কিলোমিটারে মাত্র ৩ পয়সা কমছে দূরপাল্লার ভাড়া!

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

 

 

 

2016_04_27_14_18_08_7xU14Z1slUykM5CdwOFQTCQVfCELwU_original

 

 

 

 

 

ঢাকা : জ্বালানি তেলের দাম কমলেও রাজধানীর গণপরিবহনের ভাড়া কমেনি। তবে দূরপল্লার ভাড়া কমানো হচ্ছে নামেমাত্র, প্রতি কিলোমিটারে মাত্র ৩ পয়সা করে। আর সর্বোচ্চ ভাড়া কমবে ১৪ টাকা। আগে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ছিল ১ টাকা ৪৫ পয়সা। বর্তমানে তা ১ টাকা ৪২ পয়সা করার প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে। মূলত জ্বালানি তেলের দাম কমার পর দূরপাল্লার ভাড়া পুনঃনির্ধারণে নির্দেশনা দেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। শিগগিরই এ বিষয়ে বৈঠকে বসবে ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি। এরপর তা চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে সর্বশেষ ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দূরপাল্লার রুটে ভাড়া বাড়ানো হয়। সে সময় কিলোমিটার প্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১ টাকা ৪৫ পয়সা। এবার তেলের দাম কমায় নতুন হিসাবে সেই ভাড়া ১ টাকা ৪২ পয়সা করা হতে পারে বলে সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।

এদিকে গত ২৫ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে কমানো হয়েছে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম। এরপর থেকে দূরপাল্লা রুটে ভাড়া কমানোর নির্দেশনা দেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। তবে ডিজেলের দাম মাত্র ৩ টাকা কমানোয় ভাড়ায় খুব একটা প্রভাব পড়ছে না। দূরপাল্লার বাসে প্রতি কিলোমিটারে তিন পয়সা হারে ভাড়া কমতে পারে। ফলে সর্বোচ্চ ভাড়া কমবে মাত্র ১৪ টাকা।

জ্বালানি তেলের দাম কমলেও নগরবাসীর দুর্ভোগ আগেও যা ছিল বর্তমানেও তাই। যাত্রী কল্যাণ সমিতির দাবি, ধনীদের ব্যক্তিগত পরিবহনে ব্যবহৃত পেট্রোল-অকটেনের মূল্য লিটারে ১০ টাকা কমালেও গণপরিবহনে ব্যবহৃত জ্বালানি ডিজেলের মূল্য মাত্র ৩ টাকা কমিয়ে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তাই রাজধানী ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামের গণপরিবহনে ভাড়া কমানোর কোনো লক্ষণ নেই। যদিও এসব বাসের বেশিরভাগই সিএনজিতে চলে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী  বলেন, ‘জ্বালারি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে গণপরিবহনগুলো যাত্রী সাধারণের কাছ থেকে বর্ধিত ভাড়া আদায় করে থাকে। তবে গত ২৫ এপ্রিল জ্বালানি তেলের মূল্য কমানো হলেও দেশের কোনো গণপরিবহনে ভাড়া ১ পয়সাও কমানো হয়নি।’

এদিকে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহনের ভাড়া কমানোর দাবি করেছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি। সংগঠনের উপদেষ্টা ও প্রবীণ শ্রমিক নেতা মনজুরুল আহসান খান বলেছেন, অতীতে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পরপরই সরকার গণশুনানি না করে মালিকপক্ষের দাবি অনুযায়ী বাসভাড়া, ট্রাকভাড়া বৃদ্ধি করেছে। অথচ এবার পূর্ব ঘোষণা দিয়ে জ্বালানি তেলের মূল্য কমানো হলেও আগের বর্ধিত বাসভাড়াই অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। সরকারের উচিত অবিলম্বে নির্বাহী আদেশে গণপরিবহনের ভাড়া কমানো।

এ ব্যাপারে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক  বলেছেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সঙ্গে সঙ্গে গণপরিবহন ভাড়া কমানোর বিষয়ে ভাড়া নির্ধারণ কমিটিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা ব্যয় বিশ্লেষণ করে একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে দূরপাল্লা বাসের ভাড়া কমানো হচ্ছে।’

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি ( বিআরটিএ) সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ ও ২০০৯ সালে দুই দফায় ডিজেলের দাম ১১ টাকা কমানো হয়। সে সময় পরিবহনের ভাড়া ১১ পয়সা কমানো হয়। সে সময় থেকেই জ্বালানির মূল্য এক টাকা হ্রাস পেলে প্রতি কিলোমিটারে যাত্রী ভাড়া এক পয়সা কমানোর প্রক্রিয়া চালু হয়।

২০১১ ও ২০১৩ সালে দুই দফায় ডিজেলের মূল্য ১৫ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় দূরপাল্লার ভাড়া বৃদ্ধি পায় ২৫ পয়সা। তাই ভাড়া কমানোয় এবারও ব্যয় বিশ্লেষণ বিবেচনা করা না হতে পারে। কারণ বিশ্লেষণে বিবেচিত ২২টি উপাদানের মধ্যে গত তিন বছরে জ্বালানি ছাড়া সব ব্যয়ই বেড়েছে। এতে ব্যয় বিশ্লেষণে কিলোমিটার প্রতি ভাড়া বাড়তে পারে। তাই পূর্বের পদ্ধতিতেই একটা মূল্য হ্রাসে এক পয়সা হারে ভাড়া কমানো হতে পারে।

এ হিসাবে ঢাকা-কক্সবাজার ও ঢাকা-বান্দরবান রুটে সর্বোচ্চ ১৪ টাকা ভাড়া কমবে। ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটে ভাড়া কমবে ১৩ টাকা। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ভাড়া কমবে ৭ টাকা, ঢাকা-সিলেট রুটে ৭ টাকা, ঢাকা-রাজশাহী রুটে ৬ টাকা, ঢাকা-রংপুর রুটে ১২ টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *