ টাকা, ফুলকপি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, কলা হালিপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, বেগুন ৩০ থেকে ৫০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, ঝিঙ্গা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কাঁকরোল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, চিচিংগা ৩৫ থেকে ৪০, আলু ১৭ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া লেবুর হালি ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *