চট্টগ্রাম উপকূলের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে এখন স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায় রোয়ানু আজ শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে চট্টগ্রামের কাছ দিয়ে উপকূল ছেড়ে ভারতের ত্রিপুরা-মিজোরামের দিকে চলে গেছে। ফলে চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং কক্সবাজারের সতর্ক সংকেত নামিয়ে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। তবে যাওয়ার আগে রোয়ানুর আঘাতে পাঁচ জেলায় প্রাণ গেছে ১৯ জনের।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, মেঘনা মোহনা, নোয়াখালী,কুতুবদিয়া, সন্দ্বীপ, হাতিয়া, সীতাকুণ্ড উপকূল হয়ে রোয়ানু উত্তর দিকে চলে যায়। তবে রোয়ানুর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আগামীকাল রোববার বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে রোয়ানু ছিল একটি ছোট সাইক্লোন। বাতাসের গতি বেশি থাকলে এর প্রভাবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারত।
আজ পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। পরিমাণ ছিল ২৫২ মিলিমিটার। এ ছাড়া পটুয়াখালীতে ১৯৬, বরিশালে ২৩০, ভোলায় ২০৯, মংলায় ১২৫, নোয়াখালীর মাইজীকোর্ট এলাকায় ১৮১, ফেনীতে ১৪৬, মাদারীপুরে ১২৬, ও ঢাকায় ৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিন অনুযায়ী, রোয়ানু আজ সকাল নয়টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করে। একই সময়ে মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব, পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব ও কক্সবাজার থেকে ১৩৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এর পর এটি বরিশাল, বরগুনা উপকূল হয়ে চট্টগ্রামের দিকে আঘাত হানে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। দমকা অথবা ঝোড়ো বাতাসের আকারে এটি ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এ অঞ্চলের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার-পাঁচ ফুটের বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়। এ সময় চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়। কক্সবাজার ৬ নম্বর, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এ অঞ্চলের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর বিপৎসংকেতের আওতায় ছিল। এ ছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সব ধরনের নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়।