এটিএম কার্ড জালিয়াতি ইন্টারপোলের সহায়তা নেবে পুলিশ

Slider অর্থ ও বাণিজ্য
2_213609
এটিএম কার্ড জালিয়াতি করে অর্থ হাতিয়ে নিতে তিন দিনের মিশনে বাংলাদেশে এসেছিলেন তিন চীনা নাগরিক। দেশে অবস্থানরত চীনা সহযোগীরাই বাংলাদেশ সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করেন। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের কেউ কেউ থাকতে পারে বলে তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। গত বুধবার জ্যু জিয়ানহুই রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের প্রাইম ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার সময় ধরা পড়েন। মিশনে তিনজন এলেও অন্য দু’জনের হদিস মেলেনি। ধারণা করা হচ্ছে, তারা বিদেশে পালিয়ে গেছেন। তাদের ধরতে প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

প্রাইম ব্যাংকের ওই বুথ থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে চক্রটি তিন দিনে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নিয়েছে বলে ধারণা করছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, জিয়ানহুইকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসির আরাফাত  বলেন, ভাষাগত জটিলতার কারণে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি সহযোগীদের বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য দেননি। তাদের নামও প্রকাশ করছেন না।

এলিফ্যান্ট রোডের প্রাইম ব্যাংকের বুথের নিরাপত্তারক্ষী নূর ইসলাম  বলেন, ধরা পড়ার আগের দিন গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ওই বুথ থেকে টাকা তুলেছিলেন জিয়ানহুই। তার সঙ্গে আরও তিনজন ছিলেন। তারা সবাই বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন। জিয়ানহুই টাকা তোলার পর চারজন সেখান থেকে চলে যান।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, চীনা চক্রটি মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাংকের গ্রাহকদের তথ্য চুরি করে মাস্টারকার্ড ক্লোন করে বাংলাদেশে আসে। এসব বিষয়ে তাদের তথ্য দিয়েছিল দেশে অবস্থানকারী আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্রের সদস্যরা।

র‌্যাব জানায়, এই চক্রটির সঙ্গে এ দেশে অবস্থানকারী চীনা নাগরিক থাকতে পারেন। তারা উত্তরায় যে ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন তার মালিক সেইন জ্যু। তিনি দাবি করেছেন, একজন চীনা নাগরিকের পরিচয়ের সূত্র ধরে এ তিনজনকে অর্থের বিনিময়ে থাকতে দিয়েছিলেন।

যেভাবে ধরা পড়লেন জ্যু জিয়ানহুই : গত বুধবার ভোরে জিয়ানহুই কয়েকটি কার্ড ব্যবহার করে এলিফ্যান্ট রোডের প্রাইম ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তুলতে যান। এর মধ্যে একটি কার্ড ম্যাচিং না হওয়ায় মেশিনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আটকে যায়। এ সময় জিয়ানহুই আরও মাস্টারকার্ড বের করে অর্থ তুলছিলেন। বুথের বাইরে থেকে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুলাল উদ্দিন। বুথে কয়েকটি কার্ড ব্যবহার করার কারণে বিষয়টি তার সন্দেহ হয়। পরে তিনি বুথে ঢুকে জিয়ানহুইয়ের হাত থেকে মাস্টারকার্ডটি নিয়ে বেরিয়ে যান। তারপর বুথের বাইরে কলাপসিবল গেট আটকে দেন। পরে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের খবর দিলে তারা সেখানে এসে জিয়ানহুইকে আটকের পর র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করেন।

এর আগে জিয়ানহুই তার দুই সহযোগীসহ ফার্মগেট ও পান্থপথ ব্রাঞ্চের বুথ থেকেও একই কায়দায় টাকা তুলে নেন। ওই দিনই তাদের মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। জিয়ানহুই ধরা পড়ার পর তার দুই সহযোগী মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যান বলে তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর চারটি ব্যাংকের এটিএম বুথে জালিয়াতি করে কয়েক লাখ টাকা তুলে নেয় আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্র। ওই ঘটনায় পিওতর সিজোফেন নামের এক বিদেশি ও সিটি ব্যাংকের চার কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে সিজোফেন আদালতে ও গোয়েন্দাদের কাছে এই জালিয়াত চক্রে থাকা দেশি-বিদেশি বেশ কয়েকজনের নাম জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *