ত্রিশংকু অবস্থা। আকাশে মেঘ ঘন হচ্ছে।

Slider জাতীয় বাধ ভাঙ্গা মত সম্পাদকীয়

DSCN1050

শেষ খবর পর্যন্ত আমরা ত্রিশংকু অবন্থায় পড়ে গেছি। গরীবের আবার হাতে ঘড়ি কেন এই ধরণের অবস্থার মোকাবেলা করতে হবে বলে মনে হচ্ছে। দেশের কেন জানি ক্রান্তিকাল যাচ্ছে। আমরা সবাই কেমন জানি বেসামাল হয়ে যাচ্ছি। নিজেরা কখন কি বলছি তাও বুঝতে পারছি না। ক্ষমতায় থাকা আর ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমরা প্রয়োজনে  এমন কিছু করছি যে দেশ গোল্লায় চলে যাক আপত্তি নেই। তবুও ক্ষমতা লাগবে। সম্প্রতি কিছু ঘটনা আমাদের ত্রিশংকু অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।

এক. রাজনীতিবিদরা পরস্পর পরস্পরকে জঙ্গীদের মদদ দাতা বলছেন। যদিও এটা অনেক আগে থেকেই।  আওয়াীলীগ ও বিএনপির পারস্পরিক বক্তব্য জঙ্গীবাদ নিয়ে। তবে সম্প্রতি বেশ কিছু হত্যাকান্ড একটি স্টাইলে সংঘটিত হওয়ার পর পর আই এস তার দায় স্বীকার করায় জঙ্গীবাদ আলোচনায় ব্যাপকতা পায়। ওই হত্যাকান্ডগুলোর দায়ভার আওয়ামীলীগ ও বিএনপি পরস্পরে ঘাড়ে চাপাতে চাচ্ছে। ফলে তদন্ত গোল্লায় গেছে। কারণ তদন্তের আগেই যদি অপরাধ নিয়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয় তবে অপরাধী ফাঁকে চলে যেতে সূযোগ পায়। আর রাজনীতিবিদরা দেশে বিদেশে নিজ দেশের জঙ্গীবাদ নিয়ে মন্তব্য করায় বিদেশীরাও সূযোগটি নিয়ে নেয়। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশী জঙ্গী ধরপাকড় নিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশ আলোচিত হচ্ছে। বিশ্ব মোড়লরা মনে করছেন, বাংলাদেশের জঙ্গীরা নিজ দেশে থেকে অন্য দেশেও চলে গেছে জঙ্গী হামলা করার জন্য। ফলে আন্তর্জাতিক ভাবে আমরা খারাপ অবস্থানে চলে যাচ্ছি।  এতে বিদেশে থাকা আামদের লোকগুলো নতুন ভবে শংকার মধ্যে পড়ছে।

দুই. সম্প্রতি বিচারপতিদের আচরণ সংক্রান্ত একটি আইন মন্ত্রী পরিষদে নীতিগতভাবে পাশ হয়েছে। আইনটি মন্ত্রী পরিষদে পাশ হওয়ার আগে উচ্চ আদালতে গিয়েছিল মতামতের জন্য। উচ্চ আদালত বলেছে, এই সংক্রান্ত একটি রীট মামলার রায় ৫ মে। তাই বিচারাধীন বিষয়ে মতামত দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। উচ্চ আদালতের ওই মন্তব্য পাওয়ার পরও মন্ত্রী পরিষদ আইনটি নীতিগত ভাবে অনুমোদন করেন।  ৫মের পর আইনটি করলে দেশের তেমন কোন ক্ষতি হত বলে মনে হচ্ছে না। তাড়াহুড়ো করে আইনটি পাশ করায় আগামীকাল ৫মে, এ সংক্রান্ত রীট মামলার রায় নিয়ে উদ্বেগ থাকতেই পারে। রায় হওয়ার পর এই আইন নিয়ে নতুন কোন জটিলতার সৃষ্টি হলে তা হবে সরকারের সঙ্গে সুপ্রীমকোর্টের সরাসরি দূরত্বের বহি;প্রকাশ। যা আমাদের জন্য বিপদ সংকেত।

তিন. স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠান ও নির্বাচনকে ঘিরে চলমান সহিংসতা দমনে নির্বাচন কমিশন ও সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তৃতীয় ধাপে ভাল ভোট হওয়ার কথা বললেও নির্বাচনের চিত্র বলে দিচ্ছে ভাল হয়নি।  সামনের ভোট গুলো একই ভাবে সম্পন্ন হবে এতে আর সন্দেহ রইল না। সুতরাং ভোট নিয়ে তৃনমূল পর্যায়ে জনগনের অবিশ্বাস স্থায়ীভাবেই সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সরকারকে সাধারণ মানুষ ভোট বিরোধী বলে ধরে নিতে যাচ্ছেন। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের মধ্যে প্রতিদ্বন্ধিতা ও সহিংসতা হওয়ায় আওয়ামীলীগের একটি অংশ এই নির্বাচনকে ঘিরে দলচ্যুত হয়ে পড়ছে। এতে দলের প্রতি জনসমর্থন হ্রাস পেয়ে দলীয় কোন্দল বাড়বে। ফলে রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষের মোকাবেলা করতে আওয়ামীলীগকে বিব্রত হতে হবে।  এ ছাড়া গতকাল হঠাৎ করে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কে দ্বিতীয় বারের মত মন্ত্রনালয় থেকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়টি রাজনীতিতে নতুন আশংকার তৈরী করছে। একই সঙ্গে নিশা দেশাই আসার আগের দিন্গেএমন রুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে সরিয়ে দেয়া হল যিনি অতীতে বিদেশীদের কটাক্ষ করে কথা বলেছেন। ফলে আমরা আশংকায় আছি যে, সৈয়দ আশরাফকে সরানোর কারণ কোন ভুল না ভয়!

এই তিনটি কারণে আমরা ত্রিশংকু অবস্থায় পড়ে গেছি বলে মনে হচ্ছে। এখন দেখা যাক আমাদের সরকার দেশকে কোন দিকে নিয়ে যায়। তবে আমরা আশাবাদী সরকার দেশকে টিকিয়ে রাখবে এতে সন্দেহ নেই। প্রত্যাশা থাকবে দেশের অবহেলিত সাধারণ মানুষগুলো যেন পরিশ্রম করে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খেয়ে নিরাপদে ঘুমাতে পারেন। হাড় ভাঙা খাটনিতে যেহেতু নিম্ন আয়ের লোকগুলো সরকারের সহযোগিতা চায় না তাই সরকারেরও উচিত তাদের প্রতি কর্তব্যপরায়ন হওয়া।

ড. এ কে এম রিপন আনসারী

এডিটর ইন চীফ

গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *