বাঁশখালী বিদ্যুৎ​ প্রকল্প বাতিল আন্দোলন স্থগিত : এক নেতাকে গ্রেফতার

Slider জাতীয়
handcuffs_210052
চট্টগ্রাম ব্যুরো ও বাঁশখালী প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের বাঁশখালী ট্র্যাজেডির ঘটনায় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পবিরোধী আবদুর রহমান নামে এক নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে উপজেলা সদর থেকে তাকে গ্রেফতার করে বাঁশখালী থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত আবদুর রহমান উপজেলার গণ্ডামারায় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত বসতবাড়ি গোরস্তান রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সহসভাপতি।

বাঁশখালী থানার ওসি মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘গত ৪ এপ্রিলের ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা ও হামলার মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি আবদুর রহমান। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে বুধবার দুপুর ২টার দিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আপাতত তাকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। তাকে আদালতে পাঠিয়ে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এদিকে আবদুর রহমানকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বসতবাড়ি গোরস্তান রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ও গণ্ডামারার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী। স্থানীয় বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বিরোধী আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতেই আবদুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি মেয়েকে পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে উপজেলা সদরে গিয়েছিলেন।’

গত ৪ এপ্রিল ১৪৪ ধারা ভেঙে সমাবেশ করাকে কেন্দ্র করে বাঁশখালী গণ্ডামারা ইউনিয়নে পুলিশ ও এলাকাবাসীর ত্রিমুখী সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। এ ঘটনায় ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার গ্রামবাসীকে আসামি করে দুটি হত্যা মামলাসহ তিনটি মামলা করা হয়েছিল।

এদিকে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডামারা ইউনিয়ন থেকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সরিয়ে নেওয়ার দাবিতে কাফনের কাপড় পরে রোববারের উপজেলা পরিষদ ঘেরাও কর্মসূচি ১৫ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

শনিবার বিকেল ৫টায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকের পর আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন সমকালকে একথা জানান।

তবে আন্দোলনকারী বিএনপি নেতা লিয়াকত আলীর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

গতকাল (শুক্রবার) গণ্ডামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত শোকসভা থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র অন্যত্র সরিয়ে নিতে ২৪ ঘণ্টার অাল্টিমেটাম দেয় ‘গণ্ডামারা ইউনিয়ন বাঁচাও আন্দোলন এবং স্থানীয় বসতভিটা ও কবরস্থান রক্ষা কমিটি’। ওই সমাবেশ থেকেই শনিবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রকল্প সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা না আসলে রোববার সকালে কাফনের কাপড় পরে উপজেলা পরিষদ ঘেরাও কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়।

এর আগে বিকেল সোয়া ৪টায় লিয়াকত আলী মোবাইল ফোনে সমকালকে বলেন, ‘আমার কাছ থেকে প্রশাসন ও পুলিশ সময় চেয়েছে। আমি তাদের বলেছি, জনগণ চাইলে সরকার সময় পাবে। তবে সরকারকে জনগণের কাছে প্রকাশ্যে সময় চাইতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল্লাহ কবির লিটন আমার সাথে কথা বলেছিলেন। আমি তাকে বলেছি, আমাদের দাবির ব্যাপারে সরকার যদি কোনো সিদ্ধান্ত না দেয় তাহলে আমরা রোববার সকালে যেকোন মূল্যে আমাদের কর্মসূচি পালন করব। তবে সরকার যদি জনগণের কাছে সময় চায় তাহলে জনগণ সময় দিবে।’

প্রসঙ্গত, ১৪৪ ধারা ভেঙে সমাবেশ করাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও এলাকাবাসীর ত্রিমুখী সংঘর্ষে গত সোমবার বাঁশখালী গণ্ডামারা ইউনিয়নে চার জন নিহত হয়। এ ঘটনায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার গ্রামবাসীকে আসামি করে দুটি হত্যা মামলাসহ তিনটি মামলা হয়েছে।

তবে বাঁশখালী ট্র্যাজেডির সাতদিন পরও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পরপরই চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে গঠিত তদন্ত কমিটির কার্যক্রমও চলছে শম্বুক গতিতে।

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে সন্ধ্যা ৬টায় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন বলেন, ‘বিকেল ৫টায় আমাদের সাথে আন্দোলনকারীদের বৈঠক শেষ হয়। এখানে ১৫ দিনের জন্য সব কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পেরও কোনো কাজ হবে না এ সময়। এ ১৫ দিনের মধ্যে পরিবেশবাদী ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের দিয়ে এলাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের কতটা প্রভাব পড়বে তা যাচাই করা হবে। আরও আলোচনা হবে এলাকাবাসীর সাথেও।’

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘কর্মসূচি স্থগিত হওয়ার ব্যাপারে শুনেছি। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা প্রস্তুত আছি। থানা, ফাঁড়ি এবং জেলা পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন আছে বাঁশখালীতে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সবরকম প্রস্তুতি আছে আমাদের।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘নতুন করে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক আছি আমরা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *