সাতছড়ি থেকে আবার অস্ত্র উদ্ধার, নানা প্রশ্ন

Slider গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ সারাদেশ

2bfc328d682c887a97caf9ae05a38e32-Untitled-27
গ্রাম বাংলা ডেস্ক: হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য সীমান্তবর্তী সংরক্ষিত বনাঞ্চল সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান থেকে আবারও বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গতকাল মঙ্গলবার শ্রীমঙ্গলে র‌্যাব-৯ এর কার‌্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়।

তবে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অস্ত্র উদ্ধারের স্থান, সময় ও জব্দ তালিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা বলছেন, উদ্যানের ভেতর ঘুরে অস্ত্র উদ্ধারের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। উদ্যানে উপস্থিত বিভিন্ন গণমাধ্যমের কয়েকজন সাংবাদিকের সামনে এ কথা বলেন একাধিক কর্মকর্তা।
অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে র‌্যাব-৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মো. মুফতি মাহমুদ খান বলেন, উদ্ধার করা অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে আছে নয়টি এসএমজি, একটি এসএমসি, একটি বেটাগান, একটি অটোরাইফেল, ছয়টি এসএলআর, দুটি এলএমজি, একটি স্নাইপার টেলিস্কোপ ও দুই হাজার ৪০০ গুলি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল গত ২৯ আগস্ট থেকে গতকাল সকাল সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে উদ্যানের দুটি গর্ত থেকে এসব গোলাবারুদ ও অস্ত্র উদ্ধার করে।
এর আগে ৩ ও ৪ জুন র‌্যাব একই উদ্যানের ভেতর সাতটি পরিখা (বাংকার) থেকে চারটি এমজি, পাঁচটি এমজির অতিরিক্ত ব্যারেল, একটি আরএল, ২২২টি উচ্চক্ষমতার কামানবিধ্বংসী রকেট, ২৪৮টি রকেটের চার্জ, প্রায় ১২ হাজার গুলি, ১৯টি মেশিনগানের ড্রাম ম্যাগাজিন ও অন্যান্য ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ উদ্ধারের দাবি করেছিল। আগের অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের ঘটনায় চুনারুঘাট থানায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। মামলা দুটি তদন্তাধীন আছে।
মুফতি মাহমুদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ঘটনাস্থলটি আগের অস্ত্র উদ্ধারের স্থানের চেয়ে আরও ভেতরে। পরিত্যক্ত অবস্থায় এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ প্লাস্টিকের ড্রামে পলিথিনে মোড়ানো ছিল। তবে অস্ত্রগুলো সচল রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এগুলোর উৎস ও সম্ভাব্য ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
র‌্যাবের এই মুখপাত্র আরও বলেন, এ ঘটনায় মামলা হবে। তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এ রকম অভিযান আরও চলবে।
অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে প্রশ্ন: খবর পেয়ে গতকাল সকাল সাড়ে নয়টা থেকে ১০টার মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা উদ্যানে পৌঁছান। সাতছড়ি উদ্যানের আশপাশের এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই অস্ত্র উদ্ধার সম্পর্কে তাঁরা কিছু জানেন না। তবে দু-একজন বলেন, গতকাল ভোর সাড়ে চারটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত র‌্যাবের একটি গাড়ি উদ্যানের কনিমুচড়া এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন তাঁরা। এ সময় বনের ভেতর কোনো র‌্যাব সদস্যকে ঢুকতে বা বের হতে দেখেননি তাঁরা।
বেলা সাড়ে ১১টায় একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে হাজির হন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, অস্ত্র উদ্ধারের খবর পেয়ে তিনি উদ্যান এলাকায় এসেছেন। উদ্যানের ভেতর ঘুরে তিনি অস্ত্র উদ্ধারের কোনো আলামত দেখেননি।
সাতছড়ি উদ্যানের মূল ফটকের সামনে দুপুর ১২টার দাঁড়িয়ে ছিলেন চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাশহুদ কবীর। তিনি বলেন, টেলিভিশনে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছেন। তিনিও কোনো আলামত পাননি। তিনি প্রশ্ন করেন, র‌্যাব ঘটনাস্থলে সংবাদ সম্মেলন না করে শ্রীমঙ্গল ক্যাম্পে কেন করছে?
এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে হাজির হন হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম ও সহকারী পুলিশ সুপার মো. মোজাম্মেল হক। তাঁদের জন্য উদ্যানের মূল ফটকে আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অমল কুমার চৌধুরী ও সাতছড়ি বনের রেঞ্জ কর্মকর্তা মনির আহমেদ খান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওসিকে প্রশ্ন করেন, কি ঘটেছে? ওসি বলেন, তাঁর লোকজন সকাল থেকে বনের ভেতর তন্নতন্ন করে ঘুরেও কোথাও অস্ত্র উদ্ধারের আলামত পাননি। ভোর চারটার দিকে র‌্যাবের একটি গাড়ি চুনারুঘাট থেকে সাতছড়ির দিকে ঢোকার খবর তিনি পেয়েছেন।
এ সময় সাতছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা উপস্থিত কর্মকর্তাদের বলেন, গত কয়েকদিন র‌্যাবের সদস্যরা ছয়বার সাতছড়ি ঘুরে গেছেন। সব সময়ই তাঁর সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন। অথচ অস্ত্র উদ্ধার হলো, তাঁকে তাঁরা অবগত করেননি। কোত্থেকে অস্ত্রগুলো উদ্ধার হয়েছে, সে বিষয়েও তিনি কিছু জানেন না।
দুপুর একটার দিকে একটি সাদা গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১২-৭৫৮৭) সাতছড়ি উদ্যানে যান র‌্যাবের সহকারী উপপরিচালক (ডিএডি) জাফর ও আরও দুজন সদস্য। পরে তাঁরা বনের রেঞ্জ কর্মকর্তাকে নিয়ে মনির আহমেদকে নিয়ে উদ্যানের স্টুডেন্ট ডরমিটরিতে ঢুকে মূল ফটক আটকে দেন। এ সময় সাংবাদিকসহ কাউকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
কী কথা হয়েছে জানতে চাইলে মনির আহমেদ  বলেন, র‌্যাবের কর্মকর্তারা একটা ‘সিজার লিস্ট’ (জব্দ তালিকা) দিয়ে তাতে সই করতে বলেন তাঁকে। কিন্তু তিনি সই করেননি। র‌্যাবের সদস্যরা উদ্যানের ভেতর কিছু জায়গার নামও তাঁর কাছে জানতে চান। এর কিছুক্ষণ পর তাঁরা বনের নৈশপ্রহরী জয়নাল আবেদীন ও বনকর্মী সুনীল ভৌমিককে নিয়ে উদ্যান ছাড়েন।
এর আগে ২৫ জুন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তাঁর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ঢাকা এসেছিলেন। তাঁর ওই সফরের আগে ৩ ও ৪ জুন প্রথম দফায় র‌্যাব এ উদ্যানটি থেকে বিপুল সংখ্যক রকেট লঞ্চারসহ অন্য অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারের দাবি করেছিল। আর বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্রসচিব পর‌্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে গতকালই ঢাকায় এসেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী। এবারও তাঁর সফরের দিন এ উদ্যান থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের কথা জানাল র‌্যাব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান প্রথম আলোকে বলেন, নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব এ অভিযান চালিয়েছে। এর সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর সংশ্লিষ্টতা নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *